১৫ মে ২০১৭, সোমবার, ৩:৪৪

তিন প্রতিষ্ঠানের বিদেশে বিনিয়োগ আটকে গেল

২,১৪৮ কোটি টাকার ৬ প্রকল্প অনুমোদন

আটকে গেল বিদেশে বাংলাদেশের তিন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ। কোম্পানিগুলো হলোÑ নিটল-নিলয়, আকিজ জুট মিলস ও হা-মীম গ্রুপ। গতকাল সচিবালয়ে ‘অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এ বিনিয়োগের অনুমোদন দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু মন্ত্রিসভা কমিটিতে তা অনুমোদন দেয়া হয়নি।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, বিদেশে এ তিন কোম্পানির বিনিয়োগে অনুমোদন দেয়া হয়নি। কোম্পানিগুলোর কাছে আবারো বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক তা আবারো পর্যালোচনা করবে। এরপর কেস টু কেস ভিত্তিতে সরকার তা দেখবে। তবে বিদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিদেশে বিনিয়োগে একটা পলিসি করা দরকার বলে উল্লেখ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ওই তিন কোম্পানির বিনিয়োগের অর্থ এবং লভ্যাংশ দেশে ফেরত আসার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবনা না থাকায় তা আটকে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কতা সুপারিশও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো: মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বিস্তারিত প্রস্তাবনা না থাকায় তিন কোম্পানির বিদেশে বিনিয়োগ অনুমোদন দেয়া হয়নি। বিদেশে বিনিয়োগের েেত্র রিজার্ভ পরিস্থিতি, লভ্যাংশ কিভাবে ফেরত আসবে, সেখানে বাংলাদেশীদের কী পরিমাণ কর্মসংস্থান হবেÑ এ ব্যাপারে কোম্পানিগুলো বিস্তারিত তথ্যসংবলিত প্রস্তাবনা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা পর্যালোচনা করবে। এরপর কেস টু কেস ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়া হবে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (সাবেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ) সূত্রে জানা গেছে, তিন ব্যবসায়িক গ্রুপের প্রস্তাব অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় দু’টি কোম্পানি অধিগ্রহণে আকিজ জুট মিলস লিমিটেড ২ কোটি মার্কিন ডলার, হাইতিতে একটি তৈরী পোশাক কারখানা স্থাপনে হা-মীম গ্রুপ ১ কোটি ৪৪ হাজার ডলার ও আফ্রিকার গাম্বিয়ায় একটি ব্যাংক (গাম্বিয়া কমার্স অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল ব্যাংক লিমিটেড) স্থাপনে নিটল-নিলয় গ্রুপ ৭০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে চায়। বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি চেয়ে গ্রুপ ও প্রতিষ্ঠান তিনটি ইতোমধ্যে পৃথকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে। প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ঢালাওভাবে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ নেই। তবে ‘কেস টু কেস’ ভিত্তিতে বিষয়টি বিবেচনার সুযোগ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বর্তমানে বিদেশে ইকুইটি বিনিয়োগের আবেদন দিন দিন বাড়ছে। তবে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশে কোম্পানি অধিগ্রহণে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ পাঠানোর নজির নেই। এ কারণে প্রস্তাব তিনটি অনুমোদনে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে বলে সূত্র জানায়।
এই বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নেয়ার সুপারিশ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যথেষ্ট উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে, গত বছরের নভেম্বরের যা ছিল দুই লাখ ৭৭ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। এ প্রেক্ষিতে জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) কাক্সিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ন্যূনতম স্থানীয় বিনিয়োগ জিডিপির ৩২ ভাগ হওয়া প্রয়োজন। এ পর্যায়ে স্থানীয় বিনিয়োগ উৎসায়িত না করে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান করা যথাযথ হবে কি না তা সতর্ক বিবেচনার দাবি রাখে।’
দুই হাজার ১৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ প্রকল্প অনুমোদন
‘হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ’ প্রকল্পসহ প্রায় দুই হাজার ১৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
গতকাল রোববার বিকেলে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় কমিটির বৈঠকে এসব ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের একটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটির জন্য একটি পরামর্শক সংস্থা নিয়োগ দেয়াসংক্রান্ত প্রস্তাব ক্রয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছিল। প্রস্তাবটি কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পে জাপানের নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেড, ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্লোবাল লিমিটেড, সিঙ্গাপুরভিত্তিক সিপিজি কনসালট্যান্টস প্রাইভেট লিমিটেড এবং বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট লিমিটেড যৌথভাবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। এ জন্য মোট ব্যয় হবে ৫৭০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য বিভিন্ন প্রকার জলযান নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দু’টি পেট্রল ভেসেল (আইভিপি) ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ জন্য মোট ব্যয় হবে ১৫৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। খুলনার ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড জলযান দু’টি নির্মাণ করবে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পটুয়াখালী জেলার বরগুনায় বাস্তবায়নাধীন ‘ইমার্জেন্সি সাইকোন রিকভারি অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রজেক্ট (ইসিআরআরপি)’ প্রকল্পটির পাউবো অংশ সাব-কম্পোন্যান্ট সি’র আওতায় এডিশনাল রিহ্যাবিলাইটাশন ওয়ার্কশের অধীনে চারটি পোল্ডার নির্মাণে অতিরিক্ত কাজের জন্য মোট ৩৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার অতিরিক্ত ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। ম্যাক্স-ওয়ানজাও নামের চীন ও বাংলাদেশের যৌথ প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
বৈঠকে বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় ‘প্রজেক্ট ডিজাইন অ্যাডভান্স (পিএডি) ফর সিটি রিজিওন ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’-এর আওতায় প্রিপারেশন, ডিজাইন ও সুপারভিশন (পিডিএস) কনসালটেন্সি সার্ভিসেসের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বাংলাদেশ ও সুইডেনের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটিতে কাজ করবে। এ জন্য ব্যয় হবে ৪৬ কোটি ৪ লাখ টাকা।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় একটি প্যাকেজে ডুয়েলগেজ রেললাইন, এমব্যাংকমেন্ট, ব্রিজ, রেলস্টেশন, প্লাটফরম ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক নির্মাণকাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না লিমিটেড। এ জন্য ব্যয় হবে ২৬৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
এ ছাড়াও বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘কালুখালী-ভাটিপাড়া সেকশন পুনর্বাসন এবং কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্যাকেজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামের ভুল সংশোধনের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/220046