৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবার, ৭:০৭

টাকার সঙ্কটে চাপে ব্যাংক

দুই দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক ধার দিলো ৪০ হাজার কোটি টাকা

নীতি সুদহার বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেড়ে যায় ব্যাংক ঋণের সুদহার। উদ্দেশ্য ছিল ব্যাংকিং খাতে তারল্যের চাপ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। কিন্তু এসব পদক্ষেপে নগদ টাকার সঙ্কট কোনোভাবেই কাটানো যাচ্ছে না। বরং দিন দিন তা বেড়ে যাচ্ছে। আর এ সঙ্কট মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতিনিয়তই টাকার জোগান দিয়ে আসছে। গত সোমবার বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে ২১ হাজার ১০১ কোটি টাকা ধার দিয়েছিল। আর গতকাল মঙ্গলবার ধার দেয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তবে, গতকাল ইসলামী ব্যাংকগুলোকে কোনো প্রকার ধার দেয়া হয়নি। সবমিলে দুই দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার তারল্যের জোগান দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো তখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে টাকার জন্য দারস্থ হয়, যখন তাদের নিজস্ব প্রয়োজন বা চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ হাতে থাকে না। তবে ব্যাংকগুলো চাইলেই টাকার জোগান দেয়া হয় না। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণা করে মূলত মুদ্রাবাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। আর বাজারে যখন টাকার প্রবাহ বেড়ে যায়, তখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজার থেকে রিভার্স রেপোর মাধ্যমে টাকা তুলে নিয়ে থাকে। বাড়িয়ে দেয়া হয় নীতিনির্ধারণী সুদহার। আবার মূল্যস্ফীতি যখন নিম্নমুখী থাকে আর ব্যাংকে টাকার সঙ্কট থাকে তখন রেপো, বিশেষ রেপো ও তারল্য সহায়তার আওতায় বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়ানো হয়। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য ইতোমধ্যে নীতিনির্ধারণী সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বিপরীতভাবে চলমান টাকার সঙ্কট মেটানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে রেপো, বিশেষ রেপোসহ বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে টাকার জোগান দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি স্ববিরোধী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে ২১ হাজার ১০১ কোটি টাকা ধার দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রেপোর মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা, অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট সুবিধার (এএলএস) আওতায় ১৬টি পিডি ব্যাংককে ৫ হাজার ৮২২ কোটি টাকা এবং তিনটি ইসলামী ব্যাংককে ১৪দিন মেয়াদি ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি সুবিধার আওতায় ৮২০ কোটি টাকার জোগান দেয়া হয়েছে। অপর দিকে, গতকাল মঙ্গলবার রেপোর মাধ্যমে ১৩ হাজার কোটি টাকা, এএলএসের মাধ্যমে ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকার জোগান দেয়া হয়েছে। তবে, গতকাল ইসলামী ব্যাংকগুলোকে কোনো সাপোর্ট দেয়া হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, মুদ্রানীতি অনুযায়ী যত দিন ব্যাংকগুলোকে সাপোর্ট দেয়া যায় তত দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সাপোর্ট দেয়া হবে। তিনি জানান, ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিচ্ছে সাড়ে ৭ থেকে ৮ শতাংশ সুদ বা মুনাফার ভিত্তিতে। কিন্তু এসব অর্থ ঋণ দেয়া হচ্ছে ১১ শতাংশ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ সুদ বা মুনাফার ভিত্তিতে। সুতরাং ব্যাংকগুলো লাভবান হচ্ছে। তবে, এটা দীর্ঘ দিন হলে সমস্যা হয়। মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ওই সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কট মূলত প্রধান তিনটি কারণে। প্রথমটি হলো, ইতোমধ্যে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে তার বড় একটি অংশ ফেরত আসছে না। এতে খেলাপি ঋণ ব্যাপকভিত্তিতে বেড়ে গেছে। আর এ খেলাপি ঋণ কমাতে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা জোগানোর পাশাপাশি সরকারি কেনাকাটার তহবিল জোগান দেয়ার জন্য রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়তই সরকারি ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কেনা হচ্ছে টাকার বিপরীতে। এতে ব্যাংকের টাকা চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে। তৃতীয় কারণ হলো, এক শ্রেণীর ব্যাংক বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আগে যেখানে অলস টাকা থাকতো। এখন কিছু ব্যাংকের টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সবমিলেই বাজারে তারল্য সঙ্কট বেড়ে গেছে। এ সঙ্কট মেটানোর জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তহবিল জোগান দেয়া হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/812201