১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:১৬

পেট্রোবাংলার পাওনা ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছেই বকেয়ার ৫৩ শতাংশ

সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকের কাছে পেট্রোবাংলার পাওনা রয়েছে প্রায় ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওনা রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে পেট্রোবাংলার পাওনা ১২ হাজার ৭৩ কোটি টাকা, যা মোট বকেয়ার ৫৩.২৪ শতাংশ। পেট্রোবাংলার সেপ্টেম্বর-ভিত্তিক এক পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও সরকারের বিদ্যুৎ দিয়ে তাদের পাওনা পাচ্ছে না। বড় অঙ্কের অর্থ বকেয়া পড়েছে সরকারের কাছে। এ কারণেও তারাও পেট্রোবাংলার বকেয়া পরিশোধ করতে পারছেন না। তরে সরকার দীর্ঘ মেয়াদে বিশেষ বন্ড ছেড়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া অর্থ পরিশোধ শুরু করেছে। গত মাসে এমন সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ছাড়া হয়েছিল। আর তার আগে সারের ভর্তুকিবাবদ আরো ৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ছাড়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বকেয়া পাওনার ভারে শুধু পেট্রোবাংলাই চাপে পড়েনি, বিদ্যুৎকেন্দ্র, দেশী বিদেশী গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে স্থানীয় ব্যাংকগুলোও বেকায়দায় পড়ে গেছে। ব্যাংকগুলো বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ঋণ দিয়েছিল। তারা সরকারের ভর্তুকির অর্থ না পাওয়ায় ব্যাংকের অর্থও পরিশোধ করতে পারছে না। এতে ব্যাংকিং খাতে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। সেইসাথে বেড়েছে খেলাপি ঋণ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে সার ও বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকি বাবদ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে সারে ১০ হাজার ৫০০ কোটি ও বিদ্যুতে ১২ হাজার কোটি টাকা মিলিয়ে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করতে চায় সরকার। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সংখ্যা ৪০। এর মধ্যে সারে ভর্তুকি বাবদ ১০টি ব্যাংক ও বিদ্যুতে ভর্তুকি বাবদ ৩০টি ব্যাংকের অনুকূলে বন্ড ইস্যু করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ বন্ডের মাধ্যমে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিপিডিবির কাছে থাকা আইপিপিগুলোর পাওনা অর্থ শোধ করা হয়েছে। সরকার গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতের পাওনা বন্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করতে চাইছে।

এক্ষেত্রে আরো দেড়-দুই হাজার কোটি টাকার মতো বন্ড ইস্যু করা হতে পারে। বন্ডের মেয়াদ বিভিন্ন সময়ের জন্য নির্ধারণ করা হবে, যাতে কোনো একক অর্থবছরে সরকারের ওপর একসাথে খুব বেশি পরিমাণে অর্থ পরিশোধের চাপ তৈরি না হয়। বন্ড ইস্যুর ফলে সরকারের ঋণ ও দায় আরো বাড়বে। তবে এ মুহূর্তে অর্থসঙ্কট থাকায় সরকারের কাছে এর বাইরে আর কোনো বিকল্প নেই বলে জানান তারা।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, গ্যাস কেনা বাবদ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের কাছে গত এক বছর ধরেই প্রতি মাস শেষে ৪০ কোটি ডলারেরও বেশি দেনা থাকছে পেট্রোবাংলার, এতে সংস্থাটির আর্থিক সমস্যা আরো বেড়েছে।
পেট্রোবাংলার পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর শেষে পেট্রোবাংলার আওতাধীন ১১টি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে পাওনা ১২ হাজার ৭২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আর এ পাওনা মোট বকেয়ার ৫৩.২৪ শতাংশ। সারকারখানাগুলোর কাছে পাওনা এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। ক্যাপটিভ পাওয়ারের কাছে পাওনা এক হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। সরকারি বেসরকারি শিল্পকারখানাগুলোর কাছে পাওনা দুই হাজার ২০৬ কোটি টাকা।

গ্যাস বিতরণকারী ৬ কোম্পানির বকেয়া পাওনা : পেট্রোবাংলার অপর এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত নভেম্বর শেষে পেট্রোবাংলার আওতাধীন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বকেয়া পাওনা সবচেয়ে বেশি। সংস্থাটি গ্রাহকদের থেকে ১২ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা পাবে। একইভাবে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড পাবে চার হাজার ৬৮ কোটি টাকা। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি পাবে এক হাজার ৯১৯ কোটি টাকা। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এক হাজার ১৬২ কোটি, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড দুই হাজার ৮৯৯ কোটি এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড পাবে ৮২২ কোটি টাকা।

পেট্রোবাংলার আওতাধীন এই ছয় কোম্পানি সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি-পর্যায়ের গ্রাহককে গ্যাস সরবরাহ করে। কোম্পানিগুলো ৭১টি বিদ্যুৎ কোম্পানি, পাঁচটি সার কারখানা, দেশের সব শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সিএনজি স্টেশন, চা বাগান, আবাসিক সংযোগ ও ক্যাপটিভ পাওয়ারের জন্য গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। যদিও সব বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানা একসাথে চালু থাকে না।

পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, গত ১৭ জানুয়ারি এই ছয়টি কোম্পানি বিদ্যুৎ খাতে (গ্রিড পাওয়ার ও নন-গ্রিড পাওয়ার) ৮২৩ এমএমসিএফডি, সার কারখানায় ২১৩ এমএমসিএফডি এবং অন্যান্য খাতে এক হাজার ৪৮৬ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করেছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/814204