১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ৩:০১

কৃষকের ২৫ টাকার শিম ঢাকায় এসে দ্বিগুণ

রোদ হোক বা বৃষ্টি, গরম কিংবা শীত; যে কোনো অজুহাতেই হঠাৎ বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন পণ্যের। কারসাজি করে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর কখনও আলু, কখনও পেঁয়াজ, আবার কখনও ডিমসহ নানা পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। সরকার বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও অসাধু সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। এমনকি শীত মৌসুমে নানা ধরনের সবজির সমারোহে দাম কমার কথা থাকলেও এবার শাকসবজির দাম আগের চেয়ে তুলনামূলক বেশি।
কৃষকরা বলছেন, তাদের উৎপাদিত শাকসবজির দাম যখন বাজারে গিয়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়, তখন তাদের হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। দাম বাড়লেও তারা লাভবান হতে পারেন না। ভোক্তার পকেট কেটে বের করা টাকা যায় মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে। গত শনিবার ফরিদপুর জেলায় সবজি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত সদরপুর উপজেলায় গিয়েও দেখা গেছে কৃষক পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন সবজির দামের তারতম্যের চিত্র।

গত শনিবার সকালে সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মজুমদার বাজারে কথা হয় শিমচাষি শাহীন মোল্লার সঙ্গে। তিনি জানান, বাড়ির পাশে দুই বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন; ফলনও ভালো। এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ফলন যা হয়েছে তাতে লাখ টাকার ওপরে শিম বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। এদিন বাজারে স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ী রমজান মোল্লার কাছে ২৫ টাকা কেজি দরে দেড় মণ শিম বিক্রি করেছেন। শাহীনের মতো আরও কয়েকজন চাষির কাছ থেকে রমজান মোল্লা একই দামে শিম কেনেন। রমজান জানান, মজুমদার বাজারে আরও কয়েকজন স্থানীয় পাইকার আছেন।

মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার হাটের দিনে ঢাকা থেকেও পাইকাররা আসেন এখানে সবজি কিনতে। বাজার থেকে সকালে মান অনুযায়ী ৯০০ থেকে হাজার টাকা মণ দরে ৩৫ থেকে ৪০ মণ শিম কিনেছেন। কেজি প্রতি খরচ পড়েছে ২৩ থেকে ২৫ টাকা। এসব শিম বস্তাভর্তি করে ঢাকায় পাঠানো হবে। সেখানে শ্রমিক খরচ পড়ে প্রতি কেজিতে ২ টাকা। অর্থাৎ লোড দেওয়ার আগে পাইকারের কাছে শিমের কেজি পড়ল ২৫ থেকে ২৭ টাকা। ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী ও শ্যামবাজারের মহাজনদেরই বেশি পণ্য দেন তিনি। এই শিম শ্যামবাজারের মোকামের মহাজন হারুন মণ্ডলের কাছে পাঠানো হবে।

রমজান মোল্লা জানান, ঢাকায় তাঁর পণ্য পৌঁছাতে গাড়ি ভাড়া দিয়ে কেজিতে আরও ৩-৪ টাকা খরচ হয়। এতে সব খরচ মিলে শিমের দাম পড়ে ২৮ থেকে ৩২ টাকা। ৩০-৩২ টাকার পণ্য ঢাকায় কীভাবে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন ঢাকার ব্যবসয়ীরা। কারণ তাঁর এই শিমই ঢাকার কোনো বাজারে কেজি ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হবে। সেখানকার আড়তে চাঁদাসহ অনেক রকম মারপ্যাঁচ চলে। গত বৃহস্পতিবারও ৩০ টাকা কেজি দরে শিম যাত্রাবাড়ীতে পাঠিয়েছেন। মহাজন তাঁকে কেজিতে ৩২ টাকা দাম দিয়েছেন। কখনও মহাজনরা কেজিতে ৫ টাকা লাভ দেন; কখনও এক-দুই টাকা কমও হয়। এটা বাজারের ওপর নির্ভর করে।

তিনি আরও জানান, শিম কৃষক পর্যায় থেকে কিনে ঢাকার মহাজনের কাছে বিক্রির জন্য তাঁর কাছে কোনো চালানপত্র নেই। কেন নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাগে না তাই। এ জন্য তো পুলিশকে রাস্তায় চাঁদা দিতে হয়।

https://samakal.com/whole-country/article/222556