১৭ মে ২০১৭, বুধবার, ১০:১৪

বাড়ছে ভর্তুকিতে বরাদ্দ

সম্ভাব্য বরাদ্দ ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা

আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ভর্তুকি বাড়ছে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ হচ্ছে ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা। মূলত কৃষি এবং খাদ্য খাতে ভর্তুকি বেশি বাড়ছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম থাকায় জ্বালানি তেলে কোনো ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, ভর্তুকি বাবদ আগামী বাজেটে খাদ্য খাতে ৪ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য খাতে বরাদ্দ হচ্ছে ১৫০০ কোটি টাকা। প্রণোদনা বাবদ কৃষি খাতে সম্ভাব্য বরাদ্দ ৯ হাজার কোটি টাকা, রফতানিতে ৪ হাজার কোটি টাকা ও পাটজাত দ্রব্যে ৫০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অনুকূলে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।
জানতে চাইলে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দেয়া না হলেও অন্যান্য খাতে বরাদ্দ থাকছে। রফতানি খাতেও ভর্তুকি থাকবে। তিনি বলেন, ‘নতুন বাজেটে রাজস্ব আয়ের বড় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আশা করি, এটি আদায় করা সম্ভব। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হলে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ বাড়লেও বাজেটে বেশি চাপ সৃষ্টি হবে না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ও পিডিবিকে দেয়া ঋণকেও এক ধরনের ভর্তুকি হিসেবেই দেখা হয়ে থাকে। কারণ এসব ঋণ পারতপক্ষে সরকার ফেরত পায় না এবং পরে পুরো ঋণই অনুদান, ভর্তুকি ইত্যাদিতে রূপান্তরিত হয়। বেসরকারি খাত থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিদ্যুৎ পেতে পিডিবিকে ঋণ দেয় সরকার।
জানা গেছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় বিপিসির জন্য কয়েক বছর কোনো ভর্তুকি দিতে হয়নি সরকারকে। আগামী বাজেটেও ভর্তুকি বাবদ কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না। ফলে নতুন করে এ খাতে এক টাকাও ভর্তুকি হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়নি।
চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে করা হয়েছে ২৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তবে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হবে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে বেশি।
এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ভর্তুকি যাদের উদ্দেশ্যে দেয়া হচ্ছে তারা পাচ্ছে কিনা তা দেখার বিষয়। কারণ অনেক সময় ভর্তুকির সুবিধা প্রকৃত সুবিধাভোগীরা পায় না। এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, বাজেটে ভর্তুকির তথ্য বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। এটি একটি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া।
জানা গেছে, ভর্তুকির সবচেয়ে বড় অংশ ব্যয় হয় কৃষি খাতে। চলতি বাজেটে কৃষি খাতে ৯ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেয়া হয়। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়। কৃষি খাতে ৩ হাজার কোটি টাকা কমানো হলেও আগামী বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কমেছে। ফলে চলতি বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকির পুরো অর্থ ব্যয় করতে হয়নি। এ জন্য সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। তিনি বলেন, আগামীবারের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে।
অবশ্য দাতা সংস্থাগুলো ভর্তুকি কমিয়ে আনতে সব সময় সরকারকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তাদের মতে, ভর্তুকির টাকা ধনীরাও পাচ্ছে। তাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে ভর্তুকি দেয়া উচিত। যাতে সুবিধাবঞ্চিতরা এর উপকার পায়। কৃষি খাতের ভর্তুকি কমানোর ব্যাপারে বিগত কয়েক বছর ধরে চাপ দিচ্ছে দাতা সংস্থাগুলো।
এর আগে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ খাতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৭ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৫ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এই তিন অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দ বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিবছর ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনছে সরকার। আগামী বছরে বরাদ্দ বেশি রাখা হলেও শেষ পর্যন্ত সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে আনা হবে- এমনটি আভাস দিয়েছেন অর্থ বিভাগের বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা।
এ বছর হাওরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য খাদ্য খাতে ভর্তুকি বাড়ানো হয় ৯০১ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বাজেটে এ খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে করা হয় ৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে এ খাতে অতিরিক্ত আরও ২৭৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর বাজেটে বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি ৮টি খাতে ব্যয় করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য ও অন্যান্য খাত। প্রণোদনা দেয়া হয় কৃষি ও পণ্য রফতানি এবং পাটজাত দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে। ভর্তুকির আরেকটি অংশ নগদ ঋণ হিসেবে যায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনে (বিপিসি), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও অন্যান্য খাতে। সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়া হয় কৃষি খাতে। এরপর বিদ্যুৎ খাত।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/05/17/125138/