২৬ জানুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ৪:০৮

উগ্রবাদী রাজনীতির স্বরূপ

-ড. আবদুল লতিফ মাসুম

বাংলা সাহিত্যে একটি পুরোনো প্রবাদ এরকম, ‘রামের জন্মভূমি অযোধ্যার চেয়েও সত্য যেন’। এর মর্মার্থ হলো রামের জন্মভূমির ধারণা, ঐতিহাসিক সত্য এবং বাস্তবতার চেয়েও আবেগায়িত বিশ্বাস অধিকতর ক্রিয়াশীল। সত্য যাই হোক না কেন, তোমাকে বিশ্বাস করতেই হবে যে রামের জন্মভূমি অযোধ্যা। এই বিশ্বাসকে ধারণ করে বিষবৃক্ষের রোপণ হয়েছে অনেক অনেক আগে। মূলত ভারত বিভাজনের পর ১৯৪৭ সালের পরবর্তী পর্যায়ে হিন্দুত্ববাদীরা এইমর্মে প্রচার করছিল যে, মোগল সা¤্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বিজয়ের প্রতীক হিসেবে অযোধ্যায় যে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মূলত তা ছিল প্রাচীন মন্দিরকে ধ্বংস করে। যে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিলো তার নাম হয়ে যায় বাবরের নামে ‘বাবরি মসজিদ’। ৭১২ খ্রীষ্টাব্দে মোহাম্মদ বিন কাসিম কর্তৃক সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমে ভারতে মুসলমানদের পদচারণা শুরু হয়। মূলত ১১৭৩ খ্রীষ্টাব্দের দিকে শিহাব উদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী কর্তৃক ভারতে মুসলিম সালতানাতের ভিত্তি স্থাপিত হয়। সেই সময়কাল থেকে খুব সঙ্গতভাবেই ভারতের হিন্দু রাজ-রাজরা মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে আসছিলো। রামমন্দিরের স্থলে বাবরি মসজিদ নির্মাণের অভিযোগ এরকমই একটি বিদ্বেষ প্রসূত প্রচারণা। ১৮৮৫ সালে প্রথম মসজিদ ভবনের বাইরে হিন্দুদের দেবতা শ্রী রামের শৈশবকালীন মূর্তি ‘রামলালা’ স্থাপনের অনুমতি চেয়েছিলেন জনৈক হিন্দু সাধু। তার সেই আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছিলো আদালতে। তারপর এই নিয়ে দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষ চলার পর ১৯৯২ সালে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির আদর্শিক অভিভাবক ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ-আরএসএস’ এর নেতৃত্বে একদল উগ্র ‘করসেবক’-আরএসএস এর কর্মীবাহিনী বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে ভারতে গবেষণা ও গ্রন্থনার শেষ নেই। হিন্দুত্ববাদীরা প্রমাণ করতে চেয়েছেন বাবর রামের জন্মস্থলে নির্মিত মন্দির ধ্বংস করেছিলেন। অপরদিকে মুসলিম ও নিরপেক্ষ গবেষকরা দাবি করেছেন যে ঐ অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

অনেক রক্তপাত ও অঘটন-ঘটনের পর বাবরি মসজিদ বিতর্কের ইতি টানা হয় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমে। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের এ রায় প্রকাশিত হয়। রায়টির দ্বারা হিন্দুত্ববাদীদের শতাব্দী লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটে। সম্ভবত সেই প্রবাদ ‘রামের জন্মভূমি অযোধ্যার চেয়েও সত্য যেন’ কে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য অর্থাৎ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আকাঙ্খাকে কার্যকর করবার জন্য রায়টি দেয়া হয়। তা না হলে আরও বিবাদ-বিসংবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা অব্যাহত থাকবে। মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি একই শহরের আরেকটি এলাকায় মুসলমানদের মসজিদ নির্মাণের জন্য যায়গা বরাদ্দের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। অন্যায় দাবির উপর রায়টি দেয়া হলেও সুপ্রিম কোর্ট ইতিহাসকে অস্বীকার করেনি। রায়ে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয় যে, বাবরি মসজিদ কোন মন্দির ধ্বংস করে নির্মিত হয়নি। হিন্দুত্ববাদীরা জোর করে বাবরি মসজিদে যে মূর্তি রেখেছিলো সেটাকে সুপ্রিম কোর্ট অপরাধমূলক কর্মকান্ড হিসেবে চিহ্নিত করে। ১৯৯২ সালের ০৬ ডিসেম্বর হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। এই ধ্বংসকে সুপ্রিম কোর্ট অপরাধমূলক তৎপরতা হিসেবে অভিহিত করে।

হিন্দুত্ববাদী শক্তি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরপরই সেখানে মন্দির নির্মাণের জোর তৎপরতা শুরু করে দেয়। প্রতিষ্ঠিত হয় রামমন্দির তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট। বিজেপির সমস্ত কর্মকান্ডের বড় লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাঁড়ায় অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণ। অযোধ্যার রাম মন্দির যাতে বৈশ্বিক হিন্দুত্ববাদী শক্তির প্রাণকেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায় সেজন্য নেয়া হয় কোটি কোটি টাকার প্রকল্প। প্রাচীন জনপদকে সর্বাধুনিক করে তোলার জন্য যাবতীয় পরিকল্পনা নেয়া হয়। বিমানবন্দর, রেল ষ্টেশন, অযোধ্যাবাহিত সরযু নদী সংস্কার, রাস্তা ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ, ইন্টারনেট সংযোগ এবং অব্যাহত বিদ্যুতের জন্য সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রাক্কলিত ব্যয় বরাদ্দ ৩০ হাজার ৫ শত ৭০ রুপি। শুধু মন্দির নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৮ শত কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়। বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয় দেড় হাজার রুপি। এই ব্যয়ের কোন সীমা পরিসীমা রাখা হয়নি। নির্মীয়মান এই মহাযজ্ঞ শেষ হতে আরও দুবছর লাগবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির তর সয় না। কারণ ভারতীয় সংসদীয় নির্বাচন সমাগত। মোদি এবং বিজেপি রামমন্দির প্রকল্পকে তাদের বিজয়ে তুরুপের তাস হিসাবে দেখছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেই উদ্দেশে মহাধুমধামে জাকজমকের সাথে মন্দিরের উদ্বোধন করলেন মোদি। ২২ জানুয়ারি সোমবার অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানের মধ্যমনি ছিলেন তিনি। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের ভাষায় ‘মোদিময়’। সেখানে মোদি অসাধারণ, আর সবাই সাধারণ। মোদি বলেছেন ভগবান রাম এই কাজের জন্যই তাকে ধরাধামে পাঠিয়েছেন। সেখানে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী থেকে নেমে এসেছেন ধর্মগুরু হিসেবে। মন্দির উদ্বোধনের আগে তিনি নাসিকের এক মন্দিরে ঝাড়ু দিয়েছেন। মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে নিজেকে শুদ্ধ রাখতে টানা এগারো দিন ব্রত পালন করেছেন। বিশেষ ধরনের নিয়ম আচার মেনেছেন। কৃচ্ছতা সাধন করেছেন। কার্যত তিনি উপবাস পালন করেছেন। ‘সাত্ত্বিক’ আহার করেছেন। যপতপ করেছেন। মাটিতে শুয়েছেন। মৌনব্রত পালন করেছেন। এসব দেখে সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন উত্থাপন করা যায় যে, তিনি ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের প্রধানমন্ত্রী, নাকি ধর্মগুরু? ব্যক্তিগতভাবে যে কেউ যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন, কিন্তু সংবিধান, আইন ও শাসন সংস্কৃতি একজন প্রধানমন্ত্রীকে অবাধ স্বাধীনতা দেয় না।

এই দক্ষযজ্ঞ কেন্দ্র করে ভারতে রাজনৈতিক বিভাজন ঘটেছে। মার্কিনীদের স্টাইলে তারা বলেছে, ‘হয় তুমি হিন্দুত্বের পক্ষে নয় বিপক্ষে’। মাঝামাঝি কোন অবস্থান নেই। ভারতের মোদি নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম বলছে যারা ঐ অনুষ্ঠানে যাবেন না, তারা নিঃসন্দেহে হিন্দুধর্মের বিরোধী। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞগণ বিজেপির এই কৌশলকে ‘দোধারি তলোয়ার’ বলে অভিহিত করেছেন। তাদের আহ্বানে কংগ্রেসের মত ধর্মনিরপেক্ষ দল যদি যায় তাহলে তারা মোদির হিন্দুত্ববাদের অংশীদার হলেন। আর না গেলে গরিষ্ঠ হিন্দু জনগোষ্ঠীর কোপানলে পড়তে পারেন। তবে এই প্রথমবারের মত বিজেপি ব্যতীত আর তেমন কোন রাজনৈতিক দল ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেনি। বামধারা, মধ্যপন্থী এবং আরও ধর্মবাদীরা কেউই ঐ অনুষ্ঠানের যেতে রাজি হয়নি। কংগ্রেস বিবৃতিতে বলেছে, ‘দেশের লক্ষ-কোটি মানুষ ভগবান রামচন্দ্রের আরাধনা করেন। ধর্ম একান্তই প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়। অযোধ্যার মন্দির নির্মাণের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই আরএসএস এবং বিজেপির রাজনৈতিক প্রকল্প। ভোটের দিকে তাকিয়ে তাই এই অসম্পূর্ণ মন্দির উদ্বোধনের ছক।’ কংগ্রেস জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু ধর্মের রাজনীতিকরণের কারণে তারা আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ঐ অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। বরং তিনি সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে সংহতি মিছিল করেছেন কলকাতায়। মজার বিষয় কংগ্রেসের মত একই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ধর্মগুরু শংকরাচার্যরা। অসম্পূর্ণ মন্দির উদঘাটনের পিছনে রাজনীতি দেখেছেন। আরও বলেছেন মোদি বন্দনার কোরাসে গলা মিলিয়ে হাততালি দিতে তারা অযোধ্যায় যাবেন না। তারা তাদের কথা রেখেছেন।

অপরাপর রাজনৈতিক দল ও ঐ অনুষ্ঠানে যায়নি শিবসেনার মুখপাত্র ও পার্লামেন্ট সদস্য সঞ্জয় রাউত বলেছেন, ‘এখন শুধু ভগবান রামকে ভোটের প্রার্থী করার ঘোষণাটি বাকি।’ তিনি ‘পুরাণ প্রতিষ্ঠা সমারোহ’ সম্পর্কে বিজেপিকে গালমন্দ করেছেন। বলেছেন বিজেপি পুরো অনুষ্ঠানকে ব্যক্তিগত করে ফেলেছে। কংগ্রেস নেতা অধির রঞ্জন চৌধুরীর বক্তব্য হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে রামমন্দির নির্মাণের অনুমতি প্রদানের পর ধীরে ধীরে এটি বিজেপিরে রাজনৈতিক স্ট্যান্ড ও নির্বাচনী হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। বাম দলগুলোর নেতা সিতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য ‘ধর্ম ব্যক্তিগত পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়। এটাকে রাজনৈতিক ফায়দা অর্জনের মাধ্যম বনানো যায় না। স্মরণ করা যেতে পারে যে, রামমন্দির শুরু থেকেই বিজেপির রাজনৈতিক এজেন্ডা। এর সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। ভারতের জনগণকে ক্রমাগত ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে যে, এটা ভারতের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস। এর উদ্বেগজনক দিক হচ্ছে স্বেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় মুসলমানদের সংশ্লিষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের শুধু রামমন্দির বানানোতে সহায়তা করতে বাধ্য করা হচ্ছে এমন নয় বরং তাদের বৈরি প্রমাণের যাবতীয় মিথ্যাচার করা হচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় এই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে লক্ষেèৗতে এমন দুজন হিন্দু যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা মুসলমান নাম দিয়ে নকল আইডি বানিয়ে রামমন্দির উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। উল্লেখ্য যে গুজরাট দাঙ্গার শুরু হয়েছিল এমন কারসাজি থেকে। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা অতিক্রম করার সময় তারাই ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য দাঙ্গার সূচনা করে। নরেন্দ্র মোদি তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। কয়েকবছর ধরে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ধর্মীয় বিভাজন নীতি যেভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠছে, রামমন্দির উদ্বাধনের পর তা আরও প্রকট হওয়ার আশংকা করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ। যা উগ্রবাদী রাজনীতির স্বরূপ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অযোধ্যায় একটি মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ রয়েছে। সেখানে তান্নিপুর গ্রামে মসজিদটি নির্মিত হওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হলেও মসজিদ নির্মাণের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মসজিদ নির্মাণ তো দূরের কথা অযোধ্যার মুসলিম বাসিন্দারা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বর্তমান অযোধ্যায় বসবাস করেন ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩২ বছর পর সেখানে যখন রামমন্দির প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে, মুসলমানদের নিরাপত্তার প্রশ্নটি ততই জটিল হয়ে উঠছে। ৩২ বছর আগের সেই ভয়াবহ দাঙ্গার ক্ষত এখনও ভুলতে পারেননি অনেক মুসলিম। তারা বলছেন আমরা যতই নীরব থাকি না কেন, মসজিদ ধ্বংসের ক্ষত কখনো শুকাবে না। নতুন ভারতে মুসলমানদের নিরাপত্তা কতটা সংবেদনশীল তা রামমন্দির প্রতিষ্ঠার ঘনঘটায় অনুমান করা যায়। সেখানে মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে যে, পবিত্রতার দোহাই দিয়ে হয়তো আর কিছুদিন পর অযোধ্যা থেকে মুসলমানদের বহিষ্কার করা হবে। যদিও বিজেপির তরফ থেকে সে ধরনের আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তবুও নিশ্চিত নন মুসলিম অধিবাসীরা। একজন প্রবীণ মুসলিম গণমাধ্যমে বলেন, ‘১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছিলো ঠিকই, কিন্তু সেসময় স্থানীয় হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবও ছিলো। এমনকি দাঙ্গার সময় মুসলিমদের বাঁচাতে স্থানীয় হিন্দুরা এগিয়ে এসেছেন, এমন শত শত উদাহরণ রয়েছে। স্থানীয় হিন্দুরা এগিয়ে না এলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তো। কিন্তু এখনকার বাস্তবতা ভিন্ন। গত প্রায় দুই দশক ধরে মানুষের মনে যেভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢোকানো হয়েছে, তাতে কার মনে কী চিন্তা চলছে তা আর বোঝার উপায় নেই। সামনের দিনগুলোতে কি হবে তা এখন অনিশ্চিত’।

১৯৪৭ সালে দেশটি যখন ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত হয়, তখন দাঙ্গা ও দেশান্তর থাকলেও একসময় স্থিতাবস্থা অর্জিত হয়। ভারতে ক্রমশ আরএসএস বা বিজেপির মত রাজনৈতিক দল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। হিন্দুত্বের দাবি গরিষ্ঠ হিন্দু জনসংখ্যাকে তাড়িত করে। কিন্তু এই সময়ে সেখানের ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির অবস্থান ও যথার্থ ছিল না। শাসক কংগ্রেস বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য পরোক্ষভাবে নয় প্রত্যক্ষভাবেই দায়ী। প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও যথার্থ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন। এভাবে তারা রাজিব গান্ধীর সময়ে শাহবানু মামলায় আপোষ করেছেন।

অযোধ্যার রামমন্দিরের তালা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শিলান্যাস করতে বাধ্য হয়েছেন। রাহুলসহ শীর্ষ নেতারা প্রতিটি ভোটের আগে মন্দিরে মন্দিরে প্রার্থনা করেছেন। শক্তভাবে দৃঢ়তার সাথে ভারতের অনুসৃত সংবিধান প্রণীত ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে আপোষহীন অবস্থান নেননি। ভারতের রাজনীতিতে দীর্ঘকাল ধরে বামদের প্রবল প্রতাপ অনুভূত হয়েছে। পশ্চিমবাংলা ও কেরালার মত রাজ্যে তারা দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থেকেছে। এখন যখন মানুষ মানুষের জন্য গানের গায়ক ভূপেন হাজারিকাকে বিজেপির নির্বাচনে প্রার্থী দেখি অথবা কোন বাম নেতার বিজেপিতে যোগদানের খবর দেখি তখন আমাদেরকে বিস্মিত হতে হয়।

https://www.dailysangram.info/post/547109