৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ২:৪৪

এলপিজি সিলিন্ডার কেটে স্ক্র্যাপ করে বিক্রি

স্টিলের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ম ভেঙে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) খালি সিলিন্ডার স্ক্র্যাপ করে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কম্পানির খালি সিলিন্ডার বোতল বিভিন্ন রি-রোলিং মিলে বিক্রি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ এলপি গ্যাস খাতের উদ্যোক্তাদের। এতে একদিকে বাজারে সিলিন্ডার সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এলপিজি ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে পরিবেশের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

গত বুধবার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে রি-রোলিং মিলে পাঠানোর সময় এলপিজির ৭০০টি ভাল্ববিহীন সিলিন্ডার বোতলসহ একটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করেছে পুলিশ। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বেগমগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর সড়কের উত্তর নাজিরপুর কেরানীর দরজার কাছে এক ডিপো থেকে পাচারের খবর পেয়ে পুলিশ এগুলো জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে।

জানা গেছে, জব্দ হওয়া সিলিন্ডারগুলো মেসার্স জে আর ব্রাদার্সের এলপি গ্যাসের এজেন্টের ডিপো থেকে বিভিন্ন স্টিল রি-রোলিং মিলে পাচার করা হচ্ছিল। ওই দিন আরো চারটি কাভার্ড ভ্যান ভর্তি করে এক হাজার ৮০০টি ভাল্ববিহীন সিলিন্ডার পাঠানো হয়েছে বলেও জানা গেছে।

জব্দ হওয়া সিলিন্ডারের মধ্যে রয়েছে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস, জি-গ্যাস, সেনা এলপিজি, টিকে সুপার, নজির এলপিজি, সান গ্যাস, নাভানাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিলিন্ডার।

এলপিজি সিলিন্ডারের খালি বোতল কেন পাচার করা হচ্ছিল জানতে চাইলে মেসার্স জে আর ব্রাদার্সের মালিক নজরুল ইসলাম জুয়েল জানান, তাঁরা এই বোতলগুলো পুরনো হিসেবে বিক্রি করেছেন। সিলিন্ডারের খালি বোতল ভাল্ব ছাড়া বিক্রি করা বৈধ কি না—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নজরুল ইসলাম জুয়েল বিভিন্ন এলপিজির পরিবেশক হওয়ার কারণে স্থানীয় বিভিন্ন বাজার থেকে নানা কম্পানির সিলিন্ডার সংগ্রহ করে থাকেন।

তারপর সিলিন্ডার থেকে ভাল্বগুলো খুলে আলাদা করে বিক্রি করা হয়। আর খালি সিলিন্ডার অবৈধভাবে স্ক্র্যাপের জন্য বিভিন্ন রি-রোলিং মিলে পাঠাতেন তিনি।

বেগমগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ভাল্ব ছাড়া সিলিন্ডার অন্যত্র পাচারের খবর পেয়ে কাভার্ড ভ্যানসহ সিলিন্ডারগুলো জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাচারের বিষয়টি বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের মার্কেটিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান জানতে পেরে বেগমগঞ্জ থানা-পুলিশকে অবহিত করেন।
পরে রাতেই ওই কাভার্ড ভ্যান জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়।

এ বিষয়ে বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের ডিভিশনাল সেলস ম্যানেজার জাহিদুর রহমান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বুধবারে পাঁচটি কাভার্ড ভ্যানে করে অবৈধভাবে ৮ থেকে ১০টি কম্পানির মোট দুই হাজার ৫০০ ভাল্ববিহীন সিলিন্ডার রি-রোলিং মিলে পাচারের উদ্দেশ্য ছিল। তার মধ্যে একটি কাভার্ড ভ্যান আটক করতে পেরেছে পুলিশ। এভাবে এলপিজির সিলিন্ডার স্ক্র্যাপ করা হলে বাজারে সিলিন্ডার সরবরাহে সংকট তৈরি হবে। হুমকির মুখে পড়ে যাবেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা।’

এলপিজি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, দেশে যে সিলিন্ডারগুলোয় এলপিজি বিক্রি হয়, সেগুলো তৈরিতে ব্যবহৃত হয় উন্নতমানের ইস্পাত বা স্টিল। এগুলোর বাজারমূল্য অনেক বেশি হলেও বাজারজাতের পরিমাণ বাড়াতে গ্রাহকের ক্ষেত্রে সিলিন্ডারপ্রতি ভর্তুকি দেয় অপারেটররা। তাদের লক্ষ্য থাকে গ্রাহকের হাতে সাশ্রয়ী দামে ও সাধ্যের মধ্যে এলপি গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার। তবে সম্প্রতি এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বাজার থেকে খালি সিলিন্ডার অল্প দামে কিনে তা বেশি দামে বিক্রি করছেন বিভিন্ন স্টিল রি-রোলিং মিলগুলোয়। স্টিলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই ব্যবসা তাদের কাছে লাভজনক। অন্যদিকে বাজারে তৈরি হচ্ছে সিলিন্ডার সংকট। পাশাপাশি সিলিন্ডার স্ক্র্যাপ করার সময় বা কাটার সময় ঘটছে নানা ধরনের দুর্ঘটনাও।

জানা গেছে, সিলিন্ডার বিধিমালা-১৯৯১-এ স্পষ্ট লেখা আছে, কোনো অবস্থায়ই সিলিন্ডার স্ক্র্যাপ, কাটা কিংবা আঘাত করা যাবে না। সিলিন্ডার নষ্ট হয়ে গেলে সেটি কাটতে বা ভাঙতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তা করতে হবে। বিধিমালায় বলা হয়েছে, এলপিজি অপারেটর ও গ্যাসসংশ্লিষ্ট কম্পানিগুলোকে একটি সিলিন্ডার ১০ বছর পর পর পরীক্ষা করাতে হবে। সে সময় সেটির নির্দিষ্ট মান বজায় থাকলে এবং বিস্ফোরক পরিদপ্তরের ছাড়পত্র পেলেই তা আবার ব্যবহার করা যাবে।

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সিলিন্ডার ভাঙা, গলিয়ে ফেলা, এমনকি সিলিন্ডারের গায়ে আঘাত করার বিষয়েও বিধি-নিষেধ রয়েছে। কেবল বিস্ফোরক পরিদপ্তর কর্তৃক ব্যবহারের অযোগ্য ঘোষিত সিলিন্ডারগুলোই স্ক্র্যাপ করা যেতে পারে। অন্যথায় এটি হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2024/02/09/1362031