১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, রবিবার, ২:৩৮

বিরিয়ানির আড়ালে শরীরে ঢুকছে বিষ? বিশেষ সুগন্ধের ‘রহস্য’ বিষাক্ত কেমিক্যাল!

আইন ও স্বাস্থ্যঝুঁকিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বিরিয়ানি রান্নায় বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করছে দেশের অনেক হোটেল-রেস্টুরেন্ট। বিশেষ সুগন্ধযুক্ত (পারফিউম) এসব বিরিয়ানি কেমিক্যালের কারণে দীর্ঘসময় থাকে টাটকা, মোহনীয় ঘ্রাণে টানে গ্রাহককে। দেশজুড়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ কিনছেন এসব বিরিয়ানি, অজান্তেই যাদের শরীরে ঢুকছে ‘বিষ’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বিরিয়ানি খেলে মানবদেহে বাসা বাঁধতে পারে মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ জটিল সব রোগ। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, তারা জানতেনই না প্রকাশ্যেই চলছে এমন জঘন্য অপরাধ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রামের জনপ্রিয় সব হোটেল-রেস্টুরেন্টের বিরিয়ানিতে নিয়মিতভাবে ব্যবহার করা হয় বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত ফ্লেভার (পারফিউম)। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এসব কেমিক্যাল বিরিয়ানিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টাটকা ও সুগন্ধযুক্ত রাখে।

দেশে ভারতীয় কেমিক্যালের ‘বড় বাজার’ : সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর এলাকার ছোট বিরিয়ানির দোকানিরা স্থানীয় বাজার থেকেই বিরিয়ানি রান্নার জন্য কেমিক্যাল সংগ্রহ করে থাকেন। তবে বিরিয়ানির বাজারে নামকরা ব্র্যান্ডগুলো কিছু ক্ষেত্রে নিজ উদ্যোগেও ভারত থেকে এসব কেমিক্যাল আমদানি করে।

চড়া দামে কেমিক্যালের বিকিকিনি : জানা গেছে, বিরিয়ানিতে ব্যবহৃত এসব ভারতীয় কেমিক্যালযুক্ত পারফিউম পাইকারি বাজারে প্রতি লিটার বিক্রি হয় ৫ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর খুচরা বাজারে প্রতি আউন্স (২৮ গ্রাম) বিক্রি করা হয় ২৫০ টাকায়। অন্যদিকে দেশীয় তৈরি পারফিউম পাইকারি বাজারে বিক্রি করা হয় প্রতি লিটার ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। আর খুচরা বাজারে প্রতি লিটার ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা হয় এসব পারফিউম।

যেভাবে মেশানো হয় বিরিয়ানিতে : বিরিয়ানি ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, প্রতি হাঁড়ি (ডেকচি) বিরিয়ানিতে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত কেমিক্যালযুক্ত পারফিউম দেয়া হয়। চাল ও মাংস সিদ্ধ হয়ে গেলে, রান্না হওয়ার ২০ মিনিট আগে অর্থাৎ চুলা থেকে বিরিয়ানির হাঁড়ি নামানোর আগে দেওয়া হয় এ পারফিউম। এ পারফিউম ব্যবহারের ফলে সুগন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি বিরিয়ানি টাটকা থাকে। তবে খেয়ে বা দেখে বোঝার উপায় থাকে না যে, বিরিয়ানিতে মারাত্মক ক্ষতিকর সব বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত এসব খাবার খেলে মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এছাড়া ক্যান্সারসহ নানা প্রকার জটিল ও কঠিন রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
‘জানে না’ প্রশাসন : বিরিয়ানিতে বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত ফ্লেভারের ব্যবহার বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। সিভিল সার্জন ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বিষয়টি এখনও তাদের নজরদারির বাইরে। সোজাকথায়, তারা তেমন কিছু ‘জানেন না’ এ বিষয়ে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, বিরিয়ানিতে বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত ফ্লেভার ব্যবহারের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আমরা এখন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে বিষয়টি জানাব। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম মহানগরের নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোহাম্মদ বশির আহম্মেদ বলেন, বিরিয়ানিতে কেওড়া জল ও গোলাপজল ব্যবহারের বিষয়ে আমরা জানি। এসব ব্যবহার না করার জন্য তাদের নিষেধ করা হয়। কিন্তু বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত ফ্লেভার ব্যবহারের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন : জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, বিষয়টি আমরা দেখছি। আমাদের নজরদারিতে আছে। এ বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, নিরাপদ খাবারের নামে আমরা আসলে বিষ খাচ্ছি। বিরিয়ানিতে বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত ফ্লেভার ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ বিষয়ে জানে না। কোনো ধরনের নজরদারি ও জবাবদিহিতা নেই। বিরিয়ানিতে এসব কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে মানুষের শরীরে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন প্রকার রোগ হচ্ছে।

তিনি বলেন, যেসব দোকান, হোটেল-রেস্টুরেন্টে এসব কেমিক্যাল পাওয়া যাবে, সেসব প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে সিলগালা করে দেয়া উচিৎ। একইসঙ্গে ভোক্তাদের এসব দোকান থেকে দূরে থাকারও আহ্বান জানান তিনি।

https://www.dailysangram.info/post/548549