৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ৩:১২

গবেষণার তথ্য: মার্চে ঢাকায় মশার উপদ্রব চরমে পৌঁছার শঙ্কা

রাজধানীতে গত চার মাসে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে তিন শর বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ফাঁদে ধরা পড়েছে। এর আগে গত অক্টোবর ও নভেম্বরে এ সংখ্যা ছিল দুই শর কম। এ ধারা চলতে থাকলে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত তা বেড়ে চরমে পৌঁছতে পারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. কবিরুল বাশার।

ফাঁদে যত মশা ধরা পড়ে তার সংখ্যা দিয়ে মশার ঘনত্ব নির্ণয় এবং তুলনামূলক চিত্র জানতে এই গবেষণা পরিচালনা করেন বলেও জানান ড. কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, ৯৯ শতাংশ কিউলেক্স মশা ধরা পড়ছে।

বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।
কবিরুল বাশার বলেন, জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ মশা ফাঁদে পড়েছে। রাজধানীর চার এলাকার পাঁচ স্থানের মধ্যে উত্তরায় মশা সবচেয়ে বেশি। জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ মশা ফাঁদে ধরা পড়েছে।

এর আগের মাস গত ডিসেম্বরে একই ফাঁদে মশার সংখ্যা ছিল ৩০০। এতসংখ্যক মশা নগরের কোথাও দেখা যায়নি। উত্তরার পর সবচেয়ে বেশি দক্ষিণখানে ৪১০ ও মিরপুরে সাড়ে তিন শর মতো পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে।

ড. কবিরুল বাশার বলেন, ঢাকা দক্ষিণে উত্তরের তুলনায় জলাশয় কম থাকায় কিউলেক্স মশা কিছুটা কম। গবেষণায় দেখা গেছে, রায়েরবাগ এলাকায় দিনে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন শর মতো, এরপর যাত্রাবাড়ীর দনিয়া এলাকায় দুই শর মতো মশা ধরা পড়ে।

বাংলাদেশের কিছু জায়গায় কিউলেক্স মশা ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ ছড়ানোর প্রমাণ থাকলেও ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় এই রোগের সংক্রমণের তথ্য নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছর এ সময় অনেক দিন বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে ডোবা, নালা-নর্দমার পানির ঘনত্ব বাড়ে। এতে পানিতে জৈব উপাদানের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কিউলেক্স মশা প্রচুর খাদ্য পায়। এতে বংশ বিস্তার বেড়ে যায়।

কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে অভিযান
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের হিসাব মতে, কিউলেক্স মশা ফেব্রুয়ারি-মার্চে বেড়ে যাবে। মশার এই উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশন তার কর্মপরিকল্পনা-২০২৪ প্রণয়ন করেছে এবং বিশেষ কিছু কাজ শুরু হয়েছে।’

ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ডিএনসিসিতে পাঁচজন কীটতত্ত্ববিদকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে। খাল উদ্ধার করার পাশাপাশি আবর্জনাভরা শত শত বিঘা জলাশয়ের কচুরিপানা গত জানুয়ারিতে পরিষ্কার করা হয়েছে। মশা নিধনে যেসব ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর কার্যকারিতা নতুন করে দেখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, মশা নিধনকর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং তাঁদের উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করতে ‘হাজিরা অ্যাপস’ তৈরি করা হয়েছে। ড্রোন ব্যবহার করে মশার হটস্পট নির্ধারণ ও অ্যাপসভিত্তিক হটস্পট রিপোর্টিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে নগরবাসী, জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের রেখে কমিটি গঠনের মাধ্যমে গণসচেতনা সৃষ্টি ও সম্পৃক্ত করা, বিনা মূল্যে ডেঙ্গু রোগী শনাক্তকরণ, মনিটরিং, নিজস্ব ব্যবস্থায় নিয়মিত জরিপ পরিচালনা ইত্যাদি কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। অন্যান্য পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে মশা শনাক্তকরণে একটি ল্যাব ও মশক নিধনে আরো আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রাদি সংযোজন করা।

দক্ষিণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, এবার মশার উপদ্রব কম। অন্যান্য বছর এই সময়ে মানুষ মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে যেত। এবার এখনো কোনো এলাকা থেকে একটি অভিযোগও আসেনি। অর্থাৎ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছি।

ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, যে চার এলাকায় কিউলেক্স মশার উপদ্রব বেশি বলা হচ্ছে, এর মধ্যে একটি ঢাকা দক্ষিণের। সেখানে মশার ঘনত্ব খুব বেশি নয়। কীটতত্ত্ববিদের রিপোর্ট প্রমাণ করে দক্ষিণে পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে।

তিনি বলেন, ‘কিউলেক্স মশা বিস্তারের প্রধান আশ্রয় রাজধানীর খালগুলো। আদি বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত পরিষ্কার হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে খাল ও জলাশয় পরিষ্কার খুব ভালো হয়েছে। শুরু থেকে মশা নিধন কার্যক্রম থাকায় কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে। যদিও আমরা কিউলেক্স মশার পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।’

https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/02/03/1360330