৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ১১:৫৭

অসচেতনতায় মেট্রোরেলে বাড়ছে নানা ভোগান্তি

ড়িয়ে ছিল মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশন। তাদের গন্তব্য ছিল উত্তরা উত্তর স্টেশন। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে বাবা-মায়ের সাথে প্লাটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিল হুজাইফা। ট্রেন এসে দরজা খুলতেই ছোট্ট হুজাইফা উঠে পড়ে তাতে। কিন্তু ভিড়ের কারণে উঠতে পারেননি তার বাবা-মা বা পরিবারের কেউ। এর মধ্যেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে দরজা বন্ধ হয়ে শেওড়াপাড়ার দিকে যাচ্ছে। সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে ট্রেনের সাথে দৌড়াতে থাকেন হুজাইফার পরিবার।

বিষয়টি স্টেশনে ডিউটিরত মেট্রোরেল পুলিশের চোখে পড়ে। তারা দ্রুত ওকিটকির মাধ্যমে খবর পাঠায় শেওড়াপাড়ায় দায়িত্বরত পুলিশের কাছে। সেখানে দায়িত্বে থাকা এএসআই আনোয়ার ছুটে যান দুই নম্বর প্লাটফর্মে। ইনফর্ম করা হয় ট্রেনের চালকেও। এ দিকে ট্রেনের ভেতরে পরিবারের কাউকে না পেয়ে কান্না শুরু করে ছোট্ট হুজাইফা। সেখানে থাকা অন্য যাত্রীরা তাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করেন। কিছু সময়ের মধ্যেই ট্রেন শেওড়াপাড়া পৌঁছলে পুলিশ সদস্যরা ট্রেন থেকে উদ্ধার করে হুজাইফাকে। খবর পেয়ে শেওড়াপাড়া স্টেশনে ছুটে যান হুজাইফার বাবা। পরে তার কাছে হস্তান্তর করা হয় শিশুটিকে। ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এএসআই আনোয়ার নয়া দিগন্তকে বলেন, আগারগাঁও স্টেশন থেকে খবর আসার সাথে সাথে আমরা প্লাটফর্মে অবস্থান করতে থাকি। সাথে সাথে শেওড়াপাড়া স্টেশনের কন্ট্রোল রুমে জানানো হয়। তারা চালককেও জানিয়ে দেন। যার কারণে সহজেই শিশুটিকে উদ্ধার করে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা। মেট্রোরেলের মতিঝিল স্টেশন থেকে উঠেছেন কয়েক শত যাত্রী। প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে উঠতে না পেরে প্লাটফর্মেই থেকে যান বেশির ভাগ লোক। সচিবালয় স্টেশন পার হতেই ঠেলাঠেলি নিয়ে শুরু হয় হট্টগোল। যা কাওরান বাজার পৌঁছাতে হাতাহাতিতে পরিণত হয়। এরপর ফার্মগেটে দু’জনকেই নামিয়ে দায়িত্বরত অনসারদের হাতে তুলে দেন অন্য যাত্রীরা। এর আগের শনিবার সন্ধ্যায় দুই বছরের সন্তান নিয়ে নারীদের কোচে ওঠেন নার্গিস (ছদ্দনাম) নামে এক নারী। প্রচণ্ড ভিড়ের চাপ সহস্য করতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ে তার সন্তান। চাপের তীব্রতায় বুকের মধ্যে সন্তান মারা যাচ্ছে ভেবে নিজেও কেঁদে ফেলেন। এরপর কাজীপাড়া যাওয়ার কথা থাকলেও কাওরানবাজারে নেমে যেতে বাধ্য হন তিনি।

ঢাকাবাসীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসা মেট্রোরেলে প্রতিদিনই এভাবে ঘটছে নানা ঘটনা। ভিড়ের কারণে নামতে না পেরে অন্য স্টেশনে চলে যেতে হচ্ছে। আবার ভেতরে কিছুটা জায়গা থাকতেও অন্য যাত্রীদের উঠতে না দেয়ার প্রবণতাও রয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। না বোঝের জন্য জরিমানাও দিতে হচ্ছে অনেককেই। অবশ্য মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, যাত্রীদের অসচেতনতার কারণেই ঘটছে এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিছু দিন ব্যবহারের পর যাত্রীরা আরো সচেতন হবেন বলে আশা করছেন তারা।

আল আমিন নামে একজন যাত্রী বলেন, বিকেল থেকেই মতিঝিল স্টেশনে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকে। যে চাপ রাতের শেষ ট্রেন পর্যন্ত থেকে যায়। এরপর বাকি স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের ট্রেনে ওঠা অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যে ভেতরে থাকা বেশির ভাগ যাত্রী নতুন করে যাত্রী উঠতে দিতে চান না। তেমনই মঙ্গলবার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে একজন সচিবালয় স্টেশন থেকে অন্য এক যাত্রীকে উঠতে দিতে চাননি। পরে ওই যাত্রী জোর করে উঠলে শুরু হয় বাগি¦তণ্ডা। এক পর্যায়ে দু’জনের মধ্যে মারমারি শুরু হয়। এত ভিড় যে অন্য যাত্রীরা ঠেকাতেও পারছিলেন না। তাদের মধ্যে একজনের শার্ট ছিঁড়ে ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়। পরে ট্রেন ফার্মগেট স্টেশনে থামলে অন্য যাত্রীরা দু’জনকেই নামিয়ে আনসার ডেকে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

নার্গিস জানান, সময় বাঁচাতে ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে সচিবালয় থেকে নারীদের কোচে উঠেছিলেন তিনি। শনিবার ছুটির দিন ছিল। তারপরও নারীদের কোচেও এতটা ভিড় হবে ভাবতে পারেননি তিনি। প্লাটফর্মে থাকা যাত্রীরা প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে ভেতরে থাকা যাত্রীরা চাপে পিষ্ট হতে শুরু করেন। তার বুকের মধ্যে থাকা দুই বছরের বাচ্চাটা চাপ সামলাতে না পেরে চিৎকার দিয়ে ওঠে। সন্তান মারা যাচ্ছে ভেবে তিনিও চিৎকার করতে শুরু করেন। ইচ্ছা থাকলেও কেউ কোনো ধরনের সহযোগিতাও করতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে কাজীপাড়া না গিয়ে কাওরানবাজারে নেমে যান। সেখান থেকে রিকশায় করে বাসায় ফেরেন তিনি। নার্গিস বলেন, আমার মনে হয় মেট্রোরেলে শিশু সন্তান নিয়ে চলাচলের জন্য নয়।

মারুফ হাসান নামে একজন নিয়মিত যাত্রী বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে মেট্রোরেল আমাদের জন্য আশীর্বাদ। যা নতুন একটি অভিজ্ঞতা, যা আমরা এখনো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। এর জন্য আমাদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষকেও আরো এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, কোচের ভেতরে ওঠার পরে দেখার কেউ থাকে না। সিসি ক্যামেরায় অনেক অসঙ্গতি দেখে চালক বারবার ঘোষণা দিয়ে থাকেন। কিন্তু তা কেউ মানতে চান না।

মারুফ মিয়া বলেন, তিনি এমআরটি পাস কিনেছেন। শেওড়াপাড়া নেমে কার্ড পাঞ্চ করেছিলেন। কিন্তু মেশিন সেটি গ্রহণ করেনি। তিনি না বুঝে চলে গেছেন। পরের দিন স্টেশনে গিয়ে কার্ড পাঞ্চ করলেও গেট খুলে না। তখন কাউন্টারে গেলে তাকে ১২০ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে।

এ ব্যাপারে স্টেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের জনগণের কাছে মেট্রোরেল নতুন একটি বিষয়। এটির ব্যবহারও নতুন। বেশ কিছু নিয়ম মানতে হয়। হতে হয় সচেতন। বেশির ভাগ যাত্রী এখনো সচেতন হতে পারেননি। যার কারণে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। একটু সচেতন হয়ে নিয়মগুলো মেনে চললে সব কিছুই সহজ হয়ে যাবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/812753