১৭ মে ২০১৭, বুধবার, ১০:১১

লাইনে দাঁড়িয়েও জুটছে না ওএমএসের চাল

হাকালুকির ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের দুর্ভোগ

হাকালুকি হাওরপারের বোরো ফসল হারানো হাজার হাজার কৃষকের দুর্ভোগ যেন কাটছে না। ৮ মে থেকে ১৫ টাকা কেজি দরের ওএমএসের চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। তালিমপুর ইউনিয়নে চালু করা বিক্রয় কেন্দ্রটি দুর্গত এলাকা থেকে অনেক দূরে হওয়ায় এর সুফল ভোগ করেননি ক্ষতিগ্রস্তরা। অবশেষে মঙ্গলবার থেকে হাওরপারের কানুনগো বাজারে চালু হয় খোলা বাজারে চাল বিক্রি। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও শেষ পর্যন্ত চাল না পেয়ে খালি হাতেই ফিরছেন দুর্গতরা। মঙ্গলবার দুপুরে হাকালুকি হাওরপারের দুটি বিক্রয় কেন্দ্রে হতাশার এমন চিত্র দেখা গেছে।


জানা গেছে, হাকালুকিপারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ও সুজানগরের প্রায় ২০ হাজার মানুষ বন্যায় বোরো ফসল হারিয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ৯ মে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি হাকালুাকির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে আগামী বোরো ফসল ঘরে উঠার আগ পর্যন্ত হাকালুকি হাওরপারের বড়লেখা, কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ৬ হাজার ভিজিএফ কার্ডের ঘোষণা দেন। চারজন ওএমএসের ডিলার নিয়োগ দেয় উপজেলা প্রশাসন। গণহারে ক্ষতিগ্রস্ত তালিমপুর ইউনিয়নের ডিলার নিয়োগ দেয়া হয় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে ৩-৪ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে। ফলে সরকারের আসল উদ্দেশ্য দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মহৎ উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এসব দুর্ভোগ নিয়ে ৯ মে যুগান্তরে একটি প্রতিবেদন ছাপা হলে উপজেলা প্রশাসন দূরবর্তী স্থানের ডিলার বাতিল করে তালিমপুর ইউপির কানুনগোবাজারে খোলা বাজারে চাল বিক্রির ডিলার নিয়োগের উদ্যোগ নেন। অবশেষে ৮ দিন পর সফিক উদ্দিনকে প্রতিদিন জনপ্রতি ৫ কেজি ২০০ দুর্গত মানুষের কাছে বিক্রির জন্য ১ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন সুজানগর ইউনিয়নের আজিমগঞ্জ বাজারের ওএমএসের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, দুর্গত মানুষের দীর্ঘ লাইন। ডিলার মোক্তার আলী জানান, প্রতিদিন ২০০ মানুষের কাছে চাল বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু দোকান খোলার সঙ্গেই ৫০০-৬০০ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ভিড় জমান। এ অবস্থায় বরাদ্দ শেষ হওয়ায় বিক্রি বন্ধ রাখতে গিয়ে চাল না পেয়ে লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছেন। সরবরাহ না বাড়ালে চাল বিক্রি নিয়ে নানা ঝামেলা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

ওএমএসের চাল কিনতে আসা সুজানগর ইউপির সালদিগা গ্রামের ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাস, মাখন দাস, রিপন দাস, ভোলারকান্দি গ্রামের রুশনা বেগম, পারভিন বেগম জানান, ৫ কেজি চাল কিনতে কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অবশেষে ডিলার জানায় চাল শেষ। এভাবে তারা ২ দিন ধরে চাল না পেয়ে ফিরে গেছেন। নূর ইসলাম জানান, ৫ কেজি চালের জন্য সারা দিন চলে যায়। তালিমপুর ইউনিয়নের ওএমএসের দোকানে কয়েকশ’ নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন থাকতে দেখা গেছে। ডিলার সফিক উদ্দিন জানান, এরই মধ্যে ১৫০ জনকে চাল দেয়া শেষ করেছেন। লাইনে অন্তত ২০০ জন দাঁড়ানো আছেন। আরও ৫০ জনকে দেয়ার পর বাকি লোকজনকে চাল নেই বলামাত্রই বিশৃঙ্খলা শুরু হবে। সুজানগর ইউপি চেয়ারম্যান নছিব আলী ও তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ টন চাল বিক্রির ব্যবস্থা নিলে লাইনে দাঁড়ানো দুর্গত লোকজন অন্তত চাল না নিয়ে ফিরবেন না। বড়লেখা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আবদুল আওয়াল জানান, ওএমএসের বরাদ্দ দিগুণ করার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।

http://www.jugantor.com/news/2017/05/17/125142/