৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ৩:০৮

বাসা-বাড়ির ময়লা যাচ্ছে খালে

রাজধানী ঢাকার খালগুলো দিন দিন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। সংস্কারের পর রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনার কারণে ফের ভরাট হয়ে পড়ে খাল। আর অনেক জায়গায় সেই সুযোগ কাজে লাগায় অবৈধ দখলদাররা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা গেছে, খালের পাড়ে ময়লা ফেলা রোধে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে যাতে খালগুলো পরিষ্কার করার পর আর কেউ ময়লা ফেলতে না পারে। পর্যায়ক্রমে একের পর এক অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। ইতোমধ্যে লাউতলা খাল ও রামচন্দ্রপুর খাল উদ্ধার করা হয়েছে। সূতিভোলা খাল উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারের পর খালগুলো সংস্কার করা হবে। খাল উদ্ধারের পর খালের পাশে ওয়াকওয়ে করা হবে, সাইকেল লেন করা হবে। স্থায়ীভাবে এসবের সমাধান করা হবে। খাল পরিষ্কার থাকলে রোগবালাই কম হবে। মশার প্রজনন কমে যাবে। দুর্গন্ধ থাকবে না।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী মিরপুর প্যারিস খাল পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এই কাজে সহযোগিতা করতে যুক্ত হয়েছেন বিডি ক্লিনের ১২শ’ স্বেচ্ছাসেবী। গতকাল শুক্রবার মিরপুর প্যারিস খালে এই কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে প্যারিস রোড সংলগ্ন মাঠে বিডি ক্লিনের স্বেচ্ছাসেবীদের দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার শপথ বাক্য পাঠ করান মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। মেয়র বলেন, একসময় মিরপুর প্যারিস খাল দিয়ে লঞ্চ চলতো। আর আজ সেই খাল ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ময়লার কারণে এই খালে কোন পানি নেই বরং খালের উপর দিয়ে হাটা যায়। আমি নিজে জনগণের জন্য খাল পরিষ্কারে অংশ নিয়েছি। এলাকাবাসীর লজ্জা হওয়া দরকার তারা এই খালটিকে ময়লা ফেলে, দখল করে গলা টিপে হত্যা করেছে। স্বেচ্ছাসেবীরা আজ ছুটির দিনে স্বতস্ফূর্তভাবে খাল পরিষ্কারের জন্য ছুটে এসেছে। অথচ এই ছেলেমেয়েদের আজকে মাঠে খেলাধুলা করা কথা ছিল, বাসায় বিশ্রাম করা কথা ছিল। কিন্তু তারা খেলা, বিশ্রাম বাদ দিয়ে খাল পরিষ্কারে অংশ নিয়েছে। এলাকাবাসীকে আহবান করছি এর থেকে শিক্ষা নিয়ে খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করুন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার খাল ভরাট ও বেদখলের ফলে পানিবদ্ধতা এবং পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। তা ছাড়া যানজট নিরসনে নৌ-রুট প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনাও ভেস্তে যাচ্ছে। ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে নেয়ার পর সিটি করপোরেশন নিজস্ব ফান্ড থেকে অনেক খাল পরিষ্কার করে। কিন্তু সেসব খাল আবারও ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার খালগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্য্যবর্ধনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। এরই মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কয়েকটি খাল সংস্কার এবং নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) এলাকার খাল পরিস্কারের কজে হাত দিয়েছে।

জানা গেছে, রাজধানীর অনেক খাল ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। কাগজে-কলমে যেসব খাল রয়েছে সেগুলোও দখল ও দূষণে হারিয়ে যেতে বসেছে। খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। রাজধানীর নন্দীপাড়া খালসহ অনেক খালেই ময়লা ফেলা হচ্ছে। এসব খালে আশপাশের বাসাবাড়ির সব পয়ঃবর্জ্য গিয়ে পড়ছে। বাসাবো এলাকায় এ খালের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও খিলগাঁও অংশে তা বিলীন হয়ে গেছে।

রামপুরা খালে অবৈধ দখল তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও দূষণের ফলে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। খালটির মেরাদিয়া বাজার অংশে বিশাল ময়লার ভাগাড় রয়েছে। ওখানে ময়লা ফেলার সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস)। এ এসটিএসের সামনে খালের পাড়ে বনশ্রী ও দক্ষিণ বনশ্রীর বাসাবাড়ির ময়লা ফেলা হয়। কিছু ময়লা ল্যান্ডফিল্ডে নিলেও অধিকাংশ খালে পড়ে।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খাইরুল বাকের ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্প পাশ হওয়ার আগে থেকেই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে খাল পুনরুদ্ধার কাজ করছি। ওয়াসার কাছ থেকে খালের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে আমরা খালের ময়লা অপসারণের কাজ চলমান রেখেছি। অবৈধ দখল হয়ে যাওয়া খালের অংশ পুনরুদ্ধার করছি। খাল উদ্ধার করে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।

খালের পাড়ে ময়লা ফেলা রোধে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। খাল দূষণকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমরা খালগুলো পরিষ্কার করার পর আর কেউ ময়লা ফেলতে পারবেন না। খালের পাড়ে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দেব। খালে ময়লা ফেললেই নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। দখলদাররা নিজ দায়িত্বে খাল দখলমুক্ত করে দেবেন। আমরা যখন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করব, তখন কিন্তু আর সময় পাবেন না।

আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে একের পর এক অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। এর আগে আমরা লাউতলা খাল ও রামচন্দ্রপুর খাল উদ্ধার করেছি। দীর্ঘ ৪০ বছর পর সূতিভোলা খাল উদ্ধার করেছি। গত সপ্তাহে মোহাম্মদপুরে জাকের ডেইরি ফার্মের অবৈধ দখল থেকে ডিএনসিসির জমি উদ্ধার করেছি। নগরের অন্যান্য খালগুলো যেভাবে সংস্কার করা হয়েছে, এখানেও তাই করা হবে।
তিনি বলেন, ঢাকার যেসব খাল এভাবে দখল করা হয়েছিল, সবগুলোই কিন্তু ধীরে ধীরে আমরা উদ্ধার করেছি। খাল উদ্ধারের পর খালের পাশে ওয়াকওয়ে করা হবে, সাইকেল লেন করা হবে। স্থায়ীভাবে এসবের সমাধান করা হবে। মেয়র বলেন, খাল পরিষ্কার থাকলে রোগবালাই কম হবে। মশার প্রজনন কমে যাবে। দুর্গন্ধ থাকবে না। আপনারাই ভালো থাকবেন। উন্নত দেশে খাল সামনে রেখে বাড়ি নির্মাণ করা হয়। আর আমাদের দেশের উল্টো চিত্র। আমাদের দেশে সবাই খাল পেছনে রেখে বাড়ি নির্মাণ করি। পরে বাড়ির পেছনে খালকে ময়লার ভাগাড় হিসেবে ব্যবহার করি। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিদর্শনে এসে দেখলাম খালে অনেক বাঁশের সাঁকো, বিদ্যুতের সংযোগ ও সুয়ারেজের সংযোগ। সবাইকে অনুরোধ করছি এগুলো দ্রুত সরিয়ে নেবেন, নইলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

https://dailyinqilab.com/national/article/636032