১৫ মে ২০১৭, সোমবার, ৩:৩৫

এসএসসির ২৬৬৩৪০ শিক্ষার্থী ফল পরিবর্তন চায়

সদ্য প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থী ফল পরিবর্তনে আবেদন করছে। এই শিক্ষার্থীরা সাড়ে চার লাখ পত্রের নম্বর পরিবর্তন চেয়ে এ আবেদন করেছে। এ আবেদনের সংখ্যা এবারও আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, জিপিএ পদ্ধতি চালুর ১৭ বছর পর এবার প্রথম নম্বর দেখার সুযোগ পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। এতেই অনেকেই হয়েছেন হতাশ। কারণ অনেক শিক্ষার্থী ৭৮ বা ৭৯ পেয়েছে। এরকম প্রত্যেকটি গ্রেডের আগে এক বা দুই নম্বর কম পেয়েছে তারাই সবচেয়ে বেশি আবেদন করেছে। এর মধ্যে ৩২ নম্বর পেয়েও ফেল করেছে এরকম হাজার হাজার শিক্ষার্থী আছে। এবার আবেদনের সংখ্যা বেশি হওয়ার জন্য এটাই সবচেয়ে বেশি কারণ বলে জানিয়েছেন তারা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তিনটি ক্যাটাগরি এমসিকিউ, প্র্যাকটিক্যাল ও লিখিত নম্বরপত্র আলাদা আলাদাভাবে পরীক্ষক মূল্যায়ণ করার কারণে এমনটা হয়েছে। আবেদনের শীর্ষে থাকা বিষয়ের মধ্যে আছে গণিত, ইংরেজি, বাংলা, পদার্থ ও রসায়ন।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মাহবুবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, গত বছর এইচএসসির পর এবার এসএসসির নম্বর দেখার সুযোগ পেল শিক্ষার্থীরা। এটাই আবেদন বাড়ার অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, আন্তঃবোর্ডের সিদ্ধান্ত ছিল এসএসসির নম্বর না দেয়ার। তারপরও আমি অনেকটা জোর করে নম্বর দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন, হাইকোর্ট এইচএসসি নম্বর দেয়ার ব্যাপারে একটা নির্দেশনা দিয়েছিলেন তাও যে জানতে চায় শুধু তার। আমরা চিন্তা করলাম এখানে গোপন করার কিছু নেই। তাই পুরোপুরি নম্বর দেখার ব্যবস্থা করেছি।
এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার মানবজমিনকে বলেন, এবার রেকর্ড সংখ্যক আবেদন পড়েছে। এর অন্যতম কারণ প্রথমবারের মতো নম্বর দেখা। তিনি বলেন, অনেক শিক্ষার্থী যেকোনো বিষয়ে ৭৮ বা ৭৯ পেয়েছে। সেই শিক্ষার্থী তার অভিভাবকসহ আবেদনের নম্বর নিয়ে সশরীরে শিক্ষা বোর্ডে হাজির হচ্ছে। তারা অনুরোধ করছেন, তার সন্তান এক নম্বরের জন্য গোন্ডেল বা জিপিএ-৫ পায়নি। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। এটা পুরোই অনলাইনে হয়। পরীক্ষার ফল যে প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়, পুনঃনিরীক্ষণ একই প্রক্রিয়ায় হয়। বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর এইচএসসিতে রেকর্ড সংখ্যক আবেদন পড়েছিল। কারণ ওই বছর প্রথম নম্বর দেখার সুযোগ পেয়েছিল। এবার এসএসসি নম্বর দেখার সুযোগ পাওয়ার পর আবেদনের হিড়িক পড়ে।
বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, পুনঃনিরীক্ষণে সাধারণত মোট ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো- উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কী না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হয়। তার মানে কোনো শিক্ষার্থীর খাতা পুনরায় মূল্যায়ণ হয় না। এরপরও এত শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তনের আবেদন রীতিমতো তুঘলকি কাণ্ড আখ্যায়িত করে শিক্ষাবিদরা বলছেন, বোর্ডের প্রশ্ন পদ্ধতি ও খাতা দেখার নানা ত্রুটির কারণে দিন দিন ফল চ্যালেঞ্জ করার সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে এবার নতুন পদ্ধতিতে খাতা মূল্যায়ণ এবং নম্বর দেখার সুযোগ পাওয়ায় এ সংখ্যা বেড়েছে। তারা বলেন, গত বছর বরিশাল বোর্ডে যা হয়েছে তা রীতিমত তুঘলকি কাণ্ড। একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর বোর্ড কর্তৃপক্ষের ঘুম ভেঙ্গেছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, এবার এসএসসি পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছেন ৫৫ হাজার ৩৩০ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ৫৮০ জন। এ বছর বিষয়ভিত্তিক আবেদন জমা পড়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ২২টি। গত বছর ছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৯১৩টি। এবার বিষয়ভিত্তিক ফল চ্যালেঞ্জ করেছে সব চেয়ে গণিতে। এর সংখ্যা ১৯ হাজার। এরপর যথাক্রমে বাংলায় ১৩ হাজার ২৭৩টি, ইংরেজিতে ১৩ হাজার ১২৪টি, রসায়নে আট হাজার ৩৪২টি, পদার্থে দুই হাজার ৩২২টি। এরপর আছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে। এই বোর্ডে মোট ৩০ হাজার ২৪০ জন শিক্ষার্থী ৬৪ হাজার ৮৮৯টি বিষয়ের খাতার ফল পরিবর্তনের আবেদন করেছেন। এই বোর্ডে ইংরেজিতে ৪ হাজার ৪৫৯টি, গণিতে ৭ হাজার ৬৭ এবং রসায়নে ৪ হাজার ৮৭৮টি আবেদন পড়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ২১ হাজার ৯৩৯ জন শিক্ষার্থী ৫৭ হাজার ৮১৪টি পত্রের জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে গণিতে আবেদন করেছে ৫ হাজার ৪৫, বাংলা ও ইংরেজি উত্তরপত্রের জন্য আবেদন করেছে যথাক্রমে ৩ হাজার ৭৭৯ ও ৪ হাজার ৪৮৫টি। সিলেট বোর্ডে ১০ হাজার ৬৮ জন শিক্ষার্থী ২২ হাজার ৩২৬টি পত্রের জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে গণিতে সবচেয়ে বেশি। এই পত্রের জন্য ২ হাজার ৫২৩, বাংলা ১ হাজার ৯৭৫ এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি ১ হাজার ৮৩২টি আবেদন পড়েছে। যশোর বোর্ডে ১৯ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। বিষয়ভিত্তিক আবেদন পড়েছে ৪৩ হাজার ৭৭০জন। রাজশাহী বোর্ডে ১৭ হাজার ৭১৪ জন শিক্ষার্থী ৩৭ হাজার ৮০৭টি পত্রের ফল পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে গণিতে ৭ হাজার ৬৯২টি, রসায়নে ৪ হাজার ৬৭৭ এবং পদার্থ বিজ্ঞানে ৩ হাজার ৭৪২টি আবেদন পড়েছে। দিনাজপুরে ৩৭ হাজার ৩৯৭জন শিক্ষার্থী ৪৬ হাজার ৬৫৬টি পত্রের ফল পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছে। বরিশাল বোর্ডে ২০ হাজার ২৩৯জন শিক্ষার্থী ৩৪ হাজার ৪০৩টি এবং কারিগরি বোর্ডে ১১ হাজার ৮৮৩ জন শিক্ষার্থী ২৫ হাজার ৭৬টি বিষয়ের ফল পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছে। আর মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ২৩ হাজার ৫০৭ জন শিক্ষার্থী ৪৩ হাজার ৮২৫টি বিষয়ের ফল পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছে। চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পাসের রেকর্ড হয়। পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা দুটিই কমেছে। এ বছর দেশের ২৮ হাজার ৩৫৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৭ লাখ ৯১ হাজার ৯৯৩ হাজার জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছে মোট ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৯৬২ জন। এদের মধ্যে পাস করেছে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন। ১০টি বোর্ডে গড় পাসের হার ৮০ দশমিক তিন পাঁচ শতাংশ; আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=65473&cat=2/