৩ মার্চ ২০২৪, রবিবার, ২:৫৯

নিমতলী থেকে বেইলি রোড আগুন ট্র্যাজেডির শেষ কোথায়

রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকা- সংঘটিত হওয়া ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ বহুতল ভবনটি পরিচিত ছিল ‘কাচ্চি ভাই’ ভবন নামে। কারণ ভবনটিতে ওই রেস্টুরেন্টটি ছাড়াও ছিল অনেকগুলো উন্নত খাবারের দোকান। যেখানে সাধারণত অভিজাত শ্রেণীর লোকজনেরই আড্ডা জমতো নিয়মিত। খাবারের দোকানগুলোর কারণেই বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জমজমাট থাকতো বেইলি রোড। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে এখানে এমন ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটবে কেউ কি কখনো ভেবেছে? প্রাণোচ্ছল ভবনটি ছয়তলা পর্যন্ত পুড়ে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখন কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। অগ্নিকাণ্ডে ভবনের পুরো চিত্র পাল্টে গেছে। ভবনটি এখন পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, সামনে পড়ে আছে ভাঙা কাঁচ, আগুনে পোড়া কয়লা। ভবনটি ঘিরে এখন শুধু হাহাকার আর নীরবতা। নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘিরে রেখেছে ভবনটি।

পুরান ঢাকার নিমতলী, চুড়ি হাট্টা, ও বনানীর এফআর টাওয়ারের পর এবার অগ্নি ট্র্যাজেডির তালিকায় যুক্ত হলো-‘বেইলি রোড ট্র্যাজেডি’। গত ১৪ বছরে ঘটে যাওয়া এ চারটি ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৬৮ জনের। অন্যদিকে মগবাজারে ভবনে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ১২ জনের। এছাড়া বঙ্গবাজার, নিউমার্কেটসহ গত কয়েক বছরে ঢাকায় বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে।

বেইলি রোডের ভয়াবহ আগুনে এক নিমিষেই জীবনের সব স্বপ্ন মুছে গেছে অনেকের। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় এমন একটি অনুমোদনহীন ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও যাদের দেখভাল করার কথা, তাদের ভূমিকা কী ছিল। দুর্ঘটনার পর সরকারের একাধিক সংস্থা এই ভবনটির নানা ত্রুটির কথা বলে আসলেও তারা এতদিন কেন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠছে। রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদফতরসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো এতদিন কোথায় ছিল? এক নামে অনুমোদন নিয়ে অন্য কার্যক্রম চালালে ভবন মালিক এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা নেয়া হলোনা কেন? বিশ্লেষকদের মতে, একটি ঘটনার রেষ কেটে যাওয়ার পর অন্য কোথাও আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কর্মকর্তারা আবারও হয়তো এমন গৎবাঁধা বক্তব্য সামনে নিয়ে আসবেন, তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিকারের আশ্বাস দিবেন! আর প্রতিবার আগুন লাগার পর নড়েচড়ে বসে সরকার।

আশ্বাস দেওয়া হয়, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। কিন্তু দৃশ্যপটে খুব একটা পরিবর্তন দেখা যায় না।
বেইলি রোডের ভয়াবহ অগ্নিকা-ে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্য হয়েছে। এই মিছিলে আর কেউ যুক্ত না হোক এই প্রত্যাশা থাকলেও চিকিৎসকরা বলেছেন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে থাকা যে ১২ জন আছেন তাদের মধ্যে ১১ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন। প্রত্যেকেরই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তাদেরকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইন্সটিউটে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এদিকে বেইলি রোডের ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করে। পুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বেইলি রোডের আগুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে লাগা আগুনের ঘটনায় ভবনের ম্যানেজার হামিমুল হক বিপুলকে আটক করেছে রমনা থানা পুলিশ। গতকাল শনিবার তাকে আটক করা হয়। আটকের পর হামিমুল হককে ভবনের বিভিন্ন ত্রুটির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া জানান, তাকে ভবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর আগে শুক্রবার রাতে ভবনটির নিচতলার চুমুক রেস্টুরেন্টের (ছোট রেস্টুরেন্ট) দুজন মালিক ও কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারকে আটক করে ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ। আটকরা হলেন চুমুকের মালিক আনোয়ারুল হক ও শাকিল আহমেদ রিমন এবং কাচ্চি ভাইয়ের ম্যানেজার জিসান।

চারজন দুই দিনের রিমান্ডে: গ্রেপ্তার চারজনকে দুই দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। আসামীরা হলেন- ভবনটির চুমুক রেস্টুরেন্টের দুই মালিক আনোয়ারুল হক, শফিকুর রহমান রিমন, কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জয়নুদ্দিন জিসান, ভবনের ম্যানেজার মুন্সি হামিমুল আলম বিপুল। শনিবার সন্ধ্যায় তাদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক আবু আনসারি সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে আদালত আসামিদের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরীর আদালতে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে তাদের সন্ধ্যা ৬টায় আদালতের হাজতখানায় আনা হয়।

৪৪ লাশ হস্তান্তর, মর্গে পড়ে আছে দুই: বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আগুন লাগে। এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ১২ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা কেউ ‘শঙ্কামুক্ত’ নন। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে। পুলিশ বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও ৮ শিশু। তাদের মধ্যে ৪৩ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। আগুনের ঘটনায় নিহত ৪৪ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর দুজনের লাশ এখনো পড়ে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। ডিএনএ টেস্ট করে লাশ দুটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। গতকাল শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের অফিসার ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মো. বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, দুজনের লাশ এখনো মর্গে আছে। ডিএনএ টেস্টের মধ্যমে পরিচয় শনাক্ত হলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে ৪০ জনের লাশ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে থাকা সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টির লাশ আঙুলের ছাপের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অভিশ্রুতির লাশ গতকাল পর্যন্ত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তার পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায় ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা হয়নি। এছাড়া শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে কাস্টমস কর্মকর্তা শাহ জালাল উদ্দিন (৩৫), তার স্ত্রী মেহেরুন নেসা হেলালী (২৪) এবং তাদের মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিলার (৪) লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তাদের কোনো শাস্তি হয় না? : এদিকে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেছেন, যারা রেগুলেটরি বোর্ডে আছে তাদের কোনো শাস্তি হয় না। তারা শুধু নোটিশ দেন। নোটিশ বড় ব্যবস্থা না, আপনারা কেন সেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলেন না, সেটা হচ্ছে প্রশ্ন? গতকাল শনিবার বেইলি রোডে পুড়ে যাওয়া ভবন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। হেলাল উদ্দিন বলেন, যেসব রেগুলেটরি বোর্ড এ ভবনে ব্যবসার অনুমতি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিক। এই ধরনের ঘটনা আবার ঘটুক এটা আমরা চাই না। যার ত্রুটি থাকবে তার বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে। সেটা যদি কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে হয় তবে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে, আর যদি কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে হয় তবে সেটা সংস্থার বিরুদ্ধে। আপনারা সবকিছু বাণিজ্যিকিকরণ করবেন আর সেটার মাধ্যমে মানুষের জীবন চলে যাবে, এটা হতে পারে না। যে রেগুলেটরি বোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। তিনি বলেন, এখানে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে, কাস্টমারদেরও ক্ষতি হয়েছে। তাদের জীবন চলে গেছে। আমাদের শত কোটি টাকা এখানে নষ্ট হয়েছে। যারা রেগুলেটরি বোর্ডে আছে তাদের কোনো শাস্তি হয় না। দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, আমরা বিডা এবং এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে আলোচনা করে মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন স্টেক হোল্ডাররা বিভিন্ন মার্কেট পরিদর্শন করলাম। সেখানে আমরা দেখলাম কোথাও বিদ্যুতে সমস্যা, কোথাও ফায়ার সমস্যা। সমস্যা যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, এখন ফায়ার সেফটিতে যারা কাজ করেন তারা একসময় ফায়ার বিগ্রেডে কাজ করতেন। তারা ফার্মগুলো খুলেছে। এখন একেক মার্কেটে গিয়ে বলছেন ৩/৪/৫ কোটি টাকা লাগবে ফায়ার সেফটির জন্য।

চারটি ভয়াবহ অগ্নিকা-ে নিহত ২৬৮: পুরান ঢাকার নিমতলী, চুড়িহাট্টা ও বনানীর এফআর টাওয়ারের পর এবার রাজধানীর অগ্নি-ট্র্যাজেডির খাতায় যুক্ত হলো বেইলি রোড। গত ১৪ বছরে ঘটে যাওয়া এ চারটি ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৬৮ জনের। অন্যদিকে মগবাজারে ভবনে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ১২ জনের। এছাড়া বঙ্গবাজার, নিউমার্কেটসহ গত কয়েক বছরে ঢাকায় বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে।

নিমতলী ট্র্যাজেডি: ২০১০ সালের ৩ জুন রাত ৯টার দিকে পুরান ঢাকার চানখাঁরপুলের নিমতলীতে একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের বিস্ফোরণ ঘটে। আগুন ধরে যায় পাশের কেমিক্যালের গোডাউনে। মুহূর্তেই দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যালে ঠাসা ঐ এলাকার বেশ কয়েকটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। যখন ভয়ংকর সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, ততক্ষণে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান ১২৪ জন। আহত হন প্রায় অর্ধশতাধিক। পুড়ে যায় ২৩টি বসতবাড়ি, দোকান ও কারখানা। নিমতলী ট্র্যাজেডি আলোড়ন ফেলেছিল দেশজুড়ে। আগুনে পুড়ে এত সংখ্যক বীভৎস করুণ মৃত্যু যে স্মরণাতীতকালে দেখেনি বাংলাদেশ। নিমতলী দুর্ঘটনার পর আবাসিক এলাকা থেকে সব ধরনের রাসায়নিক পদার্থের দোকান, গুদাম ও কারখানা অপসারণ করার কথা ছিল। কিন্তু সেই ঘটনার ১৩ বছর পার হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এরপরও পুরান ঢাকায় আরো আগুন লেগেছে, হতাহত হয়েছে। কিন্তু পুরান ঢাকার বাড়িতে বাড়িতে এখনো আছে কেমিক্যাল গুদাম।
চুড়িহাট্টা ট্রাজেডি: ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় হঠাৎ বিকট শব্দে সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ওয়াহেদ ম্যানশনে থাকা কেমিক্যালের কারণে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যা ছড়িয়ে পড়ে সড়কে যানজটে আটকে থাকা পিকআপ, প্রাইভেট কার, রিকশা, ঠ্যালাগাড়ি ও মোটরসাইকেলে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই যানজটে আটকে থাকা অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। আগুন লাগার ১৪ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। তার আগেই ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় ৬৭ জনের। পরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১। এতে আহত হন কয়েক শ মানুষ। চুড়িহাট্টা ট্রাজেডির পাঁচ বছর পার হয়েছে। ভয়াবহ এ অগ্নিকা- থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর এখনো দিন কাটে সেই রাতের বিভীষিকা মাথায় নিয়ে। কিন্তু দৃশ্যপটে খুব একটা বদল হয়নি। এখনো অনেক বাসার নিচে কেমিক্যালের গুদামও রয়েছে, দেদার চলছে ব্যবসা।

এফআর টাওয়ার ট্রাজেডি: রাজধানীর বনানীর বহুতল বাণ্যিজিক ভবন এফআর টাওয়ারে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ দুপুর ১টায় লাগা আগুনে ২৭ জনের মৃত্যু এবং শতাধিক আহত হয়। ২২ তলা ঐ ভবনের অষ্টম তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। অগ্নিকা-ের পর আগুন যখন দ্রুত অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে, তখন ভবনের ভেতর আটকাপড়া অনেকে ভবনের কাচ ভেঙে ও রশি দিয়ে নামার চেষ্টা করেন। এ সময় কয়েক জন নিচে পড়ে মারা যান। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি বিমান বাহিনী, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছিলেন সেদিন। হেলিকপটার দিয়ে গুলশান-বনানী লেক থেকে পানি সংগ্রহ করে ভবনে ছিটানো হয়। অগ্নিকা-ের জন্য ভবনের অনুমোদন, নকশার ত্রুটি ও অগ্নিনিরাপত্তাকে দায়ী করা হয়। ঐ ঘটনায় নড়েচড়ে বসে সরকার। নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবনের তালিকা তৈরি করে রাজউক। কথা ছিল, সেই তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। ভেঙে ফেলা হবে সব নকশাবহির্ভূত অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু অগ্নিকা-ের কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার থেমে যায় সব উদ্যোগ। এখন আর কেউ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে কথা বলেন না। শেষ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর তালিকা। অভিযানও চালানো হয়নি নকশাবহির্ভূত কোনো ভবনের বিরুদ্ধে।

মগবাজারের বিস্ফোরণ: ২০২১ সালের ২৭ জুন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকার ‘রাখি নীড়’ নামে একটি ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ হয়। আড়ংয়ের শোরুম ও রাশমনো হাসপাতালের উলটো দিকের মূল সড়ক লাগোয়া সেই ভবন। ঐ ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন দুই শতাধিক ব্যক্তি। বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই বিকট ছিল যে, প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, এমন বিকট আওয়াজ তারা আগে শোনেননি। ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ বলেছেন, শর্মা হাউজ নামে ফুডশপে গ্যাস জমে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই ট্রান্সফরমারের কথা বলেছেন। কিন্তু ঐ ঘটনার প্রায় তিন বছর হয়ে এলেও মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে বলে শোনা যায়নি। বিস্ফোরণের ঘটনায় করা মামলার তদন্তভার পাওয়া পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট কর্মকর্তারা জানিয়েছিল, ছয়টি সরকারি সংস্থা তদন্ত করেছে। এর মধ্যে চারটি সংস্থা সিটিটিসিকে সহযোগিতা করছে না। ঐ সময় বিস্ফোরক পরিদপ্তরের তদন্তে উঠে এসেছিল ঘটনার পর পরই ভবনটির ভেতরে ত্রুটিপূর্ণ লাইন থেকে নির্গত গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে।

https://www.dailysangram.info/post/550286