১৬ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ১২:০৩

আল্লামা সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল

জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমীর, খ্যাতিমান মুফাসসিরে কুরআন ও দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর খালাস চেয়ে করা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) এবং সাজা বাড়ানোর সরকারের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। এর ফলে আপিলে দেয়া আমৃত্যু (যাবজ্জীবন) কারাদণ্ড বহাল রয়েছে। আর রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে আলোচিত এই মামলার সমাপ্তি হলো।
গতকাল সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ দুটি রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন। বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন-বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
সকাল সোয়া ৯টা ১২ মিনিট-এর দিকে এটর্নি জেনারেলের যুক্তি পেশের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু হয়। বেলা ১১টা ৫ মিনিটে শুনানি শেষে রায় দেন আপিল বিভাগ।
শুনানিতে সরকার পক্ষে বক্তব্য দেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পরে আল্লামা সাঈদীর পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন।
গতকাল সোমবার শুনানিতে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে আদালত প্রশ্ন করেন যাবজ্জীবন রায় দেয়ার পর তা পরিবর্তন করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে এরকম অন্তত একটি মামলার নজীর দেখান। একবার যাবজ্জীবন হলে ফাঁসি হয় দেখেছেন? এর জবাবে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এই মামলায় হওয়া উচিত।
বিশাবালি হত্যা বিষয়ে একজন বিচারপতি বলেন, বিশাবালীকে নারকেল গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। সাঈদীর নির্দেশে একজন রাজাকার তাকে গুলী করল। জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে এ ঘটনা দেখেছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশনের ৫ এবং ৯নং সাক্ষী। সাঈদী বিশাবালিকে গুলীর নির্দেশ দিয়েছে তাও তারা শুনেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো পাকিস্তান আর্মি দেখলে মানুষ যেখানে পালিয়ে যেত সেখানে জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে গুলী করতে দেখা সম্ভব কি না। আর গুলী করতে দেখা এবং গুলীর নির্দেশ দিয়েছেন সাঈদী এ কথা শুনতে হলে ঘটনার খুবই কাছে থাকতে হয়। এটা সম্ভব কিনা।
আপিল বিভাগ এটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার নাম গিনেজ বুকে ওঠা উচিত। এত সময় ধরে সরকারকে কেউ সার্ভ করেন নাই। শুনানিতে এটর্নি জেনারেল কয়েকবার ফাঁসির আবেদন জানালে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি কেবল সরকারের নন, রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা। একজন বিচারপতি বলেন, এটর্নি জেনারেল সবার পক্ষে কথা বলবেন। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনার এমন সাবমিশন চাই না। অপরাধীর বিরুদ্ধে শুধু নয় নির্দোষের পক্ষেও আপনি কথা বলবেন। অপরাধী শাস্তি পাবে, আদালত বিবেচনা করবে অপরাধের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা কতটুকু।
এটর্নি জেনারেল আইনের ধারা উল্লেখ করে বলেন, আমি সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। প্রধান বিচারপতি বলেন আমরা পেনাল্টি দিয়েছিল। উনারা খালাস চেয়েছেন। এখন আপনার যতটা সম্ভব চুপ থাকাই ভাল।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বলতে বাধ্য হচ্ছি মি. এটর্নি জেনারেল প্রসিকিউটর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির মিটিংয়ে যোগ দেয়। যাদের (নির্মূল কমিটি) পলিটিক্যাল এজে-া রয়েছে। সভায় গিয়ে তারা মিসক-াক্ট (অসদাচরণ) করেছেন। কিছু নন-প্রাকটিসিং লইয়ার প্রসিকিউটর হয়েছে। একজন পাবলিক প্রসিকিউটরের যে অবস্থান তা তারা বুঝতে পারছে না। তাদের অবস্থানের (পজিশন) কথা তারা জানে না।
এ সময়ে আপিল বিভাগের রায়ে প্রসিকিউশনের ব্যর্থতার বিষয়ে বলা বক্তব্য সংশোধন চাই আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রসিকিউশন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আপনি (এটর্নি জেনারেল) একটি অভিযোগের দলিল খুঁজতে বরিশাল পর্যন্ত গিয়েছিলেন। কিন্তু পাননি। এরপর আদালত প্রসিকিউশনের ব্যর্থতার বিষয়ে সংশোধিত ব্যাখ্যা থাকার বিষয় জানিয়ে রিভিউ দুটি খারিজের আদেশ দেন।
গত রোববার রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হলে আল্লামা সাঈদীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন যুক্তি পেশ করেন। লিখিতভাবে আদালতে দাখিল করা যুক্তি উপস্থাপন করেন তিনি। এতে বলা হয়, বিশাবালীর ভাই সুখরঞ্জন বালী বলেছেন তার ভাই হত্যার সাথে আল্লামা সাঈদী জড়িত নন। তিনি ২০১২ সালের ৫ নবেম্বর ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহনী তাকে ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে অপহরণ করে। এটি আদালতের বিবেচনায় নেয়া উচিত ছিল। ২০১৩ সালের ১৫ মে দৈনিক নিউএজ পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয় যে, সুখরঞ্জন বালী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দমদম কারাগারে বন্দী রয়েছেন এবং বালী জানিয়েছেন তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপহরণ করে ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছে। এরপর সুখরঞ্জন বালীর পরিবার কোলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেন বালীকে দেশে না পাঠানোর জন্য। কারণ বাংলাদেশে তার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। পরে এ মামলা ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায় এবং সুপ্রিম কোর্ট বালীকে দেশে না পাঠানোর আদেশ দেন। এ বিষয়ক যাবতীয় পেপারকাটিং আসামী পক্ষ আপিল বিভাগে জমা দিয়েছে। কিন্তু আপিল বিভাগের রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে এ বিষয়ক কোন ডকুমেন্ট আমলে নেননি।
গৌরাঙ্গ সাহার তিন বোনকে ধর্ষণ বিষয়ে প্রসিকিউশনের ১, ২, ৩, ৪ এবং ৫ নং সাক্ষী একটি শব্দও বলেননি। গৌরাঙ্গ সাহার এলাকার লোক হওয়া সত্ত্বেও তাদের কর্তৃক এ বিষয়ে কোন অভিযোগ না করায় প্রমাণ করে এ অভিযোগ সত্য নয়। বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাŸ মিঞা তার রায়ে লিখেছেন ‘যদি সত্যিই গৌরাঙ্গ সাহার তিন বোনকে তিনদিন ক্যাম্পে আটকে রেখে পাকিস্তান আর্মি কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে প্রসিকিউশনের ১, ২, ৪, ৬, ৮, ৯, ১০, ১১ এবং ১২ নং সাক্ষীকে তা না বলার কথা নয় গৌরাঙ্গ সাহার।’
গৌরাঙ্গ সাহা বলেছেন, ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ২৭ বছর। কিন্তু তার ভোটার পরিচায়পত্র এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ লেখা ১৯৬৩ সাল। সে হিসেবে ১৯৭১ সালে তার বয়স হয় ৮ বছর। এ অবস্থায় তার ছোট তিন বোনকে ধর্ষণের ঘটনা অসত্য। বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা তার রায়ে লিখেছেন ‘বয়সের ব্যবধান ২/১ বা তিন বছরের হতে পারে। কিন্তু ১৯ বছরের ব্যবধান বিশ্বাসযোগ্য নয়। তার বোনরা ১৯৭১ সালে বড় ছিল এটি প্রমাণ করতে এটা বলেছেন তিনি।’
লিখিত যুক্তিতে বলা হয়, সেফহাউজ রেজিস্ট্রার ডকুমেন্ট থেকে দেখা যায় মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার কারণে গৌরাঙ্গ সাহাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
লিখিত যুক্তিতে বলা হয়, আল্লামা সাঈদী ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত যশোরে ছিলেন পিরোজপুর ছিলেন না। তার পক্ষে পাঁচজন সাক্ষীর সাক্ষ্যে তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া প্রসিকিউশনের ২৪ নং সাক্ষীর সাক্ষ্যেও তা প্রমাণিত। কাজেই মে জুন এবং জুলাই মাসে পিরোজপুরে সংঘটিত অপরাধের সাথে তার জড়িত থাকার অভিযোগ সত্য নয়। বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা এসব সাক্ষ্য আমলে নিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে এটি বিবেচনায় না নিয়ে মিসকারিজ অব জাস্টিস হয়েছে।
সংখ্যগরিষ্ঠ রায়ে প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং তদন্ত কর্মকর্তার কাছে গণেশ সাহার সাক্ষ্য বিবেচনায় নেয়ার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের ত্রুটি। গণেশ চন্দ্র পরে প্রসিকিউশন পক্ষ ত্যাগ করে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং ট্রাইব্যুনালে তিনি বলেছেন তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে কোন জবানবন্দী দেননি।
এমনিভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে পিরোজপুর জেলার ইতিহাস এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র বই দুটিও বিবেচনায় নেয়ার ক্ষেত্রে ভুল করেছেন। বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা এ বই দুটিকে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। পিরোজপুর জেলার ইতিহাস বইয়ে রাজাকার এবং শান্তি কমিটির তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।
এ ছাড়া মেজর জিয়াউদ্দিন রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরবনের সেই উন্মাতাল দিনগুলি’ বইটিও কোন বিবেচনায়ই নেননি সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিগণ। এ বইয়ে পিরোজপুর এবং তার আশপাশ এলাকায় ১৯৭১ সালের নৃশংতার বিবরণ থাকলেও আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। মেজর জিয়াউদ্দিন ছিলেন সুন্দরবন সাবসেক্টর ক্যাম্পের কমা-ার। বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা তার রায়ে বলেছেন, সাঈদী রাজাকার এবং শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন এবং এ হিসেবে তিনি যেসব অপরাধ করেছেন তা প্রমাণের জন্য মেজর জিয়া উদ্দিন ছিলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একজন সাক্ষী । কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক তার সাক্ষ্য না নেয়ায় মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ বিষয়ে বিরূপ অবস্থার তৈরি করেছে।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কাজেই আল্লামা সাঈদী ১৯৭১ সালে মধ্য জুলাই পর্যন্ত যে পিরোজপুরে ছিলেন না তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। তিনি পিরোজপুর ছিলেন না এ মর্মে রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিগণ কোন শক্তিশালী ভিত্তি তুলে ধরতে পারেন নি।
২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি আল্লামা সাঈদী খালাস চেয়ে রিভিউ (পুর্নবিবেচনা) আবেদন করেছিলেন। রিভিউ আবেদনটি ৯০ পৃষ্ঠার, ১৬ টি গ্রাউন্ডে খালাসের আরজি রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সকালে আল্লামা সাঈদীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সব অভিযোগ থেকে আল্লামা সাঈদীকে খালাস দেন। আর বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে রায় দেন। তবে তখনকার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর মতামতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় আসে। তারও আগে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সংক্ষিপ্ত রায়ে আল্লামা সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। আপিল বিভাগের রায়ে তিনটি পৃথক অভিযোগে প্রত্যেকটিতে আমৃত্যু জেল, অপর দুটি অভিযোগের একটিতে ১২ বছর এবং আরেকটিতে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। আলোচিত ইব্রাহিম কুট্টি হত্যাকাণ্ডে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেয়। আপিল বিভাগ এটিতে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে ১২ বছর কারাদণ্ড দেন। বিশাবালী হত্যাকাণ্ডে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেয়। এ অভিযোগে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। অপর যে দুটি অভিযোগে আপিল বিভাগ আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন সে দুটি হলো গৌরাঙ্গ সাহার তিন বোনকে ধর্ষণ এবং এক থেকে দেড়শজনকে ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ।
আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে সকল অভিযোগ থেকে খালাস দিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলেন, প্রসিকিউশন তাদের যুক্তিতে বলেছেন অভিযুক্ত (আল্লামা সাঈদী) রাজাকার, তিনি ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন সুনির্দিষ্ট করে ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৭ নম্বর অভিযোগে। কিন্তু ডিফেন্স পক্ষের আপিল এবং সাক্ষীরা ক্যাটাগরীভাবে দেখিয়েছে তিনি (আল্লামা সাঈদী) অপরাধ সংঘটনের স্থানে ওই সময়ে উপস্থিত ছিলেন না। তখন তিনি রওশন আলীর (ডিডব্লিউ-৬) দোহা খোলায় ছিলেন। তিনি রাজাকার ছিলেন না এবং অপরাধ সংঘটিত করেছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় রাজাকার এবং শান্তি কমিটির সদস্যরা। প্রসিকিউশনের মামলা এবং ডিফেন্সের আপিল থেকে দেখা যায় অভিযুক্ত রাজাকার বা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন প্রসিকিউশন তা চূড়ান্ত প্রমাণের (ক্রুশিয়াল ফ্যাক্ট) মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে দেখাতে ব্যর্থ। উপরন্তু ডিফেন্সপক্ষে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং প্রামাণ্যচিত্র পরিষ্কার সংশয় সৃষ্টি করে প্রসিকিউশনের করা তিনি ১৯৭১ সালে রাজাকার বা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন এ বিষয়ে। ফলে অভিযুক্তকে বেনিফিট অব ডাউট দেয়া হলো। আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত যে প্রসিকিউশন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৭ নম্বর অভযোগ সন্দোহীততভাবে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে এবং তিনি (আল্লামা সাঈদী) সকল অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার অধিকারী। একইসঙ্গে অভিযুক্তের অপরাধ খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং তাকে খালাস দেয়া হলো।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আল্লামা সাঈদীকে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মৃত্যুদণ্ড দেয়। আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন মোট ২০টি অভিযোগ আনে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে আল্লামা সাঈদীকে মোট আটটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আলোচিত ইব্রাহিম কুট্টি এবং বিশাবালী হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। অপর ছয়টি অভিযোগে কোন সাজা উল্লেখ করেনি ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে একই বছরের ২৮ মার্চ আপিল করেন আল্লামা সাঈদী। ২০১০ সালের ২৯ জুলাই গ্রেফতার করা হয় আল্লামা সাঈদীকে।

 

http://www.dailysangram.com/post/283886-