৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবার, ৭:০৬

১১ মাস ধরেই কানাডার তৈরি ড্যাশ-৮ গ্রাউন্ডেড

৭ রুটে ফ্লাইট চালাতে হিমশিম

 

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে থাকা কানাডার বোম্বাডিয়ার কোম্পানির পাঁচটি ড্যাশ-৮ এর মধ্য একটি প্রায় ১১ মাস ধরে হ্যাংগারে পড়ে আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই এয়ারক্রাফটটি আদৌ সচল করা হবে কিনা সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। শুধু এটি নয়, গত কয়েক দিন ধরে আরো একটি ড্যাশ-৮ টেকনিক্যাল হয়ে হ্যাংগারে রয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ সাত রুটে মাত্র তিনটি উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট চালাতে সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বিমানের বলাকা ভবন ও টার্মিনাল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ কানাডার বোম্বাডিয়ার কোম্পানি থেকে ৭৪ সিটের অত্যাধুনিক ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ নিয়ে আসে। উদ্দেশ্য দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীদের উন্নত মানের সেবা নিশ্চিত করা। কিন্তু নিজস্ব টাকায় কেনা উড়োজাহাজগুলো আনার পর শুরুতে যাত্রীদের ভালো ও মানসম্পন্ন সেবা দেয়া হচ্ছিল। এর কিছু দিন না যেতেই অভ্যন্তরীণ সাত রুটে শুরু হয় চরম যাত্রী ভোগান্তি। কখনো যান্ত্রিক ত্রুটি, কখনো পাইলট সঙ্কট, আবার কখনো যাত্রীর অভাবে ফ্লাইট বাতিলের ঘটনাও ঘটে। এর মধ্যে এয়ারক্রাফট বসে যাওয়া ছাড়া আরো নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে অভ্যন্তরীণ রুটে।

এসব সমস্যার মধ্যে গত বছরের মার্চ মাসে একটি ড্যাশ-৮ (এজেডব্লিও) টেকনিক্যাল হয়। এর পর থেকে অদ্যাবধি ওই এয়ারক্রাফটটি টেকনিক্যাল হয়েই ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হ্যাংগারে পড়ে রয়েছে বলে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে কেন এটি হ্যাংগারে পড়ে আছে, কেন এটিকে সচল করা হচ্ছে না এ নিয়েও রয়েছে নানা খবর!

গতকাল বিমানবন্দর টার্মিনালের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তারা নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের বিমানের বহরে পাঁচটি ড্যাশ-৮ থাকলেও ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকেই একটি উড়োজাহাজ টেকনিক্যাল হয়ে পড়ে আছে। কী প্রবলেম আছে তা জানেন না জানিয়ে তারা বলেন, আমরা দেখছি সচল ড্যাশ-৮ এর কোনোটিতে সমস্যা হলে তখন হ্যাংগারে থাকা ওই এয়ারক্রাফট থেকে যন্ত্রাংশ খুলে লাগানো হচ্ছে। যন্ত্রাংশ খুলতে খুলতে এখন শুধু বডি পড়ে আছে। এটা নিয়ে কী হবে তাতো আমাদের কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। প্রতিটি এয়ারক্রাফট বিমানের নিজস্ব বলে জানান তারা। তারা বলেন, এই এয়ারক্রাফটের সাথে গত এক সপ্তাহ ধরে আরো একটি ড্যাশ-৮ (একেই) হ্যাংগারে রয়েছে। এই এয়ারক্রাফটের নাম্বার ওয়ান ইঞ্জিন পরিবর্তনের জন্য হ্যাংগারে নেয়া হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে তিনটি এয়ারক্রাফট দিয়ে বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী, সিলেট, সৈয়দপুর ও যশোর রুটে ফ্লাইট শিডিউল ঠিক রাখতে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জিএম (জনসংযোগ কর্মকর্তা) তাহেরা খন্দকার এর সাথে যোগাযোগ করে ১১ মাস ধরে এয়ারক্রাফট (ড্যাশ-৮) হ্যাংগারে পড়ে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে লিখিতভাবে জানতে চাইলে তিনি প্রকৌশল শাখায় জেনে জানাতে পারবেন বলে জানান। এরপর তিনি এ বিষয়ে এমডি সাহেবের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। এরপরই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিমের সাথে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।

এর আগে বিমানের প্লানিং বিভাগের একজন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে একজন পাইলট নয়া দিগন্তকে জানিয়েছিলেন, এই এয়ারক্রাফট নিয়ে কী হচ্ছে তা আমরা জানতে পারছি না। এটা নিয়ে বিমান পরিচালনা পর্ষদেও আলোচনা হয়েছে। এরপর আবার বিয়টি চাপা পড়ে যায়।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/812204