১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ৯:৪৪

সব চোট বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ওপর

-ইবনে নূরুল হুদা

রাষ্ট্রায়ত্ত অনেক প্রতিষ্ঠানই লোকসানের বৃত্তে থাকলেও বারবার চোট পড়ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস তথা জ¦ালানি খাতের ওপর। এজন্য ধারাবাহিক লোকসানকে অজুহাত হিসাবে দেখানো হচ্ছে। বিষয়টি এখন রীতিমত কথার কথায় পরিণত হয়েছে। সে অজুহাতেই গত ১৪ বছরে ১২ দফায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে অন্তত ১২১ শতাংশ। আর পাঁচ দফায় গড়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৭৫ শতাংশ। পরিবহন খাতের সিএনজির দাম বেড়েছে ছয় দফা। এছাড়া ডিজেলের দাম বেড়ে প্রায় ২৩৭ শতাংশ আর অকটেন ও পেট্রোলের দাম প্রায় ১৬৯ শতাংশে পৌঁছেছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় অন্যান্য খাতগুলোও লোকসানী হলেও সেদিকে মোটেই লক্ষ্য করা হচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার জ¦ালানি খাত থেকেই সব লোকসানের ঝাল মেটাতে চাচ্ছে। বিষয়টি কাক্সিক্ষত ও যৌক্তিক নয়।

সমীক্ষা অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত কিছু প্রতিষ্ঠানের লোকসান গত এক বছরের ব্যবধানে এত বেড়েছে-যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। বিশেষ করে বাণিজ্যিক উপখাত, ইউটিলিটি সার্ভিস ও শিল্পখাতের সঙ্গে জড়িত এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে। লোকসান বৃদ্ধির মধ্যে সবার ওপরে আছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এর পরেই বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। আবার বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের মতো এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানেও লোকসান বেড়েছে এক বছরের ব্যবধানে অনেকখানি। সরকারি ৪৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লোকসানে পড়েছে ১০টি। ২০২২-২৩ বছরে এই দশ প্রতিষ্ঠানের পেছনে ২০ হাজার ৭৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে সরকার। বাকি ৩৯ প্রতিষ্ঠান লাভে থাকায় সার্বিকভাবে লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭৪১ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৩-র তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক বছরে রাষ্ট্রাত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসান করেছে বিপিসি। ২০২৩ সালের ২৩ মে পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি লোকসান করেছে ৭ হাজার ৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৮৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৫ হাজার ১০৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা লোকসান বেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর ২৫৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বিপিসির লোকসান।

লোকসানের দিক দিয়ে এরপরই রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ হাজার ৯৬৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা লোকসান করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু আগের অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান ছিল ৩ হাজার ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত বছর ৩ হাজার ৭২৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা লোকসান বৃদ্ধি পেয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, ১১৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ লোকসান বেড়েছে বিপিডিবির।

গত অর্থবছরে মুনাফা করা রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এখন তৃতীয় সর্বোচ্চ লোকসানি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি মূলত রোজার মাসে ৬টি ভোগ্যপণ্য এবং বছরের অন্য সময় চারটি পণ্য কমদামে দেশের নিম্নআয়ের মানুষের হাতে তুলে দেয়। টিসিবি ২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসান করেছে ৫ হাজার ৫৬২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। বছর শেষ হলে এ লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে প্রাপ্ততথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ৮৫৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল।

গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকারি যে প্রতিষ্ঠান একবারও লাভের মুখ দেখেনি সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। যদিও প্রতিষ্ঠানটির লোকসান অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো অস্বাভাবিকভাবে বাড়েনি। তবু এ বছর লোকসান হয়েছে ৬৭৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা; যা আগের অর্থবছরে ছিল ৬১০ কোটি।

লোকসানের তালিকায় এর পরের অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। গত অর্থবছরে ২৪৮ কোটি ৪ লাখ টাকা লোকসান করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে আরও যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান ২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসান করেছে তার মধ্যে আছে বিআরটিসি ৮৪.৪৩ কোটি, বিআইডব্লিটিএ ৭২.৩২ কোটি, বিআইডব্লিউটিসি ৪৯.৩১ কোটি বিএফডিসি ২০.৭৮ কোটি এবং বিটিএমসি ১৬.৬৬ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রীয় অনেক প্রতিষ্ঠানই লোকসানের বৃত্তে থাকলেও সরকার সহ সংশ্লিষ্টদের নজর শুধুই জ¦ালানি খাতের ওপরই মনে করা হচ্ছে। মূলত, লোকসানের কথা বলে এই খাতকেই বিশেষভাবে টার্গেটে পরিণত করা হয়েছে। মনে হয় সব ক্ষতির মাসুল ও দায়ভার এই খাতের ওপর চাপিয়ে দিতেই পুলকবোধ করছেন। সে ধারাবাহিকতায় দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ¦ালানি তেলের দাম। আর এই বৃদ্ধির তৎপরতা কোনভাবেই পিছু ছাড়ছে না। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো এবং জ্বালানির মূল্য সমন্বয়ের তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ ও ভর্তুকি কমাতে দাম বাড়ানোর এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অবশ্য এই তৎপরতা আরও আগে থেকেই শুরু হয়েছিল বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নতুন করে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হলে তা জনজীবনে নতুন করে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যা দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকি শূন্যে নামাতে বাল্ক মূল্যহার প্রায় ৮০ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। চলতি মাস থেকেই তা কার্যকরের প্রস্তাব করা হয়েছে। এজন্য চারটি বিকল্প প্রস্তাব বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির ফলে বিতরণ কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর লোকসান শূন্যে নামাতে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে পিডিবি। যা জনজীবনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়। এতে বলা হয়েছে, বিতরণ কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর বর্তমান গড় ট্যারিফ আট টাকা ২৫ পয়সা। তবে বিদ্যমান বাল্ক (ছয় টাকা ৭০ পয়সা) ট্যারিফে ভারিত গড়ে তারা ৫৫ পয়সা বা ছয় দশমিক ৬১ শতাংশ ঘাটতিতে রয়েছে। এর সঙ্গে বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধি করলে তাদের লোকসান আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে। তাই লোকসান শূন্যে নামিয়ে আনতে বাল্কের পাশাপাশি খুচরা পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে হবে।

সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি অনেক দিনের পেন্ডিং ইস্যু। নির্বাচন ছিল, এজন্য হয়নি। এখন যতদ্রুত সম্ভব দাম বাড়লেই বিদ্যুৎ খাতের জন্য ভালো। কারণ পিডিবি’র তো লোকসান হচ্ছে। আবার ছয়টি বিতরণ সংস্থাও এখন লোকসান করছে। এটাকে সমন্বয় করতে হলেও তো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো দরকার। সরকার এ ব্যাপারে হয়তো দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবে। তারা বলছেন, দাম বাড়ানোর জন্য বিইআরসি’র গণশুনানি করতে হয়। এরপর সমন্বয়ের বিষয় থাকে। তবে আইন সংশোধন হওয়ায় সরকার নির্বাহী আদেশেও যেকোনো সময়ে দ্রুত ঘোষণা দিতে পারে। আর তা বাস্তবায়নের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। যা যৌক্তিক মনে করছেন না দেশের আত্মসচেতন মানুষ।

এর আগে গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার একক ক্ষমতা ছিল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)। সেখানে দাম বৃদ্ধির পক্ষে-বিপক্ষে নানারকম যুক্তি-তর্ক হতো। ফলে ইচ্ছেমতো দাম বৃদ্ধির সুযোগ ছিল তুলনামূলক কম। কিন্তু গত বছর থেকে সরকার নির্বাহী আদেশে দাম বৃদ্ধির জন্য আইন করে। এরপর গণশুনানি ছাড়াই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম তিন দফায় ১৫ শতাংশ এবং গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এবারও একই কায়দায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে আগামী এপ্রিল থেকে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনের মূল্য সমন্বয় করারও প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। সে ক্ষেত্রে দাম বাড়তেও পারে, আবার কমতেও পারে। তবে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে নেয়া ঋণের শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত পুরোপুরি ভর্তুকিমুক্ত করতে হবে। সরকারও এ ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন রমজানের আগেই বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভর্তুকি তুলে নিলে বিদ্যুতের দাম গড়ে ৭৮ শতাংশ বাড়তে পারে। ভর্তুকি শূন্য করতে হলে পাইকারি দাম বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ১২ টাকা ১১ পয়সা করতে হবে। তখন গ্রাহক পর্যায়ে দাম বেড়ে হবে ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা। সংস্থাটির সুপারিশ হচ্ছে, ধাপে ধাপে দাম সমন্বয় করলে জনগণের জন্য সহনীয় হবে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা বেশ তাড়াহুড়াই করছেন বলেই মনে হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। তখন ভয়াবহ লোডশেডিং ছিল দেশে। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে সেই সক্ষমতা এখন ২৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশি হয়েছে। চাহিদার অনেক বেশি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি সঙ্কটের কারণে পুরোপুরি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

চলমান গ্যাস সঙ্কট কাটাতে বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়ানোর কথা বলে আবারও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রমতে, এবার শিল্প, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম ৪৮ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

বাড়তে পারে আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের দাম। কারণ আবাসিকে মিটারবিহীন বা পোস্টপেইড গ্রাহকরা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করেন এমন দাবি করে বিইআরসিতে মূল্যবৃদ্ধির আবদার করেছে দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। তাদের আবদার পূরণ হলে একমুখী চুলার ক্ষেত্রে ৯৯০ থেকে বেড়ে ১৩৮০ এবং দ্বিমুখী চুলায় ১০৮০ থেকে বেড়ে ১৫৯২ টাকা হতে পারে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে গত ডিসেম্বরের শেষদিকে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করেছে বিইআরসি। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কথা বলে সর্বশেষ গত বছর ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু এরপরও চাহিদামতো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। মিটারে গ্যাস ব্যবহারকারীদের হঠাৎ জানুয়ারি মাস থেকে অতিরিক্ত মিটার ভাড়া ১০০ থেকে ২০০ টাকা করায় অসন্তোষ বিরাজ করছে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে। বর্তমানে প্রায় ৪৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে গড়ে ২৬০ কোটি। বাসাবাড়িসহ সবখানেই চলছে অস্থিরতা।

কনস্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর বক্তব্য হলো, উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে সুবিধা দিতে সরকারি অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখা হচ্ছে। সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কম দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। তা সত্ত্বেও বেসরকারি কেন্দ্রের বেশি দামের বিদ্যুৎ কিনে সরকার এ খাতে বেশি আর্থিক ঘাটতি সৃষ্টি করছে। এতে আরো বলা হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রেগুলোকে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিয়ে লাভবান করা হচ্ছে। আবার সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় বিদ্যুতের দামও দেয়া হচ্ছে বেশি। বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হচ্ছে সেটা অযৌক্তিক। বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণেরও ক্ষেত্রেও রয়েছে অস্বচ্ছতা। অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় না করে বারবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এটা মেয়ে নেয়া যায় না।

লাগামহীন মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে দেশে গ্যাস-বিদ্যুৎ সহ জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধি করা হলে তা রীতিমত জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে। আমাদের দেশে শুধু জ¦ালানি খাত নয়; বরং অনেক খাতই ধারাবাহিকভাবে লোকসান করছে। কিন্তু সেসব খাত নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না; সব ধ্যান-জ্ঞান শুধু গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাত নিয়ে। কিন্তু একথা কোনভাবেই বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না যে, নতুন করে জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধি করা হলে আবরো দেশে মূল্যস্ফীতি উস্কে দেয়া হবে। যা জনদুর্ভোগ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।

এমতাবস্থায় বিদ্যুৎ, গ্যাস তথা জ¦ালানির মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনভাবেই তড়িঘড়ি করা ঠিক হবে না বরং সার্বিক দিক বিবেচনায় এনে সময়োপযোগী ও যুৎসই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনবোধে গণশুনানিও করা দরকার। ভর্তুকিও পুরোপুরি প্রত্যাহার করা যুক্তিযুক্ত হবে না। একই সাথে নজর দিতে হবে অন্যান্য লোকসানী খাতের ওপরও। সব চাপ বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতের ওপর দেয়া ঠিক হবে না। এই প্রক্রিয়ায় জনগণের ওপর যাতে অসহনীয় চাপ সৃষ্টি না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। জনগণ সরকার সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে দায়িত্বশীল ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত আশা করে।

https://www.dailysangram.info/post/549048