১৭ মে ২০১৭, বুধবার, ১০:১৭

রাজশাহীর গণজমায়েতে বক্তারা

ভারত সব নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে

ঐতিহাসিক ‘ফারাক্কা লং মার্চ’-এর ৪১তম বার্ষিকী স্মরণে গতকাল রাজশাহীতে আয়োজিত এক গণজমায়েতে বক্তারা বলেছেন, ভারত উজানের সব নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তারা না প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করছে, আর না আন্তর্জাতিক রীতি-নীতির কোনো তোয়াক্কা করছে। বক্তারা বলেন, ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ঐতিহাসিক ‘ফারাক্কা লং মার্চ’ অনুষ্ঠিত হয়। সে দিন বাংলাদেশের নদীগুলোর যে পরিস্থিতি ছিল আজ চার দশক পরে তা আরো ভয়াবহ অবস্থা দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক মানুষকে সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিকেলে নগরীর বড়কুঠি পদ্মা ঘাট চত্বরে ফারাক্কা লং মার্চ দিবস উদযাপন কমিটি এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি, গবেষক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ, প্রফেসর ড. এম. সায়েদুর রহমান ও প্রফেসর ড. মো: ফজলুল হক। প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার। সভাপতিত্ব করেন ফারাক্কা লং মার্চ দিবস উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক এবং নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো: এনামুল হক। এ উপলক্ষে পদ্মার চরে ব্যতিক্রমী কলসি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
এ দিকে কবি ফরহাদ মজহার প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য শুরুর কয়েক মিনিট পর থেকেই পুলিশ তাকে বাধা দিতে থাকেন। পুলিশের তরফ থেকে তাকে বারবার বক্তব্য শেষ করার জন্য বলা হয়। এ সময় ফরহাদ মজহার বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমার বক্তব্য শেষ করা হবে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করব। কিন্তু সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বাধার মুখে নির্ধারিত সময়ের আগেই বক্তব্য শেষ করেন ফরহাদ মজহার।
এর আগে কবি আব্দুল হাই শিকদার বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে তাকেও বাধা দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন আয়োজকেরা।
আয়োজকেরা জানান, পুলিশের তরফ থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কর্মসূচি চলার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশের বাধার কারণে তার আগেই কর্মসূচি শেষ করতে হয়।
বক্তারা বলেন, ভারত চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে পানি দেবে না, এটা এখন অনেকটা পরিষ্কার। কারণ এতদিনেও তারা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে পানির প্রাপ্যতা বুঝিয়ে দেয়নি। এ জন্য সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের যে তি হয়েছে, সেই তিপূরণ ভারতের কাছ থেকে আদায়ে বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, ফারাক্কার প্রতিক্রিয়া ও প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গঙ্গা-পদ্মা ছাড়াও অন্যান্য ছোট ও মাঝারি ধরনের নদনদী শুকিয়ে গেছে। নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা এখন অনেকটাই মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এর ফলে এক ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় অতি আসন্ন। শুধু গঙ্গা নয়, তিস্তা, মহানন্দা, বারাক নদীতে বাঁধ এবং আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে একতরফা পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ভারত বলে আসছে যে, বাংলাদেশের ক্ষতি হয়- নদীকেন্দ্রিক এমন কোনো প্রকল্প তারা বাস্তবায়ন করবে না। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। ভারত এই আচরণ পরিবর্তন না করলে মওলানা ভাসানীর মতো এ দেশের মানুষ আবারো গর্জে উঠতে পিছপা হবে না।
কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট হোসেন আলী পেয়ারার পরিচালনায় সমাবেশে অন্যদের বক্তব্য দেন হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি নদীগবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, প্রবীণ রাজনীতিক মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম, নাগরিক ভাবনার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোতাসিম বিল্লাহ, ব্যবসায়ী নেতা হারুনুর রশিদ, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির সদস্যসচিব ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ প্রমুখ।
অন্য দিকে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) রাজশাহী জেলার উদ্যোগে চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নে ফাঁকা কলস হাতে মানববন্ধন করা হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/220609