১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:১১

বেড়ার ‘খেত খাওয়া’ রোগ

বেইলি রোডে অত্যাধুনিক সরকারি ডুপ্লেক্স বাড়িতে নামমাত্র ভাড়ায় মন্ত্রণালয়ের এক সচিবের বসবাসের বিষয়টি দেশে খোদ রক্ষকের ভক্ষক হবার এক নজির সৃষ্টি করেছে। সরকারি নিয়মমাফিক রাজধানীতে সরকারি আবাসনে বসবাসরত অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাসিক মূল বেতনের ৬০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বাবদ কর্তন করা হয়। কিন্তু প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই সচিবকে অভিজাত বাড়ির ভাড়া বাবদ দিতে হচ্ছে মূল বেতনের মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ যা অঙ্কে মাত্র ৫ হাজার ৮৫০ টাকা। প্রকৃতপক্ষে ধার্য হবার কথা মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকার ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ৪৬ হাজার ৮০০ টাকা। মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা বলেই কি প্রতি মাসে তিনি বাসা ভাড়া বাবদ প্রায় ৪১ হাজা টাকা রেয়াত পাচ্ছেন! উল্লেখ্য, নিয়ম অনুসারে বাড়িটির তত্ত্বাবধায়ক উক্ত সচিবেরই অধীনস্ত গণপূর্ত অধিদফতর, ভাড়া নির্ধারণ করে তাঁরই অধীনস্ত অপর এক সংস্থা। সে হিসেবে বলা যায়, সরকারি বাসা ভাড়া বাবদ অর্থ যথাযথ পরিমাণ ও প্রক্রিয়ায় উসুল হচ্ছে কিনা তা দেখভালের দায়িত্ব যাঁর, তিনিই নিজস্বার্থে সংশ্লিষ্ট নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন।

উল্লেখ্য, এলাকা, ভবনের ধরন ও ব্যবহারযোগ্য পরিসর বিবেচনায় বিলাসবহুল বাড়িটির মাসিক ভাড়া বর্তমান বাজারমূল্যে অন্তত ৪৬ হাজার টাকার ডবল হবার কথা। কিন্তু প্রায় পানির মূল্যে ৪৬ হাজা টাকাও সচিব সাহেব দিতে সম্মত নন। একটি দৈনিকের রিপোর্টারের কাছে তিনি স্বীকার করেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তিনি বাড়িটি ব্যবহার বাবদ প্রতিমাসে তাঁর মূল বেতনের ১৫ শতাংশ কর্তনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু কর্মকর্তারা নির্ধারণ করেছেন তার অর্ধেক। তবে ১৫ শতাংশইবা তিনি প্রস্তাব করেন কোন আইনে? সচিব যে প্রক্রিয়ায় বাড়িটি বরাদ্দ নিয়েছেন, তাও কি স্বাভাবিক? রিপোর্ট অনুসারে, সংশ্লিষ্ট এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখবার স্বার্থে বাড়িটির নিচতলায় একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ছিল। তা তত্ত্বাবধানের স্বার্থে দোতলায় পরিবারসহ থাকতেন একজন নির্বাহী প্রকৌশলী। কিন্তু সচিবের মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে সেখান থেকে এক প্রকার জোর করেই ওই প্রকৌশলীকে শুধু সরানোই হয়নি; সম্পূর্ণ উপকেন্দ্রটিই সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

যে দেশে প্রভাবশালী মহল কর্তৃক শত-সহস্র কোটি রাষ্ট্রীয় টাকা তসরুপের ঘটনা এন্তার ঘটে, সেদেশে একজন সচিবের এ রকম বেআইনি সুযোগ-সুবিধাগ্রহণের কারণে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হয়তো তেমন কিছু নয়। তবে রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এমন অগ্রহণযোগ্য আচরণ সাধারণভাবে নাগরিকদের মধ্যে এবং বিশেষত মাঠপ্রশাসনে আদর্শ কোনও বার্তা দেয় না। তাই যথাযথ তদন্ত করে আলোচ্য অনিয়ম রুখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এ ছাড়া আগের গাড়ি যেপথে যাবে পরের গাড়িও সেপথে যাবে। অন্য কথায় এটাকে বেড়ার খেতখাওয়া রোগ বলা হয়। আর এমন প্রবণতা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর নয় কখনই।

https://www.dailysangram.info/post/548877