১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ১০:০৯

সরকার নদী লিজ দেয়ায় কঠিন সংগ্রামে হাওরের জেলেরা

সরকার নদী লিজ দেয়ায় কঠিন সংগ্রামে হাওরের জেলেরা

হাওরের প্রবেশদ্বার বলে ক্ষেত কিশোরগঞ্জের নিকলী, বাজিতপুর কুলিয়ারচর, ভৈরব ও প্রত্যন্ত অঞ্চল অষ্টগ্রাম ইটনা ও মিঠামইনসহ আশপাশের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার জেলেরা এক সময়ে সারা বছর নদী ও খাল বিলে মাছ ধরতেন। এসব মাছ দিয়ে নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন তারা। তখন কৃষকের পরিবারে যেমনি গোলাভরা ধান থাকত, আর জলে মিলত নানা প্রজাতির মাছ। এখন আর সেই সুযোগ নেই।

জাল যার জল তার এমন সুযোগ এখন নষ্ট হয়ে গেছে। প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত হচ্ছেন বিত্তশালীদের অর্থের দৌরাত্ম্যের কাজে। শুধু নদী-নালা, খাল-বিল নয়, প্রবাহমান নদীও লিজ দেয়া হচ্ছে সরকারিভাবে। আর এসব কিছুই বিত্তশালী আর প্রভাবশালীরা জেলেদের সমিতির নাম করে ইজারা নেয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন প্রকৃত জেলেরা। তবে প্রশাসনের ভাষ্য প্রবাহমান নদী লিজ দেয়া হয় না। সরেজমিন দেখা মিলে ঘোড়াউত্রা নদীও লিজ নিয়ে ভোগদখল করছেন নামধারী জেলেরা।

সরেজমিন ঘুরে প্রকৃত জেলে পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায় লিজ নেয়ার মতো নগদ টাকা নেই তাদের। এ ছাড়া ক্ষমতার দাপট, পেশিশক্তির অধিকারী না হলে লিজ নিলেও মাছ ধরে নিয়ে যায় ক্ষমতাশালীরা। এমন অভিযোগ সরেজমিন অসংখ্য ভুক্তভোগী জেলে পরিবারের সদস্যদের।

তাদের আহাজারি সরকারের তরফ থেকে কেউ দেখার প্রয়োজন মনে করে না। জেলে পরিবারের লোকজন স্বাধীনভাবে মাছ ধরার সুবিধাবঞ্চিত জেনেও না দেখার বাহানা চলে সরকারের পক্ষ থেকে। প্রকৃত জেলেরা বছরের ৩-৪ মাস মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরতে পারলেও লিজ মালিকদের লিজে আনা জায়গার আশপাশের মাছ ধরতে দেয়া হয় না। তা ছাড়া যে সময়ে বর্ষার পানি কমে যায় এই সময়ে মাছ ধরার উপযুক্ত সময় হলেও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয় প্রকৃত জেলেদের। ফলে জেলেরা প্রভাবশালীদের লিজের নদী-নালা, খাল, বিল, এমনকি বদ্ধ জলাশয়েও দিনমজুর হিসেবে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার বিনিময়ে মাছ ধরে কষ্টে দিন কাটায়। তা দিয়ে বর্তমানে সংসার চলে না। জেলেদের ভাষ্য একসময়ে গ্রামের হাট-বাজারে, বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মাছ বিক্রি করার পাশাপাশি অতিরিক্ত মাছ শুঁটকি দেয়া হতো। বাজিতপুরের জেলে পাড়ার এমন দৃশ্য চোখে পড়ার মতোই ছিল বলে জানান হিলোচিয়ার ৬৫ বছরের শারীরিক প্রতিবন্ধী নন্দ লাল ও তার বড় ভাই শান্তি লাল।

সরেজমিন একাধিক জেলেপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে জাল বুনার দৃশ্য তেমন একটা নেই। শুঁটকির গন্ধও এখন আর নাকে লাগে না। হাওর থেকে তাজা মাছ ধরে নিয়ে আসার দৃশ্যও চোখে পড়ে না। জেলেনিদেরকে ছোট ছোট বিভিন্ন প্রকারের মাছকে পৃথক পৃথক জাত আকারে বাছাইয়ের দৃশ্যও মেলেনি। তাদের মুখের হাঁসি যেন কেড়ে নিয়েছে ইজারাদার মালিকরা। আর এই সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে সরকারিভাবেই। এ বিষয়ে জানতে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় একটি ওয়ার্কশপে আছি। আর লিজ দেয়ার বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারে নাই। তবে আপনার যুক্তির সাথে একমত যে, লিজের কারণে নানান দিক থেকে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে জেলেরা। অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভবান সরকার ও লিজদাতারা। আর নিকলি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা পাপিয়া আক্তারকে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় প্রবাহমান নদী লিজের নিয়ম আছে কি না? জবাবে তিনি কোনো প্রবাহমান নদী লিজ দেয়া হয়নি বলে জানান। সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় ঘোড়াউত্রার নদীতে মাছ ধরতে গেলে লিজ মালিকরা বাধা দিচ্ছে। তখন তিনি স্থানীয় ইউএনওকে বিষয়টি জানাতে বলেন।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/814734