১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ৪:২৬

চাহিদার মাত্র ৩৮% ডাল উৎপাদন, উদ্যোগ নেই আবাদ বাড়ানোর

বছরজুড়ে প্রায় ২৬ লাখ টনের চাহিদা থাকলেও দেশে মাত্র ১০ লাখ টন ডাল উৎপাদন হচ্ছে, যা চাহিদার মাত্র ৩৮ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণে প্রতিবছর অর্ধেকেরও বেশি বিদেশ থেকে আনতে হচ্ছে। বছরে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টন ডাল আমদানিতে ব্যয় হয় প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা। উৎপাদন কম হওয়ায় সব রকম ডালের দামই এখন বেশি। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের অন্যতম ভরসার এই খাদ্যপণ্যও নাগালে নেই। এবার রমজানের আগে বেড়েছে সব ধরনের ডালের দাম। গেল এক মাসে মসুর ডালের দাম বেড়েছে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত। আমদানিকারকরা বলছেন, ডলার সংকট আর এলসি জটিলতায় চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হচ্ছে। এ কারণে শেষ কয়েক মাস ধরেই দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবুও ডালের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির তেমন উদ্যোগ নেই।

এমন পরিস্থিতিতে আজ শনিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডাল দিবস। ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী দিনটি পালন করা হয়। বাংলাদেশে গত বছর প্রথম এটি পালন করা হয়েছিল আনুষ্ঠানিকভাবে। ডাল দিবস উপলক্ষে আজ দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেবেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে, একজন মানুষকে দৈনিক অন্তত ৪৫ গ্রাম ডালশস্য খেতে হয়। দেশে বর্তমানে এর প্রাপ্যতা রয়েছে মাথাপিছু গড়ে মাত্র ২৮ গ্রাম। সে হিসাবে এখনও ডালশস্যের প্রাপ্যতায় প্রায় ১৭ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার পরিসংখ্যানে, মাথাপিছু ৪৫ গ্রাম অনুযায়ী দেশে ডালের চাহিদা রয়েছে ২৮ লাখ টন। এতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হলে আরও অন্তত ১৯ লাখ টন উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশে ডালশস্যের মোট চাহিদার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, এটি আমদানিতে শুধু ২০২০-২১ অর্থবছরেই ৫ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে খরচ হয় ৩ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ হাজার ১৮৫ কোটি টাকার ডাল আমদানির প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।

কৃষিবিজ্ঞানী ও পুষ্টিবিদদের মতে, ডাল থেকে যে পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায় তা ডিম, দুধ বা মাংসের মাধ্যমে অর্জন করতে প্রায় তিন গুণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। এসব কারণে ডালকে ‘গরিবের মাংস’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিনা উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল বেশ কিছু ডালের জাত উদ্ভাবন করেছে। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন দেড় টন থেকে ২ টন পর্যন্ত হলেও মাঠ পর্যায়ে আবাদ সম্প্রসারণ ঘটছে না।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার বলেন, বর্তমানে জাতীয়ভাবে গড় উৎপাদন প্রতি হেক্টরে ১ দশমিক ২ টন। আধুনিক জাত ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ২ থেকে ২ দশমিক ৫ টন হেক্টরপ্রতি ডালের ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব। খরিপ-১ ও খরিপ-২-এ যদি কোনো জাত উদ্ভাবন করা যায় এবং লোকাল জাতগুলো তুলে নিয়ে আধুনিক জাতগুলো মানুষের হাতে তুলে দিতে পারলে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯১ হাজার হেক্টর জমিতে ৯ লাখ ৩১ হাজার টন ডালজাতীয় শস্য উৎপাদন হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, একই অর্থবছরে ৩ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে ৪ লাখ ২৪ হাজার টন ডালশস্য উৎপাদন হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সঠিক তথ্য না থাকলে পরিকল্পনা নেওয়া কঠিন। এ ক্ষেত্রে তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, প্রাণিজ প্রোটিনের উত্তম উৎস হলো ডাল। চালের দিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ডালসহ অন্যান্য ফসল প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। তবে আমরা ধানের উৎপাদন না কমিয়েই ডালের উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছি। বরেন্দ্র অঞ্চল, চরাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা, উপকূল, রেললাইন ও সড়কের ধারে এবং বসতবাড়িতে ডালজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ আছে। ফল বাগানেও মিশ্র ফসল হিসেবে ডাল চাষ করা যায়। দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমি শুষ্ক পড়ে থাকে, যেখানে এটি চাষ হতে পারে।

https://samakal.com/bangladesh/article/222232