৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৩:৪৭

সারা দেশেই পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে

পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ হলো পানি আর এক ভাগ স্থল। কিন্তু এ সিংহভাগ পরিমাণ পানি থাকা সত্ত্বেও সব সময় এগুলো দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে ব্যবহার উপযোগী হয় না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি মানুষ পান করার জন্য, ফসল উৎপাদনে সেচ কাজে এবং অন্যান্য ব্যবহারের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর করে থাকে।

সম্প্রতি ব্রিটিশ সাপ্তাহিক নেচার জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে ১ লাখ ৭০ হাজারটি কূপ থেকে লাখ লাখ লিটার ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের জন্য উঠানো হচ্ছে। যার ফলে অনেক স্থানে দ্রুত কমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির মজুদ। গবেষকরা জানিয়েছেন, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৬৯৩টি জলাভূমিতে পানির স্তরের ৭১ শতাংশই হ্রাস পেয়েছে। যার মধ্যে ৬১৭টিতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বছরে ০.১ মিটারের বেশি করে কমছে।

গবেষকরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার করছে। এতে বিশ্বব্যাপী ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমছে এবং এই পানির স্তর কমে যাওয়ায় জনজীবনে এর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তারা বলছেন, ভূগর্ভস্থ পানির হ্রাস মানুষের খাওয়ার জন্য পানীয় বা ফসল উৎপাদনে সেচের জন্য কঠিন করে তুলতে পারে এবং ভূগর্ভস্থ পানি কমে যাওয়ার কারণে বিশ্বে ভূমি ধসের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। পানির স্তর নিচে নামার বিপদ থেকে নদ-নদীর দেশ বাংলাদেশও মুক্ত নয়। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকহারে নামছে নিচের দিকে। ওয়াসা সুপেয় পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভস্থ স্তর থেকে পানি উত্তোলনে বাধ্য হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীর নদীগুলোর পানি মাত্রাতিরিক্ত দূষিত হয়ে পড়ায় তা পরিশোধন করে ব্যবহার করাও কঠিন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর যে বাড়তি চাপ পড়ছে, তা অশনিসংকেত বলে বিবেচিত হচ্ছে।

বিজ্ঞান জার্নাল পিএলওএস ওয়ানের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ যখন ভূপৃষ্ঠের পানি পান করতো, তখন কোনো সমস্যা হতো না কিন্তু নলকূপের পানি ব্যবহার করায় গুরুতর জনস্বাস্থ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে অনেক এলাকায় ক্রমাগত আর্সেনিক গ্রহণের ফলে শরীরের ভেতরে তা জমা হতে থাকে। ফুসফুসসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে জমা আর্সেনিকের এ বিষ এক সময় ক্যানসারের সূত্রপাত ঘটায়। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে নলকূপের পানি দূষিত হয়ে পড়ায় দেশের কয়েক কোটি মানুষ ক্যানসারের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাপমাত্রা বাড়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অপ্রত্যাশিত বন্যা এবং তীব্র বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেশের সুপেয় পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। এর ফলে ইতোমধ্যেই ঝুঁকিতে থাকা দেশের জনস্বাস্থ্য সমস্যা আরও জোরালো হবে।

গবেষণা বলছে, দেশের প্রায় ৭.৮ কোটি মানুষ আর্সেনিকের সংস্পর্শে এসেছে। আর কমপক্ষে ৯ লাখ মানুষ ফুসফুস ও মূত্রাশয় ক্যানসারে মারা যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ পরিস্থিতি আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। যেহেতু জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যাবে না, তাই দূরবর্তী ভবিষ্যৎ পর্যন্ত মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব চলতেই থাকবে। দেশে ১৯৭০-এর দশকে পানিতে প্রথম আর্সেনিকের উপস্থিতি মেলে। আর ১৯৯৩ সালে নলকূপের পানিতে দীর্ঘস্থায়ী আর্সেনিক বিষক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে ‘একটি জনপদের ইতিহাসে বৃহত্তম গণ বিষক্রিয়ার’ ঘটনা বলে উল্লেখ করে। এর আগেও বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকসহ একাধিক সংস্থা বেশকিছু উদ্বেগজনক পূর্বাভাস দিয়েছিল। বেশ কয়েক বছর আগে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের পানীয়কে আর্সেনিকমুক্ত করার জন্য মৌলিক ও জরুরি পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় সহায়তার জন্য অধিক কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দেশে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। ভূ-উপরিস্থ জলাধারে ময়লা-আবর্জনা ও রাসায়নিক ক্ষতিকর পদার্থ ফেলা বন্ধের মাধ্যমে দূষণ রোধ করে এর পানি পানযোগ্য করার উপর জোর দিতে হবে।

ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামার কারণ, পরিবেশ বিপর্যয় এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল শারীরতত্ত্ব ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শ্রীপতি সিকদার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভূগর্ভস্থ পানির যে স্তর আছে, সেটি নিচে নেমে যাচ্ছে। কোরণ ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বাড়ছে। যেখান থেকে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হয়, তখন সে জায়গা ফাঁকা হয়ে যায়। আবার যখন ওপর থেকে পানি পড়ে, অর্থাৎ বৃষ্টির পানিতে ফাঁকা জায়গাটা পূরণ হয়ে যায়। এ ব্যবস্থায় যদি অসামঞ্জস্য দেখা দেয়, অর্থাৎ বেশি পানি তোলা হয় আর কম পানি জমা হয়, সে ক্ষেত্রে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। একটা সময় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার এত পরিমাণে ছিল না। সেচকাজের জন্য পানি পাওয়া যেত খাল-বিল আর নদী-নালা থেকে। এখন তা পাওয়া যায় না। কৃষিকাজ বেড়েছে। সেচ ছাড়া কৃষি চিন্তাই করা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিও হয়েছে অনিয়মিত। গাছপালা কমেছে, তাপমাত্রা বেড়েছে। সব ঠিকঠাকমতো না হওয়ায় পানির প্রাপ্যতা কমে গেছে। তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করা জরুরি। কৃষিকাজে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়িয়ে শুধু পানীয় পানি ভূগর্ভ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। খাল-বিল, নদী-নালা, জলাশয়গুলো দখল নয়, বরং সংস্কার করে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। রবি মৌসুমে কৃষিতে শতভাগ সেচ প্রয়োজন হয়। বোরো মৌসুমেও ভূগর্ভস্থ পানির অধিক ব্যবহার হয়। সবচেয়ে ভালো হতো যদি আমন ও আউশ মৌসুমে ধানের আবাদটা বৃদ্ধি করা যেত। কারণ, সে সময় বৃষ্টি থাকে। এ ছাড়া ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের বিষয়ে আইনের বাধ্যবাধকতা জরুরি।

গবেষণা বলছে, এখন থেকে ৫০ বছর আগেও ৪০-৫০ ফুট গভীরতায় পানি পাওয়া যেত। এখন ১৫০-১৬০ ফুট গভীরতায় পানি মিলছে। ১০ বছর পর হয়তো ২০০ ফুট গভীরতায়ও পানি পাওয়া যাবে না। ফলে ভূগর্ভস্থ পানিতে দূষণের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। ভূমিধস দেখা দেবে। উপকূলীয় অঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমতল এলাকায়ও প্রভাব পড়বে। উপকূলীয় অঞ্চলে ভূগর্ভে নোনাপানি ঢুকছে। সেই পানি কৃষিকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সে পানিতে ভারী ধাতুর উপক্রম দেখা দেবে। এতে ফসল, উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। কারণ, সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লবণপানি শরীরে প্রবেশ করলে মানুষ ভীষণভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে। প্রতি বছর ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয়। ১৯৯৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ দিবস উদযাপনের মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী পানি সংকট সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সকলের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ কার্যক্রমকে বেগবান করা। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, সারা দেশে নদ-নদী জালের মতো বিস্তৃত ছিল, যা এখন বিলিনের পথে। মানুষের অত্যাচারে নদীগুলো আজ মৃতপ্রায়। দখল, ভরাট, আর বর্জ্যে নদীগুলো এখন নিস্তব্ধ ¯্রােতহীন এবং দূষণের ভারে পানি ব্যবহারের অযোগ্য এবং জীববৈচিত্র্য শূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীবন-জীবিকা আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা দখল, ভরাট ও দূষণের ভারে বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলছে। যে পানির অপর নাম ছিল জীবন আজ সেই বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যার পানির ওপর নাম বিষ হিসাবে পরিলক্ষিত হয়। যেখানে এখন জলজ ও প্রাণী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এসব কারণে মানুষ ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর হতে বাধ্য হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, ইত্যাদির বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশে ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠেছে। জলবায়ুর প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের একুশ শতাংশের বেশি ভূমি পানির নীচে স্থায়ীভাবে তলিয়ে যাবার আশংকা রয়েছে। ঢাকা ওয়াসাসহ সকল নগরীতে ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নদী বা জলাশয়ের পানি ব্যবহারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে স্বল্প মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদি মাস্টার প্লান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মত দেন তারা।

সূত্র মতে, দেশে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানির চাহিদাও বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে নির্ভর করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর। তবে যথেচ্ছভাবে পানি তোলার জন্য ভবিষ্যতে মানুষকে খেসারত দিতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। এখনই অনেক অঞ্চলের মানুষকে এ কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দিন দিন পানির প্রাপ্যতা কমছে। আবার পানি উত্তোলনে ব্যয়ও বেড়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলে খরা প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। ভূগর্ভস্থ পানির অত্যধিক ব্যবহার এবং ভূগর্ভে পানির প্রবেশ ব্যাহত হওয়ায় পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। অনেক এলাকায় নলকূপে পানি উঠছে না। বিপুলসংখ্যক গভীর নলকূপ দিয়ে মাটির নিচ থেকে দিন-রাত অবিরাম পানি তোলা হচ্ছে। বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর ও খুলনা অঞ্চলে পানির স্তর আশংকাজনকভাবে নামছে। অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলেও স্বাদু বা মিঠা পানির অভাব ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। মানুষ বাধ্য হয়ে ক্ষতিকর পর্যায়ে থাকা নোনা পানি পান করছে। ভূগর্ভেও নোনা পানির অনুপ্রবেশ বাড়ছে। ফসল, উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের ওপর তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লবণ শরীরে প্রবেশ করায় মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, দেশে কৃষিকাজে প্রায় ১৮ লাখ টিউবওয়েল ব্যবহার করা হয়। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও নগরকেন্দ্রিক মানুষের জন্য সারা দেশে প্রায় ১৩ লাখ টিউবওয়েল স্থাপন করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। এর বাইরে যেসব অগভীর নলকূপ ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে ৫৫ শতাংশ অচল (পানি পাওয়া যায় না)। নাসার মতে, পৃথিবীর ৩৭টি বৃহৎ পানির স্তরের মধ্যে ২১টির পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে। এ স্তরগুলোর অবস্থান ভারত ও চীন থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের সীমানার মধ্যে। নাসা ১৩টি পানির স্তরকে আখ্যায়িত করেছে চরম সংকটাপন্ন স্তর হিসাবে, যেগুলো প্রায় শুকিয়ে গেছে। এ স্তরগুলো ব্যবহার উপযোগী করা অর্থাৎ প্রাকৃতিক উপায়ে স্তরগুলো পানিতে পরিপূর্ণ করার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে কয়েকটি বিষয় আলোচনার শীর্ষে অবস্থান করছে তার মধ্যে অন্যতম হলো পানি। এমনকি অনেকে এমনও মনে করেন যে, ভবিষ্যতে যদি কোনো কারণে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয় তার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে পানি। পৃথিবীর স্বাদু পানির প্রায় ৩০% আসে ভূগর্ভস্থ পানি থেকে। তবে আহরণযোগ্য স্বাদু পানির প্রায় ৯৭% আসে ভূগর্ভস্থ পানি থেকে। কিন্তু প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, বিশেষ করে সুপেয় পানি দিন দিন ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে। দেশের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ও তাদের বহুমাত্রিক ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা বাড়ছে প্রতিনিয়তই। সেচব্যবস্থার ৮০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল উল্লেখ্য, ভূগর্ভস্থ পানি হতে প্রতিবছর প্রায় ৩০ দশমিক ২১ ঘন কিলোমিটার পানি উত্তোলন করা হয়। যার মধ্যে প্রায় ৮৬ শতাংশই ব্যবহার করা হয় সেচ কাজে। প্রতি বছর অধিক পরিমাণ উত্তোলনের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খরা মৌসুমে গভীর ও অগভীর নলকূপগুলোতে পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। অত্যাধিক উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামতে থাকলে ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে সুপেয় পানির উৎস। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে কৃষি ও শিল্পখাতে। এছাড়া আশঙ্কা আছে বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের।

জাতিসংঘের চালানো এক সমীক্ষা হতে দেখা যায়, অধিক পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে শীর্ষে থাকা দেশের তালিকায় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ১০টি দেশ স্থান পেয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। পাউবো এবং গবেষকরা বেশ কয়েক দশক পূর্বেই পূর্বাভাস দিয়েছিল ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় শঙ্কার কালোমেঘ হিসেবে প্রতীয়মাণ হচ্ছে সবার মাঝে। রাজধানী ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের পরিসংখ্যান বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালে ঢাকায় পানির স্তর ছিল ২৫ মিটার, যা পরবর্তীতে ২০০৫ সালে ৪৫ মিটার নিচে নামে, ২০১০ সালে ৬০ মিটার ও সর্বশেষ ২০২৩ সালে এসে যা ৭৫ মিটার নিচে নেমে গেছে। ২০৫০ সালের দিকে যা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১২০ মিটারে নেমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

https://www.dailysangram.info/post/548299