১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবার, ৭:৫৬

ঢাকায় বেপরোয়া ছিনতাইকারীরা

রাজধানী ঢাকা কার্যতঃ ছিনতাইয়ের নগরীতে পরিণত হয়ে গেছে। কোথাও নিরাপত্তা নেই, কখন কোথায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়বেন আন্দাজ করা মুশকিল। প্রকাশ্যে যেমন জনসম্মুখে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে; তেমনি অন্ধকার, জনমানবহীন মোড়, পার্ক এমনকি গণপরিবহনেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাইকারীরা নানা নেটওয়ার্ক তৈরি করে এই অপরাধ করেই যাচ্ছে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে তিনশ’ মোবাইল ছিনতাই হচ্ছে। মেডিকেলের তথ্য অনুযায়ী ছিনতাইকারীর হাতে ছুরিকাঘাত হয়ে প্রতিদিনই রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ডিএমপি’র তথ্য অনুযায়ী, ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে রাজধানীর তেজগাঁও, উত্তরা, মিরপুুর, ধানমন্ডি, ওয়ারী ও মতিঝিল এলাকায়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, গ্রেফতার হলেও উপযুক্ত সাক্ষীর অভাব বা দুর্বল সাক্ষীর কারণে কারাগার থেকে অল্প দিনেই জামিনে বের হয়ে যাচ্ছে ছিনতাইকারীরা। এরপর তারা আবার সক্রিয় হচ্ছে। কেউ কেউ ছিনতাই করে দূর কোনও এলাকায় গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে বেড়ায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেকারত্ব, হতাশা, আর্থিক সংকট, মূল্যবোধের অবক্ষয়, মাদকের অর্থ যোগাড় এবং আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিতদের অদূরদর্শিতার কারণে ছিনতাই বেশি হচ্ছে। তাদের মতে, অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকায় আলোর ব্যবস্থা, প্রধান সড়কগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা, গ্রেফতার হওয়া ছিনতাইকারীদের শাস্তি নিশ্চিতসহ জামিনপ্রাপ্তদের কঠোর নজরদারিই ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক আইজিপি মো. আব্দুল কাইয়ুম ইনকিলাবকে বলেন, হতাশা, বেকারত্ব, ড্রাগ কর্মসংস্থানের অভাব ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে। পুলিশকে আইনের মধ্যে থেকে ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার, সাজা নিশ্চিকরণ এবং সংশোধনীর ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আয়েষা মাহামুদা ইনকিলাবকে বলেন, মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক থাকার কারণে ক্রাইম বেড়েছে। একটা অপরাধ করে কেউ যখন পার পায় তখন দ্বিতীয় অপরাধ করার সাহস পায়।

ঢাকার রাজপথসহ অলিগলি, প্রতিটি এলাকায় এখন ছিনতাকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। কি দিন আর কি রাত সব সময়ই ঘটছে অহরহ ছিনতাই। প্রকাশ্যে দিবালোকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ওরা লুটে নিচ্ছে সব। শুধু ছিনতাই নয়, এখন গণছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। কেউ বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে ওরা হামলা চালায়। ছুরিকাঘাত করে। হাসপাতাল সূত্র বলছে, বাস্তবতা হচ্ছে, ছিনতাই হামলার শিকার হয়ে গড়ে প্রতিদিন ৩-৪ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ছিনতাইকারীর হামলায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। দিনে-দুপুরে শত শত মানুষের সামনে ছিনতাই হচ্ছে। ঘটনার পর ছিনতাইকারীদের পদচারণার দৃশ্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) ধরা পড়ছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে গ্রেফতার হচ্ছে না এরা। পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলে, তারা দেখছি-দেখবো, জড়িতরা পার পাবে না বলে ভুক্তভোগীদের সান্ত¦না দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে।

ঢাকায় প্রতিদিন সংঘটিত ছিনতাইয়ের সঠিক পরিসংখ্যান নেই কোন আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির বেশ কয়েকটি থানার দায়িত্ব পালন করেছি। আসল সত্য হলো, প্রতিদিন যে পরিমাণ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে, থানায় সবগুলোর রেকর্ড হয় না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, মামলা করতে ভুক্তভোগীদের নিজেদেরই অনীহা। কেউ কেউ শুধুমাত্র একটা মৌখিক কিংবা লিখিত অভিযোগ করে রাখেন। কিন্তু তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে রাজি থাকেন না। আবার অনেকে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েও ঘটনা আড়াল করেন’।

অপরদিকে ভুক্তভোগীদের দাবি, পুলিশি ঝামেলা এড়াতেই তারা আইনি পদক্ষেপ নিতে রাজি হন না। কারণ, মামলা করে ছিনতাইকৃত মালামাল ফেরত পাওয়া এবং প্রতিকার পাওয়ারও নিশ্চয়তার উল্লেখযোগ্য নজীর নেই। ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রতিকার মেলে কম। হয়রানির ভয়ে বেশিরভাগ ভুক্তভোগী থানায় মামলা বা সাধারণ ডায়েরি করেন না। কেউ কেউ ছিনতাইয়ের শিকার হয়েও শুধুমাত্র সঙ্গে থাকা মালামাল হারিয়ে গেছে বলে শুধু জিডি করেন। ফলে ছিনতাইয়ের বেশিরভাগ ঘটনাই থেকে যায় আড়ালে।

বেপরোয়া ছিনতাইকারীদের ভয়ে পথচারীদের তটস্থ হয়ে থাকতে হয়। তাদের কবলে পড়ে শুধু টাকা পয়সা নয়, প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। কেউ কেউ হচ্ছেন আহত।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস.) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন জানান, ছিনতাই প্রতিরোধে টাস্কফোর্স গঠন করার পাশাপাশি আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারও করা হচ্ছে। কিন্তু আদালতের মাধ্যমে তারা জামিনে বের হয়ে এসে আগের মতো ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছে।

ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সক্ষমতা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অনুপস্থিতি সমাজকে অস্থির করে তুলেছে। বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, সম্পদের অসম বণ্টন এবং এ জিনিসগুলো রাষ্ট্র পরিপূর্ণ করতে পারলেই কেবলমাত্র পুলিশ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হবে।

অপরাধ বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকায় আলোর ব্যবস্থা, প্রধান সড়কগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা, গ্রেফতার হওয়া ছিনতাইকারীদের শাস্তি নিশ্চিতসহ জামিনপ্রাপ্তদের কঠোর নজরদারিই ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
কেস স্ট্যাডি (এক) : গত ২৬ জানুয়ারি। বিকেল তখন ৪টা। ঢাকার ওয়ারী থানাধীন র‌্যাঙ্কিন স্ট্রীট থেকে পায়ে হেঁটে কাপ্তান বাজার যাচ্ছিলো এক স্কুল শিক্ষার্থী। হঠাৎ তার পিছু নেয় ৬-৭ জন কিশোর গ্যাং সদস্য। ক্যাপ পরিহিত ওই স্কুল ছাত্রকে তারা থামতে বলে।

অপরিচিত বলে তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি ওই শিক্ষার্থী। এরপর ওয়ারী জামে মসজিদের সামনে পথরোধ করে ওই শিক্ষার্থীর। জিজ্ঞেস করে সাথে কত টাকা আছে। সে জানায়, ছাত্র মানুষ, টাকা পাব কোথায় ? কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্কুল শিক্ষার্থীকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। টাকা নিয়ে বের হতে পারোনা বলেই তাকে আরো প্রহার করে। শেষে শিক্ষার্থীর মাথার ক্যাপটি নিয়ে স্থান ত্যাগ করে কিশোর গ্যাং। ঘটনাটি স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ী ও পথচারী প্রত্যক্ষ করে। তারা কিশোর গ্রুপকে প্রতিহত না করে উল্টো ওই শিক্ষার্থীকে সান্ত¦না দিয়ে দ্রুত সটকে পড়ার পরামর্শ দিয়ে বলে, ওরা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, প্রত্যেকের সাথে ধারালো অস্ত্র রয়েছে। থাকতে পারে আগ্নেয়াস্ত্রও। ঘটনার বিষয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করে কিশোর গ্যাং সদস্যদের শনাক্ত করে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৪ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শেষে পুলিশ জানতে পারে ওই এলাকার এবং চক্রটির প্রধানের নাম আরজু। ৭ সদস্যের কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেয় সে।

কেস স্ট্যাডি (দুই) : বয়োবৃদ্ধ আব্দুল মান্নান তালুকদার। তার জন্মস্থান সিরাজগঞ্জ। বৈবাহিক সূত্রে তিনি জার্মান নাগরিক। নেদারল্যান্ডস থেকে গত ১৫ ডিসেম্বর তিনি সিরাজগঞ্জের গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন। রাত ১০টায় তিনি গাবতলী থেকে ভাটারার বসুন্ধরার বাসার উদ্দেশ্যে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ওঠেন। শেরে বাংলানগর থানাধীন জাতীয় গ্রন্থাগারের সামনে আসতেই চালক হঠাৎ সিএনজি থামিয়ে দেন। ছিনতাইকারী সিএনজির ভেতরে উঠে মান্নানের গলায় ধারালো অস্ত্র ঠেকায়। বাধা দিলে তারা মান্নানের হাতে একাধিক ছুরিকাঘাত করে। এরপর নগদ ১২ হাজার টাকা, দুটি স্বর্ণের আংটি ও একটি আই ফোন এবং ক্রেডিট কার্ড ছিনিয়ে নেয়। এরই মধ্যে ছিনতাইকারীদের একজন প্রস্তাব দেয় ৩০ হাজার টাকা তুলে দিলে তারা আই ফোনটি ফেরত দিবে। প্রয়োজনীয় ফোনটি ফেরত পেতে তিনি আগারগাঁও ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা তুলে দিলেও তারা মান্নানকে রাস্তার ওপর ফেলে দিয়ে সিএনজি যোগেই পালিয়ে যায়। ভুক্তভোগী মান্নান, এ ব্যাপারে প্রথমে জিডি এবং পরে শেরে বাংলানগর থানায় মামলা (নং-৪০, তাং ২০-১২-২৪) দায়ের করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি মুঃ আহাদ আলী ইনকিলাবকে বলেন, গতকাল পর্যন্ত ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে হতাশাকন্ঠে ভুক্তভোগী মান্নান ইনকিলাবকে বলেন, ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলা করে মনে হচ্ছে, তিনি যেন আরো বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন, ঘটনার প্রায় দুই মাস হতে চলেছে অথচ কোন সুফল পেলাম না। উল্টো সময়ে অসময়ে পুলিশের ফোন পেয়ে তাকে ছুটে যেতে হচ্ছে থানাসহ সংশ্লিষ্ট জায়গায়।

কেস স্ট্যাডি (তিন) : গত ২ ফেব্রুয়ারি। রাত সাড়ে ১১টা। জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে রিকশাযোগে ইত্তেফাক মোড়ে ফিরছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মাইনুল হাসান সোহেল। গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চের পূর্ব পাশের সড়ক। দক্ষিণ প্রান্তে আসতেই দেখতে পান সামনে একাধিক রিকশা থেমে আছে। সেদিকে চোখ ফেরাতেই তিনি দেখতে পান একটি মোটরসাইকেল অন্য রিকশাকে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। মোটরসাইকেলে আরোহী ছিলো তিন জন ছিনতাইকারী। তারা রিকশার পথরোধ করে যাত্রীদের সব লুটে নিচ্ছে। সামনের একাধিক রিকশারোহীদের সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার পর ওই একই ছিনতাইকারীরা সোহেলের গলায় চাপাতি ধরে ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এ ধরনের ঘটনায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন সোহেল। বিষয়টি তাৎক্ষণিক জানানো হয় মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে। গত বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি তিনি একই জায়গায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছিলেন। তখন ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার আই ফোন ও নগদ কয়েক হাজার টাকা নিয়ে নেয়। পরে মতিঝিল থানায় একটি অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি তিনি।

ওয়ারী থানার রেকর্ড অনুযায়ী গত জানুয়ারি মাসে ওই থানায় মোট ৫টি ছিনতাই মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় অনেকেই ধরা পড়েছে।
শেরে বাংলানগর থানার ওসি আহাদ আলী বলেন, গাবতলী থেকে ছিনতাইকারী চক্র যাত্রীদের পিছু নেয়। আগারগাঁও এলাকা কিছুটা নির্জন এবং তুলনামূলক ফাঁকা রাস্তা পেয়ে তারা ছিনতাই শেষে দ্রুত পালিয়ে যায়।

ছিনতাইকারীদের উৎপাত বেড়েছে উত্তরায়। ছিনতাইকারীদের হাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিদেশগামী যাত্রী ও রিকশারোহীরা।
গত ৩০ জানুয়ারি দুপুরে মিজানুর রহমান নামে এক প্রবাসী বন্ধুসহ উত্তরা পশ্চিম থানা গেইট সোনারগাঁ জনপথ রোড এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারী চক্র তার কাছে থাকা স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্ট, ব্যাংকের চেকসহ বিভিন্ন ডকুমেন্টস ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় তিনি উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করলেও ছিনতাইকৃত মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনার মাত্র ঘণ্টা খানেকের ব্যবধানে একই স্থানে ছিনতাইকারীরা অপর এক কলেজ ছাত্রের জরুরি কাগজপত্র, মূল পাসপোর্ট, স্কুল কলেজের শিক্ষাসনদের মূল কপি ও টিউশন ফি’র নগদ টাকাসহ শপিং ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনিও সাধারণ ডায়েরি করেন। ছিনতাইকারীদের ভয়ে উত্তরার বিভিন্ন সেক্টর, উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকার পথচারী ও রিকশারোহী সাধারণ যাত্রীরা অসহায়। আতঙ্ক নিয়ে তারা সড়কে চলাচল করেন। তেজগাঁও এলাকাও ছিনতাইকারীর বিচরণক্ষেত্র। এখানে অহরহ ছিনতাই হচ্ছে। তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন ইনকিলাবকে বলেন, গত ২ মাসে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে এবং ছিনতাইয়ের অভিযোগে ৩০ জনের মতো গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত চাকুসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। তিনি বলেন, বিশেষ করে মহাখালী রেল গেইট এবং সোনারগাঁও ক্রসিং এলাকায় ছিনতাইসহ অপরাধের ঘটনা বেশি ঘটছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রভাষক এবিএম নাজমুস সাকিব ইনকিলাবকে বলেন, এখন সব শ্রেণির কিশোর বয়সী বিশেষ করে ১৭ থেকে উঠতি যুবকরা ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত। মাদকের অর্থের যোগান নিতে এরা ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে। ড্রাগ আসক্তির কারণে যে কোনো ধরনের হিংস্রতার ক্ষেত্রেও তাদের বিবেকবোধ কাজ করে না। এক ধরনের হিরোইজমের মানসিকতা থেকে এই উঠতি তরুণরাই পাড়া মহল্লায় গড়ে তোলে কিশোর গ্যাং কালচার।

এর আগে ডিএমপি’র ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ জানিয়েছেন, রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে ৩শ’ মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় টানা পার্টির সদস্যরা।

ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ঢাকা শহরে ভাসমান মাদকসেবীরা এসব করে থাকে। থানা এলাকাগুলোয় নিয়মিত টহল দেয়া হচ্ছে। ছিনতাইয়ের প্রবণতা রাতে এবং ভোরবেলা বেশি দেখা যায় রাস্তা খালি থাকার কারণে। এছাড়া ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রতিরোধে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও কাজ করছে। পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়, কিন্তু জামিনে এসে একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

https://dailyinqilab.com/national/article/638571