১৪ মে ২০১৭, রবিবার, ৯:০১

ছোলা-মাংসের দাম লাগামহীন

রমজান মাসকে সামনে রেখে ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়ছে ইফতারির অন্যতম উপাদান ছোলার। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে দাম হয়েছে ৯০ টাকা। গত মাসেও ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ৭৫ থেকে ৭৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে ভালো মানের ছোলা। দাম কিছুটা বেড়ে গত সপ্তাহে তা ৮০ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হয়। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কিছুদিন ধরে ভালো মানের ছোলার পাইকারি মূল্য কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। সে কারণে তারা খুচরা ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রমজান মাস শুরু হতে আরো ১২ দিন বাকি। প্রতি বছরের মতো এবারও রমজানের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়নি। বাজারে আগের সপ্তাহের তুলনায় আরো বেড়েছে ছোলা-মাংসসহ নিত্যপণ্যের দাম। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মাছ, মুরগি, ছোলা, মাংস, সবজি থেকে শুরু করে চাল-ডাল পর্যন্ত সব ভোগ্যপণ্যের দাম এক দফা বাড়ানো হয়েছিল। বর্তমানে বাজারে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম আরো এক দফা বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি রসুনের দাম বাড়ানো হয়েছে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ছোলা, চিনি, মুরগির দামও প্রতি কেজিতে ১০-১৫ টাকা হারে বাড়ানো হয়েছে। আর চাঁদাবাজি ও হাটে অনিয়ম বন্ধের আন্দোলনের পর দুই দফা বাড়ানো হয়েছে গরুর মাংসের দাম। বৃহস্পতিবার শবেবরাতে চাহিদা বাড়ায় এবং সরবরাহ সংকটের অজুহাতে আরো এক দফা বাড়ানো হয়েছে এর দাম। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজারে দেখা গেছে, মান ভেদে ছোলার দাম ৫-১০ টাকা বেড়ে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খোলা চিনির পাইকারি মূল্য ৫৫-৫৭ টাকা হলেও খুচরা বাজারে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুনের দাম কেজি প্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। দেশি রসুন গত সপ্তাহের মতো ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হলেও ভারতীয় রসুনের দাম ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পিয়াজ পাইকারিতে ২২-২৪ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা; পাইকারিতে ভারতীয় পিয়াজের দাম ১৫-১৬ টাকা হলেও খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। তবে গত সপ্তাহের মতো ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি আদা। এছাড়া দেশি মসুর ডাল ১১০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ৭৫-৯০ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ টাকা।
গত সপ্তাহে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া গরুর মাংসের দাম এবার আরো এক ধাপ বাড়ানো হয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৫০-৬০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শবেবরাতের আগে হঠাৎ মাংসের দাম বাড়ার জন্য ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ এবং দেশি খামারিদের গরু বিক্রি বন্ধ করে দেয়াকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ৫-১০ টাকা বেড়ে বাজারে ১৬৫ টাকা; পাকিস্তানি মুরগি আকার ভেদে ১৩০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইসঙ্গে রাজধানীর বাজারে ডিমের দামও কিছুটা বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগির লাল ডিম প্রতি হালি ২৮ টাকা ও ডজন ৮৫ টাকা; দেশি মুরগির ডিম হালি ৫৫ টাকা ও ডজন ১৬০ টাকা এবং হাঁসের ডিম হালি ৪০ টাকা ও ডজন ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রমজান মাসকে সামনে রেখে আগামী ১৫ই মে থেকে রাজধানীর ৩০টিসহ সারা দেশের ১৮৫টি নির্ধারিত স্থানে ৫টি পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি। টিসিবি’র বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, চিনি কেজি প্রতি ৫৫ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা, মসুর ডাল ৮০ টাকা, খেজুর ১২০ টাকা এবং সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ৮৫ টাকায় বিক্রি হবে।
এদিকে শুক্রবার ভোলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, আসন্ন রমাজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে বাজারে কারসাজি অথবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমানে দেশে ছোলা, ডাল, চিনি, পিয়াজ ও রসুন চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি মজুত রয়েছে, তাই রমজান মাসে এসব পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে। কোনো জিনিসের দাম বাড়বে না। কিন্তু কেউ যদি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি কিংবা কারসাজি করার চেষ্টা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=65326