৩ মার্চ ২০২৪, রবিবার, ২:৩১

ঘনঘন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত

বাড়তি দামের ভার সাধারণ মানুষ সইবে কেমনে?

চলতি মার্চের শুরুতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা কার্যকর হয়েছে গত ফেব্রুয়ারি থেকে। এতেই চিন্তিত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাকাল সাধারণ মানুষ। তার ওপর গতকালের যুগান্তরের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছর আরও তিন থেকে চারবার বাড়ানো হবে বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে আগামী তিন বছর এভাবেই বাড়ানো হবে এই অত্যাবশ্যকীয় সেবার দাম। এ তথ্য জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। প্রশ্ন হলো, সাধারণ মানুষ কি এই বাড়তি মূল্যের ভার সহ্য করতে পারবে? শিল্প খাতেরই বা কী হবে? কারণ জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদির দাম বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়ে মূল্যস্ফীতিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের নতুন দামে ভয়ংকর রূপ নেবে মূল্যস্ফীতি। বেড়ে যাবে সবকিছুর উৎপাদন ব্যয়। বাজার পরিস্থিতি আরও নাগালের বাইরে চলে যাবে। এর ফলে বাড়বে মানুষের দুর্ভোগ। অথচ কষ্ট লাঘবই সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

বস্তুত সরকারি সেবা খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয় জনস্বার্থে। সরকার যা কিছুই করুক না কেন, সবার আগে দেখতে হবে জনস্বার্থকে। কারণ জনগণের জন্যই সরকার, জনগণের জন্যই রাষ্ট্র। তাছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হলে সবার আগে দৃষ্টি দেওয়া দরকার এ খাতের অপচয় ও দুর্নীতি বন্ধ করার দিকে। উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এসব সংযোগ চিহ্নিত করে তা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া জরুরি। দেশে বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এখন আর রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রেখে এগুলোর পেছনে মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হোক। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারেও এসব কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। আমরা মনে করি, জ্বালানি খাতের অপচয় ও অদক্ষতা রোধ করা হলে ঘনঘন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর দরকার হবে না। এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে কষ্টে আছে সাধারণ মানুষ। তার ওপর ঘনঘন বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের কষ্ট আরও বাড়ানো হলে তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেলে দেশের রফতানি খাত প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে। এসব বিষয় অনুধাবন করে সরকারকে নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ।

https://www.jugantor.com/todays-paper/editorial/780421