১৫ মে ২০১৭, সোমবার, ৮:১০

বেশি কমেছে ইসলামী ব্যাংকের বেড়েছে আল-আরাফাহ্ ইসলামীর

অর্থবছরের ১০ মাসে প্রবাসী আয় কমেছে ১৬ শতাংশ

দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশিরা গত এপ্রিল মাসে ১০৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) পাঠিয়েছেন। এপ্রিলের প্রবাসী আয় গত মার্চের তুলনায় কিছুটা বেশি হলেও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্রবাসী আয় কমেছে ১৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে আসা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি কমেছে। এর বিপরীতে আল-আরাফাহ ইসলামী, ডাচ্-বাংলা, দি সিটি ও সাউথইস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসার পরিমাণ বেড়েছে। গত বছরের এপ্রিলে প্রবাসী আয় এসেছিল ১১৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। তবে গত এপ্রিলে আসে মাত্র ১০৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, প্রবাসী আয় বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কারণে আয় কমেছে।
ব্যাংকগুলোর প্রবাসী আয়ের এপ্রিল মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের এপ্রিলে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ৩০ কোটি ৪২ লাখ ডলার। সেখানে গত এপ্রিলে এসেছে মাত্র ১৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার। সে হিসাবে আগের বছরের এপ্রিলের চেয়ে গত এপ্রিলে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা ১২ কোটি ডলারের বেশি কমে গেছে।
অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে গত বছরের এপ্রিলে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৪ কোটি ডলার, সেখানে গত এপ্রিলে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ কোটি ডলারে। জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে গত বছরের এপ্রিলে আসে ৯ কোটি ৭৪ লাখ ডলার, গত এপ্রিলে এসেছে মাত্র ৬ কোটি ৬১ লাখ ডলার। সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রবাসী আয় এসেছিল ১০ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, গত এপ্রিলে তা কমে দাঁড়ায় ৮ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে প্রবাসী আয় বেড়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের। ২০১৬ সালের এপ্রিলে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছিল ৯০ লাখ ডলার, সেখানে গত এপ্রিলে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে গত এপ্রিলে প্রবাসী আয় এসেছে ৭ কোটি ২৯ লাখ ডলার, গত বছরের এপ্রিলে যার পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ২২ লাখ ডলার। একইভাবে দি সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে গত বছরের এপ্রিলে প্রবাসী আয় আসে ১ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, গত এপ্রিলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলারে। সাউথইস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে গত বছরের এপ্রিলে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল, গত এপ্রিলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে প্রবাসীরা ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার প্রবাসী আয় পাঠান। যদিও ২০১৫ সালে এসেছিল ১ হাজার ৫৩২ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত বছরে প্রবাসী আয় কমে ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর আগে ২০১৩ সালেও প্রবাসীরা ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম প্রবাসী আয় পাঠিয়েছিলেন।
প্রবাসী আয়ের নেতিবাচক প্রবণতা শুরু হয় ২০১৩ সালে। আগের বছরগুলোতে প্রবৃদ্ধি ঘটলেও সে বছরে প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়। ওই বছরে প্রবাসীরা ১ হাজার ৩৮৩ কোটি ডলার পাঠান, যা ২০১২ সালের তুলনায় ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম ছিল। ২০১৪ সালে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে প্রবাসী আয় আসে ১ হাজার ৪৯২ কোটি ডলার। এরপর ২০১৫ সালেও প্রবাসী আয়ে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে ব্যাংকিং চ্যানেল ও খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের দামের পার্থক্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন টাকার বেশি। তাই বেশি টাকার আশায় অনেকেই অবৈধ পথ বেছে নিচ্ছেন। এ ছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে আয় পাঠাতে বিভিন্ন নথিপত্রের প্রয়োজন পড়ছে, তাই অবৈধ পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। এ কারণে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার লেনদেন ও উত্তোলন সীমা কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

http://www.prothom-alo.com/economy/article/1167351/