পরিবেশ সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করে কাটা হচ্ছে সিলেটের মাদুরটিলা। সরকারি দুগ্ধ খামার কর্তৃপক্ষ টিলা কেটে স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছে। ছবিটি গতকাল সকালে তোলা l আনিস মাহমুদ
১৬ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:৫৪

এবার টিলা কাটছে সরকারি প্রতিষ্ঠান

‘লন্ডনি বাড়ি’ বানাতে কাটা হচ্ছিল একটি টিলা। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের মহল্লার ওই টিলা কাটার দায়ে টিলামালিক যুক্তরাজ্যপ্রবাসী হুমায়ূন কবির চৌধুরীকে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ১১ মের এ ঘটনার চার দিনের মাথায় এবার সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেখা গেছে টিলা কাটতে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ওই টিলা পড়েছে সিলেট সরকারি দুগ্ধ খামার এলাকায়।
টিলার নাম মাদুরটিলা। এর অবস্থান সিলেট নগরের টিলাগড় এলাকায়। গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, টিলার চারদিক প্রায় ক্ষতবিক্ষত। টিলার পাদদেশ থেকে শুরু করে টিলার গা ঘেঁষে বড় বড় গর্ত খোঁড়া। একেক সারিতে ছয়টি করে তিন দিক থেকে পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া অংশে গিয়ে দেখা গেছে, খোঁড়া গর্ত যত্রতত্র রয়েছে। আবার যেদিকে গর্ত খোঁড়া হয়েছে, সেদিকের চূড়া থেকে মাটি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
সিলেটে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণ সচেতনতার সংগঠন ‘সেইভ দ্য হেরিটেজ’-এর সমন্বয়ক আবদুল হাই আল হাদী জানান, সিলেটে প্রাচীন গৌড় রাজ্যের দুর্গ ছিল টিলাগড় এলাকার টিলায়। তাই ওই সব টিলায় বন-ঝোপ-গাছের সংখ্যা তুলনামূলক কম দেখা যায়। সিলেটের এমসি কলেজ ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ আশপাশ এলাকার অর্ধশতাধিক টিলার একটি হচ্ছে মাদুরটিলা।
দুগ্ধ খামার সিলেটের প্রাচীন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। ১৯৩০ সালে টিলাগড়ে ৭০০ বিঘা জমিজুড়ে এ খামার তৈরি করা হয়। পরে ওই জমির ৩০০ বিঘার ওপর গড়ে ওঠে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও দুগ্ধ খামারের সহযোগী আরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৩১ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে টিলাভূমি। দুগ্ধ খামার কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ৪৫০টি গাভি প্রতিপালনের সুবিধা রয়েছে সেখানে। বর্তমানে মাত্র ১৬০টি গাভি আছে। এর মধ্যে দুগ্ধজাত গাভি ২০টি, গর্ভবতী ৪৫টি। দুগ্ধজাত গাভি প্রতিপালন অসুবিধার কারণে গ্রাহক চাহিদা মেটাতে পারছে না। এ জন্য গাভির প্রজননে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (১৯৯৫, সংশোধিত ২০১০, ধারা-৬ এর খ) অনুযায়ী সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন কাজে পাহাড়-টিলা কর্তন বা অন্য কোনো উপায়ে ভূমিরূপ পরিবর্তন করা যাবে না। জানতে চাইলে সরকারি দুগ্ধ খামারের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান এই আইন সম্পর্কে অবহিত আছেন বলে জানান। তাহলে টিলা কাটা হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ঠিক টিলা কাটা নয়, জরুরি ভিত্তিতে করা হচ্ছে। পাকা স্থাপনা হলেও অস্থায়ী বলা যায়। এ জন্য আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে বা টিলা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছি না। এরপরও আমরা দেখব।’
সহকারী পরিচালকের এসব কথা দায়সারা বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী। গতকাল তিনি মাদুরটিলা ঘুরে এসে প্রথম আলোকে বলেন, ওই টিলা একসময় দুগ্ধ খামারের গোচারণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। গাভির প্রজনন ঘর করার মতো আরও অনেক জায়গা খালি আছে সেখানে। সেই সব জায়গা বাদ দিয়ে টিলা ঘিরে যেভাবে গর্ত করা হয়েছে, তাতে বৃষ্টি এলেই টিলাধসের আশঙ্কা রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক মো. ছালাহ উদ্দীন চৌধুরী জানান, গতকাল দুপুরে তিনি এ বিষয়ে অবহিত হন। তাৎক্ষণিক তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের একদল পরিদর্শক পাঠিয়ে টিলা কাটা বন্ধ রেখেছেন।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1181746/