৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ৩:০০

রেমিট্যান্স বাড়লেও কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ

রিজার্ভ আবারো নামল ১৯ বিলিয়নের ঘরে

জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের এই সময়ের চেয়ে শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি। গত বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ চলতি অর্থবছরের একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ। তবে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়লেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়েনি। বরং আবারো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ বিলিয়নের ঘরে নেমে গেছে। গতকাল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের জন্য ডলারের দর ঠিক করা আছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংক এ দর মানছে না। ক্ষেত্রবিশেষ প্রতি ডলার ১২২ টাকা থেকে ১২৪ টাকা দরে রেমিট্যান্স আহরণ করছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে তেমন চাপ প্রয়োগ করছেন না। ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার দায় বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ না বেড়ে বরং কমে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই সরকারের বিভিন্ন বৈদেশিক দায় মেটানোর জন্য সরকারি ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। যার প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়ছে না। বরং তা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এক সময় বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৪৮ বিলিয়ন ডলার উঠেছিল। এখন তা ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেছে।

এ দিকে দেশে দীর্ঘ দিন ধরে চলছে ডলারের সঙ্কট। এ সঙ্কট উত্তরণের অন্যতম উপায় রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ানো। কিন্তু সেখানে ভালো খবর নেই। অন্য দিকে আমদানির চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ দিন দিন কমছে। তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বছরের শুরুতে দেশে গ্রস রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৭০০ কোটি ডলার। ৩১ জানুয়ারি গ্রস রিজার্ভ ২৫.০৯ বিলিয়ন ডলারে এসেছে। অর্থাৎ এক মাসে রিজার্ভ কমেছে ১৯১ কোটি ডলার। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী বিপিএম-৬ ম্যাথডের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবের সাথে ৫.১৫ বিলিয়ন ডলারের পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ বর্তমানে ১৯.৯৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৯.৭৩ বিলিয়ন ডলার আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী ছিল ২৩.৩৭ বিলিয়ন ডলার। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসেব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেয়া হয়, প্রকাশ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসেবে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে। প্রতি মাসে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার করে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো কষ্টসাধ্য হবে বাংলাদেশের জন্য। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে।

এ দিকে বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭.৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সময়ে বাণিজ্যিক কিছু ব্যাংক থেকে এক বিলিয়ন ডলারের মতো কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক, যার পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারের মতো। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল। তার আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) ডলার বিক্রি করেছিল ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/810965