৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবার, ৬:৫৭

সীমান্তে নিরাপত্তা সঙ্কটের শঙ্কা

- দু’দিনের জন্য ঢাকা ঘুরে গেলেন অজিত দোভাল
- পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দিল্লি আলোচনায় থাকবে মিয়ানমার প্রসঙ্গ
- বাংলাদেশে ঢুকেছে ২৬৪ জান্তা সেনা
- অনিরাপদ সীমান্তের লাখ লাখ মানুষ

অস্ত্র গোলাবারুদ রেখে পালাচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী। বেশির ভাগই জীবন বাঁচাতে দিশা হারিয়ে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত জান্তা সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর অন্তত ২৬৪ জন সদস্য বাংলাদেশে ঢুকেছে। অপর প্রতিবেশী দেশ ভারতেও অনেক সদস্য আশ্রয় নিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বিদ্রোহীদের দমন করতে বিমান হামলা শুরু করেছে। গতকাল বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধবিমানের মহড়া লক্ষ করা গেছে। কোথাও কোথাও সীমান্তের এপারে ঢুকে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ বিজিপি বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে নিরাপত্তা সঙ্কট সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সামরিক জান্তার ছোড়া মর্টার শেল গতকালও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আছড়ে পড়ে ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। মিয়ানমারে তুমুল সংঘর্ষের ঘটনায় সীমান্তঘেঁষা বাংলাদেশীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করলেও এখনো লাখ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘরেই অবস্থান করছেন। কোন কোন এলাকায় সরকারিভাবে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও স্থানীয় বাসিন্দারা তা মানছেন না।

এদিকে, মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলাকালীন ঢাকায় দু’দিনের সফর করে গেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এমনই খবর দিয়েছে।

কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানান, তিন দিনের সফরে দিল্লি গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এই সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাথে তার বৈঠক হবে। বৈঠকগুলোতে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুসহ বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সশস্ত্র সঙ্ঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট উত্তেজনার বিস্তার নিয়ে আলোচনা হবে।

এ ব্যাপারে গতকাল সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশ- উভয়ের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার। মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা সব সময় ভারতের সহযোগিতা চেয়ে আসছি। বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবেই আলোচিত হবে।

আওয়ামী লীগ সরকার টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের এটিই প্রথম দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফর। এর আগে তার দু’টি বিদেশ সফর ছিল বহুপক্ষীয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পরই তিনি প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের আমন্ত্রণে গতকাল মঙ্গলবার রাতে তিনি দিল্লি গেছেন।

শেখ হাসিনা-অজিত দোভাল আলাপ : মিয়ানমারে উদ্ভূত সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা হয়েছে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। এতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে ঢাকা সফরে গিয়েছিলেন দোভাল। এ সময় মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে শেখ হাসিনার সাথে তার আলোচনা হয়।

প্রসঙ্গত, আরাকান আর্মিসহ বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের সাথে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে। গ্রুপগুলোর সমন্বিত আক্রমণে টিকতে না পেরে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অনেক সময় ভারত ও বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। ইতঃপূর্বে ভারতে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের একটি অংশকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশও একই প্রক্রিয়া অনুসরণের জন্য মিয়ানমার জান্তা সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা করছে।

আমাদের উখিয়া সংবাদদাতা হুমায়ুন কবির জুশান জানিয়েছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৬৪ জন সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: শরীফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের ২৬৪ জন সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বিজিবি তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আশ্রয় নেয়া বিজিপির সদস্য সংখ্যা ছিল ১১৩। পরে আরো দু’জনকে রিসিভ করলে সে সংখ্যা হয় ১১৫। এরপর একসাথে আরো ১১৪ জন প্রবেশ করেন। এরই কিছুক্ষণ পর ৩৫ জন প্রবেশ করেন। দুপুর পর্যন্ত মোট ২৬৪ জন আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাদেরকে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী রহমতের বিল এলাকার একটি বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে।

আশ্রয় নেয়া বিজিপি সদস্যের মধ্যে ১৫ জনের বেশি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে পাঁচজন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সোমবার রাতে অপর চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলা পড়ল ঘুমধুম সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের সময় ঘুমধুম এলাকার এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির পাশে আবারো মর্টার শেল এসে পড়ে। মর্টার শেলের আঘাতে ভেঙে গেছে জানালার কাচ। মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতের জেরে সীমান্তে বিরতিহীনভাবে ভেসে আসছে ভারী গোলার শব্দ। তুমব্রু, ঘুমধুম পার হয়ে এবার উখিয়ার নয়াপাড়া সীমান্তে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মাঝে। স্থানীয়রা জানান, দিবা-রাত্রি আমাদের চোখে মুখে ঘুম হারাম হয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকালে সীমান্তের দু’পক্ষে ব্যাপক গোলাগুলি ঘটেছে। তুমব্রু সীমান্তে ঘেঁষা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির রাইট ক্যাম্প দখলে নিয়ে পতাকা উড়ছে। কিন্তু সকাল থেকে এখনো থেমে থেমে গুলিবর্ষণ হচ্ছে। যার কারণে সীমান্তের বসবাসরত স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে ঘর ছাড়ছেন বলে জানা গেছে।

মিয়ানমারের ছোড়া গোলায় আরেক বাংলাদেশী যুবক আহত : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলায় আরো একজন বাংলাদেশী যুবক আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের পশ্চিমকুল পাহাড়পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত সৈয়দ আলম ওই এলাকার কাদের হোসেনের ছেলে।

এর আগে গত সোমবার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জলপাইতলি এলাকায় এক বাংলাদেশী নারীসহ দু’জন নিহত হন। এসময় আরো অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন।

এদিকে, বিজিবির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর আজ বুধবার সীমান্ত পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে।

উখিয়া সীমান্তে ঢুকে যুদ্ধ করছে বিজিপি : আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী জমিদার পাড়ায় ঢুকে তুমুল যুদ্ধ করছে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও আরাকান আর্মির সদস্যরা। গোলাগুলির বিকট শব্দের আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সীমান্ত এলাকার স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে সীমান্ত এলাকায়। বালুখালী জমিদার পাড়ায় সাবেক ইউপি সদস্য প্রয়াত ইসলাম খানের বাড়ি। মিয়ানমারের সীমান্ত লাগোয়া এই বাড়ির টিনের বেড়ার পাশে গুলি থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই বাড়ির পূর্বদিকে আধা কিলোমিটার মাঠ। তারপর নাফ নদীর বেড়িবাঁধ। তার ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া চেক পোস্ট। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বালুখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বালুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গোলাগুলির কারণে স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই এলাকার সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। তবে এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তারা। বিজিপি প্রবেশ থামছেই না। নাইক্ষ্যংছড়ির ওপারে মিয়ানমারের তুমব্রু ঘাঁটি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর ঢেঁকিবনিয়া সীমান্ত চৌকি দখলে নিতে চার দিন ধরে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা। এতে কেঁপে কেঁপে উঠছে জলপাইতলি, জমিদারপাড়াসহ অন্তত তেরোটি গ্রাম। মর্টার শেল ও গুলি এসে পড়েছে বাংলাদেশে।

সীমান্তে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ : সীমান্তবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, বান্দরবন জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন, কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন থেকে শুরু করে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় এমন শব্দ শুনা যাচ্ছে। এসব এলাকায় অন্তত এক লাখের বেশি বাসিন্দা রয়েছে, যারা ঝুঁকিপূর্ণ।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান জানিয়েছেন, মিয়ানমারে সঙ্ঘাত বেড়েছে। মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি, মর্টার শেল এসে পড়ছে সীমান্তের এপারে বসতঘরে। এর প্রেক্ষিতে সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত কাউকে সরানো হয়নি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তেজনাকর। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রাথমিক অবস্থায় ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের মানুষকে নিরাপদে আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কাজ করছেন। তিনি জানান, উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে। লোকজনকে আনতে স্থানীয় চেয়ারম্যান সহযোগিতা করছেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ২৪০ পরিবারকে নিরাপদে আশ্রয় নিতে নির্দেশ : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ২৪০ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)। মঙ্গলবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন এ নির্দেশ দেন।

ডিসি বলেন, বান্দরবান-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান পরিস্থিতির কারণে ছাত্রছাত্রী ও সীমান্তে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী ২৪০ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একইসাথে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সীমান্তবর্তী স্কুলগুলো বন্ধ ও সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এদিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলায় নাইক্ষ্যংছড়িতে সৈয়দ আলম (৩৮) নামের আরো এক বাংলাদেশী যুবক আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের পশ্চিমকুল পাহাড়পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সৈয়দ আলম ওই এলাকার কাদের হোসেনের ছেলে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আনোয়ার হোসেন বলেন, গত রাত থেকে উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয়দের আশ্রয় দেয়া হচ্ছে। আহতের বিষয়টি শুনেছি। বিস্তারিত পরে জানা যাবে। গোলা সীমান্ত অতিক্রম করে এসে পড়ছে বাংলাদেশের ঘুমধুম এলাকার বিভিন্ন লোকালয়ে।

গত সোমবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জলপাইতলি এলাকায় এক বাংলাদেশী নারীসহ দু’জন নিহত ও আহত হয়েছে অন্তত তিনজন। বিদ্রোহীদের কাছে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা।

কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি শুরু করেছেন। উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের মধ্যে মিয়ানমারের মগ, সেনাবাহিনী ও সেখানকার সীমান্তরক্ষীর (বিজিপি) প্রতি ঘৃণাভাব রয়েছে। রোহিঙ্গা যুবক আব্দুল কাদের বলেন, যারা আমাদের চরমভাবে নির্যাতন করে এই দেশে পাঠিয়েছে তারাই আজ আহত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে ঠিকই আমাদের মতো এ দেশে আশ্রয় নিয়েছে। ইয়াছিন ও ইদ্রিস বলেন, এখানকার বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত মানবিক।

মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী স্কুলে বিমান হামলা চালাল, নিহত ৪ শিশু : স্কুলে বিমান হামলা চালিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী। এতে কমপক্ষে চার শিশু নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ১০ জনেরও বেশি মানুষ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির কারেনি (কায়া) প্রদেশের একটি স্কুলে এই হামলা ও হতাহতের ঘটনা ঘটে।

গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার কারেনি (কায়া) প্রদেশের ডেমোসো টাউনশিপের একটি স্কুলে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে বোমা হামলা চালায়। এই হামলায় অন্তত চার শিশু নিহত ও আরো ১০ জনের বেশি আহত হয়েছে।

ডেমোসো শহরের একজন স্বেচ্ছাসেবক ইরাবতিকে জানিয়েছেন, সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে সেখানকার ডাউসিই গ্রামের স্কুলে দু’টি যুদ্ধবিমান থেকে বোমাবর্ষণ এবং মেশিনগান থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়।

কারেনি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, জান্তা বাহিনী গত বছর কারেনি প্রদেশে ১৬০টিরও বেশি আর্টিলারি স্ট্রাইক এবং ৭৬টি বিমান হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় ১৮০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত এবং আরো ১৪০ জন আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে অ্যাডভোকেসি গ্রুপ প্রগ্রেসিভ কারেনি পিপল অনুসারে, এই বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় ৪৬টি ধর্মীয় ভবন, ২২টি স্কুল, ১৪টি হাসপাতাল এবং দুই হাজার ২৮১টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।

সীমান্তের ৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ : এদিকে সীমান্তের উত্তেজনার কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিবেচনায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম সীমান্তে থাকা প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/812213