১৭ মে ২০১৭, বুধবার, ৯:৫৮

সরকারি প্রতিষ্ঠানই শীর্ষ খেলাপি

হোল্ডিং ট্যাক্সসহ অন্যান্য খাতের বিল বাবদ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বকেয়া জমেছে ২২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৫৫ কোটি টাকা পাওনা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। শুধু চসিক নয়, সরকারি একাধিক সংস্থায় খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি সংস্থার সবচেয়ে বেশি বকেয়া আটকে আছে অন্য কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। খেলাপি তালিকায়ও শীর্ষস্থানে রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই। বন্দরনগরীর অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানই অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিল-বকেয়া নিয়মমাফিক পরিশোধ করছে না বলে তথ্য মিলেছে অনুসন্ধানে। এর প্রভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল লোকসানের মুখেই পড়ছে না, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তাদের কার্যক্রমও। ফলে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা। তবু এ নিয়ে নীতিনির্ধারণী মহলের কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকায় অনেকের অভিযোগ, বকেয়া আটকে রাখার এসব ঘটনা মূলত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মিলেমিশে ফাঁকিবাজির আয়োজন!

বিপিসির বকেয়া ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে: বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১০ প্রতিষ্ঠানের কাছে তাদের পাওনা ২ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে এক হাজার ৫৪১ কোটি ১৬ লাখ টাকা, শিপিং করপোরেশনের কাছে ৩৯৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এবং প্রতিরক্ষা সার্ভিসেসের কাছে পাওনা ১২৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ২৪ কোটি ৪৬ লাখ, রেলওয়ের কাছে ৮৭ কোটি ৯৩ লাখ, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের ৪৩ কোটি ৬৪ লাখ, চট্টগ্রাম বন্দরের ১৫ কোটি ৪২ লাখ, বিআইডবি্লউটিসির ৪০ লাখ এবং পেট্রোবাংলার ২ লাখ টাকা বকেয়া জমেছে। বিপিসির পরিচালক (পরিচালন ও উন্নয়ন) সৈয়দ মোহাম্মদ মোজ্জাম্মেল হক সমকালকে বলেন, 'আর্থিক সংকটের কথা বলে বিমান বাংলাদেশ ২০১১ সাল থেকে কোনো বিল পরিশোধ করছে না। তাদের লোকসান সামাল দিতে গিয়ে এখন আমরাই লোকসানে। ২০১৩ সালে বিপিসির লোকসানের কথা বলে একাধিক দফায় এবং বিগত মাস পর্যন্ত লাগাতার তাগাদা দিয়েও বকেয়া আদায় করা যাচ্ছে না।'

৩৩০ কোটি টাকার দুর্গতি পোহাচ্ছে প্রগতি :রাষ্ট্রীয় খাতের গাড়ি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাবে ৩৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের (বিআরটিসি) কাছেই পাওনা ২২৭ কোটি টাকা (ডিসেম্বর ২০১৬

পর্যন্ত)। অন্যদের মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে

৪৪ লাখ ৮৯ হাজার, অগ্রণী ব্যাংকের কাছে এক কোটি ১১ লাখ ৭৪ হাজার, সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের কাছে ৪৩ কোটি ৭৮ লাখ, লাইভস্টক অফিসের কাছে (প্রাণিসম্পদ) ৬০ হাজার টাকা বকেয়া। এ ছাড়া ৫৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা পাওনা আছে আরও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে। প্রগতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল খায়ের সরদার বলেন, 'দীর্ঘদিন থেকে বকেয়া পড়ে থাকার কারণে কারখানা সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। টাকা হাতে না আসায় মূলধন সংকটে প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে নতুন প্রকল্পের। টাকার অভাবে বাস্তবায়ন আটকে আছে।'

পিডিবির বকেয়া ১৭২ কোটি টাকা :চট্টগ্রামের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবির পাওনা (সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত) ১৭২ কোটি টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কাছে ২৫ কোটি ৫৭ লাখ, রেলওয়ের কাছে ৪ কোটি ৯ লাখ, সরকারি পোলট্রি ফার্মের কাছে ২ কোটি ৪৬ লাখ, সেনাবাহিনীর কাছে ১ কোটি ১৩ লাখ, স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে সাড়ে ৩ কোটি, পুলিশের কাছে ৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা চসিকের কাছে ৭৪ কোটি এক লাখ, বিজেএমসির কাছে ১১ কোটি ৪২ লাখ, ওয়াসার কাছে ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। পিডিবির বিতরণ বিভাগ (চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের) প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন বলেন, 'সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বকেয়া আদায়ে নোটিশ দেওয়া হয়, তবুও তারা পরিশোধে এগিয়ে আসে না। কোনো কোনো সময় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তবুও কোনো ফল আসে না।'

ওয়াসার ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা :সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পাওনা ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ৭৭ লাখ ৭৯ হাজার। এর মধ্যে রয়েছে_ বিএসআরএম, কেএসআরএমসহ ২৫টি প্রতিষ্ঠান। অবশিষ্ট বকেয়া ব্যক্তি ও ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লা সমকালকে বলেন, বকেয়া আদায়ে বিভিন্ন সময় তাগাদাপত্র দেওয়া হয়, কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

চসিক পাবে ১৫৫ কোটি টাকা :চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ২২৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ১৫৫ কোটি টাকা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৬৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে ৮৩ কোটি টাকা, স্টিল মিলের কাছে (অধুনালুপ্ত) ৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে ৮৯ লাখ ৫ হাজার টাকা।

http://bangla.samakal.net/2017/05/17/293044#sthash.mHeyvzvj.dpuf