১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ৪:১৫

মর্টার শেল বিস্ফোরণ ও গোলাগুলীতে কাঁপছে টেকনাফ সীমান্ত

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে টেকনাফের দিকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা গোলাগুলী আর মর্টারশেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে। এেিদক নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে আরও এক মর্টারশেল উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদিকে মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ করা ২৩ উগ্রপন্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিজিবি। এছাড়া উখিয়া সীমান্তে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্ষ্যং উনছিপ্রাং এলাকার সঙ্গে মিয়ানমারের দূরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার। কাছাকাছি হওয়ায় মিয়ানমারে কী হচ্ছে তা অনেকটা খালি চোখেই দেখা যায়। উনছিপ্রাং সীমান্তের স্থানীয়দের দাবি, ওপারে ঢেঁকিবুনিয়া এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ঘাঁটিগুলো দখল করে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। এই কারণে টেকনাফ অংশে মিয়ানমারের শহর শীলখালী, বলিবাজার ও কুইরখালী থেকে এসব বিস্ফোরণের শব্দ আসছে। উনছিপ্রাং স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছি। এই শব্দে এলাকা কেঁপে উঠছে। মনে হচ্ছে বজ্রপাত হচ্ছে। এরকম শব্দ জন্মের পরও শুনিনি। আরেক বাসিন্দা বসত করিম বলেন, আমি চিংড়িচাষি। মিয়ানমারের সীমান্তের কাছাকাছি বাংলাদেশ অংশে মাস্টারের প্যারা এলাকায় আমার চিংড়ি ঘের। মিয়ানমারে কী হচ্ছে, হচ্ছে না সেটি খালি চোখে দেখা যায়। বিকেলের দিকে কালো পোশাক পরা মানুষের সঙ্গে মিয়ানমারের নাসাকা (বিজিপি) সঙ্গে গুলী বিনিময় হচ্ছে। কিছু মানুষ আমাদের সীমান্তে বিলার দ্বীপের দিকে আশ্রয় নিয়েছে। লাগাতার বোমা হামলা হচ্ছে। বোমার বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠছে এপার। হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনুয়ারী বলেন, উনছিপ্রাং, কানজড়পাড়া, খারাংখালী ঝিমনখালী এলাকায় ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ শোনা যায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সীমান্তের কাছাকাছি থাকা চিংড়িচাষিরা। কয়েক দিন আগেও বসতঘরে গুলী এসে পড়ে। অল্পের জন্য জীবন রক্ষা পায়। শোনা যাচ্ছে শীলখালী, বলিবাজার ও কুইরখালী ঘাঁটি দখল নিতে বিদ্রোহীরা হামলা করছে। হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের উনঝিপ্রাং ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রশিদ আহমদ বলেন, সন্ধ্যা থেকে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের কয়েকটি এলাকায় ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। এতে আমাদের এলাকা কেঁপে উঠছে।

আরও এক মর্টারশেল উদ্ধার: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমে একদিনের ব্যবধানে আরও একটি মর্টারশেল উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (দুপুরে ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড তমব্রু পশ্চিমকূল এলাকা থেকে এটি উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা জানান, দুপুরে তমব্রু পশ্চিমকূল বিজিবি ক্যাম্পের পাশে ধানক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে একটি মর্টারশেল দেখতে পান স্থানীয়রা। তারা এটি রাস্তার কাছাকাছি এনে প্রশাসনকে খবর দেন। পরে বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে মর্টারশেলটি নিজেদের হেফাজতে নেয়। এনিয়ে গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি অবিস্ফোরিত মর্টারশেল উদ্ধার করা হয়েছে। মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যরা পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার সময় মর্টারশেলগুলো ফেলে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড নোয়াপাড়া এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় অবিস্ফোরিত একটি মর্টারশেল উদ্ধার করে বিজিবি।

২৩ উগ্রপন্থীর বিরুদ্ধে বিজিবির মামলা: বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রামে ঢুকে পড়া মিয়ানমারের সেই ২৩ উগ্রপন্থীর বিরুদ্ধে অবশেষে মামলা করেছে বিজিবি। শুক্রবার কক্সবাজারের ৩৪ বিজিবির এক সদস্য বাদী হয়ে উখিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন। পুলিশ, বিজিবি, ইউপি পরিষদ ও গ্রামবাসীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, গেল ৬ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করে রহমতের বিল গ্রামে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে মিয়ানমারের অস্ত্রধারী কিছু উগ্রপন্থী। তখন তাদের ধাওয়া করে ৪টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ২৩ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করে গ্রামবাসী। পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়া মিয়ানমারের সেই ২৩ উগ্রপন্থীর বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। রামুর বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হাসান, কয়েকদিন আগে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় ধরা পড়া মিয়ানমারের ২৩ জনের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। তাদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসেন বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অস্ত্র আইনে বিজিবির দায়ের করা এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।

অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার: সীমান্তে অস্থিরতার মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়ার থাইংখালীর রহমতেরবিল এলাকায় অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম হোসেন। তিনি বলেন, রাতেই সীমান্তে একটি লাশ পাওয়ার খবর দেয় বিজিবি। তবে তারা সকালে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করার পরামর্শ দেন। তারা এখন ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। নিহত ব্যক্তির পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), মিয়ানমার সেনাবাহিনী, পুলিশ, ইমিগ্রেশন সদস্য ও অন্যান্য সংস্থার ৩ শতাধিক সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে।

https://www.dailysangram.info/post/548488