১৬ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ১২:০৪

‘আমরা লজ্জিত’

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় আবারও ক্ষোভ প্রকাশ করে আপিল বিভাগ বলছেন, আমরা লজ্জিত। তবে আদালত সরকারকে গেজেট প্রকাশে আরো দুই সপ্তাহের সময় দিয়েছেন। 

গতকাল সোমবার এ বিষয়ে শুনানিতে প্রধান বিচারপতির সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানিতে এ মন্তব্য করা হয়।
আদালতে সরকার পক্ষে শুনানি করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
শুনানির শুরুতে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম চার সপ্তাহ সময়ের আবেদন করেন। আবেদন দেখে আদালত বলেন, দুই সপ্তাহের আবেদন এবার চার সপ্তাহ হয়ে গেল। প্রথমে এক সপ্তাহ, পরে দুই সপ্তাহ, এবার চার সপ্তাহ। ভবিষ্যতে আট সপ্তাহ চাইবেন। সময় আবেদনের বিষয়টি সবাই জানি।
আদালত আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি অবসরে যাবেন জানুয়ারিতে, বিচারপতি নাজমুল আরা সুলতানা যাবেন তার আগে। পরে যাবেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। তখন আপনারা গেজেট প্রকাশ করে আনবেন। যেসব বিচারপতিরা তখন থাকবেন তারা দেখবেন। উই ফিল ভেরি অ্যাশেমড (আমাদের খুব লজ্জা লাগছে)।
সর্বশেষ গত ৮ মে গেজেট প্রকাশে এক সপ্তাহের সময় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। ওইদিনের শুনানিতে বিধিমালা গেজেট আকারে আড়াই বছরেও প্রকাশ না হওয়ায় সর্বোচ্চ আদালত বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে বঙ্গভবনের দূরত্ব কতদূর? সরকারের এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আরো দুই সপ্তাহের সময় চাইলে আপিল বিভাগ বলেন, দুই সপ্তাহ, দুই মাস ও দুই বছর সময় আবেদন আপনার কাছে একই। আসলে কি চান আপনারা?
আদালত এটর্নি জেনারেলের কাছে প্রশ্ন করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর কোথায়? জবাবে এটর্নি জেনারেল জাপানের টোকিও শহরের কথা বললে প্রধান বিচারপতি বলেন, সবাই মনে করে টোকিও বা নিউইয়র্ক সবচেয়ে বড় শহর। আচ্ছা বলেন তো-নিউইয়র্ক বা টোকিও এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত যেতে কত সময় লাগতে পারে? বড় জোর ৫/৬ ঘণ্টা। কিন্তু আমার ধারণা ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর! মনে হয়, সুপ্রিম কোর্ট থেকে গণভবন বা বঙ্গভবনের দূরত্ব কয়েক লাখ কিলোমিটার।
গত ৪ এপ্রিল আপিল বিভাগ ৮ মে পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু এ দিনও সরকার পক্ষ নতুনভাবে সময় নিল। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত গেজেট প্রণয়নে দ্বাদশ বারের মতো সময় নিল সরকার।
গত ৮ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ১২ ডিসেম্বর হাজির করতে এটর্নি জেনারেলকে মৌখিক নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর মধ্যে ১২ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত দেন রাষ্ট্রপতি।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিলো। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।
গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিলো ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি। এর পরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। একইসঙ্গে ৬ নবেম্বরের মধ্যে তা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে অবহিত করতে আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়। গত বছরের ৬ নবেম্বর সে অনুসারে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু সরকার পক্ষে এটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানাতে পারেননি।
পরে আপিল বিভাগ বিধিমালা চূড়ান্তের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা লিখিতভাবে জানাতে এটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়ে ৭ নবেম্বর আদেশের দিন ধার্য করেন। ওই দিন এটর্নি জেনারেল আট সপ্তাহের সময়ের আবেদন জমা দেন। যাতে বিধিমালাটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন তিনি। সর্বোচ্চ আদালত ২৪ নবেম্বর পর্যন্ত সময় দেন।
গত বছরের ২৪ নবেম্বর এটর্নি জেনারেল গেজেট প্রকাশে আরও এক সপ্তাহ সময় চাইলে আপিল বিভাগ তা মঞ্জুর করেন। পরে ১ ডিসেম্বর আইনমন্ত্রী ফিলিপাইনে রয়েছেন বলে ফের এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়। সময় মঞ্জুরের পরও ৮ ডিসেম্বরের পর থেকে আরও কয়েক দফা সময় পায় সরকার।

http://www.dailysangram.com/post/283884