২৩ জানুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ৬:৪৮

শীতের তীব্রতা আরও বাড়ছে 

উত্তরাঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা 

দেশের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র শীত। এর মধ্যেই আবার বৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামিকাল বুধবার এই বৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃষ্টি হবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এবং তা মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত আসতে পারে। এ মাসের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। এর মধ্যে বিভিন্ন স্থানে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। 

এদিকে শৈত্যপ্রবাহের কারণে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রমের সময়সূচিতে পরিবর্তন এনেছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম সকাল ১০টায় শুরু হবে। এই সিদ্ধান্ত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে সোমবার নতুন এই সময়সূচির কথা জানানো হয়। এ ছাড়া আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের যেসব জেলায় দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাবে, সেখানকার বিদ্যালয় আলোচনা করে বন্ধ করার আদেশটি বহাল রাখা হয়েছে।

গতকাল সোমবার দেশের ২১ এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এই মৌসুমে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, বুধবার দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আবার বৃষ্টি হতে পারে। এই বৃষ্টি দেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত হতে পারে। তবে এ দফায় খুব বেশি বৃষ্টি হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হয়। তবে দক্ষিণ অঞ্চলেই বৃষ্টি ছিল বেশি। দক্ষিণের জনপদ যশোর এবং চুয়াডাঙ্গায় যথাক্রমে ২২ ও ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় শীতের তীব্রতা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। তাপমাত্রা আজ আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক। তবে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রা একটু করে বাড়তে শুরু করবে বলে জানান তিনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল রোববার সন্ধ্যায় দেওয়া পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলেছিল, তাপমাত্রা কমবে সেই সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে। রোববার দেশের ছয় জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বইছিল। গতকাল থেকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় এবং সেই সঙ্গে টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। 

এদিকে দেশে শীতের তীব্রতা বাড়তির দিকে। দেশের উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রীর নিচে নেমে যাওয়ায় কয়েকটি জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রের খবর বলছে, মাঘের শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বেশকিছু এলাকা। বইছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। শীতজনিত রোগী ভর্তি বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। রাজধানী ঢাকাতেও শীতের প্রকোপ বেড়েছে। বাসা থেকে বের হলেই ভারি পোশাকেও শীত সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে অনেকেই কাজ ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছেন না।  

আবারও মৃদু শৈত প্রবাহের কবলে পড়েছে দিনাজপুর। সূর্য উঠলেও তাপমাত্রাও কমছে। কনকনে শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। জেলায় ভোরে ও সকাল ১১টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র ঠা-ায় কৃষক, শ্রমিজীবী মানুষ অনেক কষ্টে কাজ করছেন। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে আট দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস।  জয়পুরহাটেও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ কারণে জেলার সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে জেলার অনেক মাদরাসা ও কোচিং সেন্টার খোলা রয়েছে।

কুড়িগ্রামে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত আছে। ঘনকুয়াশার সাথে হাড় কাঁপানো শীতে বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী, ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ। গরম কাপড়ের অভাবে অনেককেই খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিতে দেখা গেছে। সোমবার তাপমাত্রা কমে দাঁড়িয়েছে আট দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই তাপমাত্রা আরও দু’একদিন অব্যাহত থাকতে পারে, জানায় আবহাওয়া অফিস। এ কারণে জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করছে জেলা প্রশাসন। 

সর্বউত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে পুরো এলাকা। সকাল ৯ টায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে তেতুঁলিয়া আবহাওয়া অফিস। রাতের তাপমাত্রা একটু বাড়লেও কমছে দিনের সর্বচ্চো তাপমাত্রা। ঘন কুয়াশার কারণে ঠান্ডার পরিস্থিতি আরও বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর হতে বের হয় না। হাসপাতালগুলোতেও বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। 

অন্যদিকে, টাঙ্গাইল জেলা আবহাওয়া অফিস সকাল ৯ টায় ৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা রাখে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার জানান, আবহাওয়া অফিসের রিপোর্ট পেতে দেরি হবার ফলে ক্লাস শুরু হয়ে গেলে পরে স্কুল বন্ধ রাখা সম্ভব হয়না। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে কোন নির্দেশনা না থাকায় যথারীতি ক্লাস চলছে বলে জানান শিক্ষাকরা।  

এদিকে, আবারও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে খেটে খাওয়া মানুষ। ঠা-ায় নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা। বেড়েছে শীতজনিত নানা রোগ। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। সকাল ৯ টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সাড়ে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের তীব্রতায় জবুথবু পাবনার জনজীবন। শ্রমজীবী মানুষেরা সীমাহীন দুর্ভোগে। সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় পাবনা জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোমবারের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সাতক্ষীরায় গত দুই দিনের ব্যবধানে সোমবার তাপমাত্রা আরও কমে যাওয়ায় দুর্ভোগে খেটে খাওয়া ও নি¤œ আয়ের মানুষ। বেড়েছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। বিশেষ করে শিশু-বয়স্করা ভোগান্তি। 

 মৌলভীবাজারে গুঁড়ি গুঁড়ি মৃষ্টির মত বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। যানবাহন চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কয়েক দিন থেকে কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। ঘর থেকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না। খুব কষ্টে আছেন হাওর পাড়ের মানুষ ও বোরো চাষিরা ।

এদিকে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আবার কিছু কিছু জায়গায় সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলা রাখা হয়েছে। 

দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি, তবুও স্কুলে শিক্ষার্থীরা 

তীব্র শীত আর হিমেল হাওয়ায় দিনাজপুরে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে, তাপমাত্রা নেমে গেছে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রিতে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। চিরিরবন্দর দারুলফালা আলিম মাদরাসার ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে মাদরাসা যাচ্ছে। মাদরাসা বন্ধ কি না জানতে চাইলে সাদিয়া বলেন, মাদরাসা বন্ধ দেয়নি। তীব্র ঠা-া হলেও মাদরাসা যেতে হচ্ছে। না হলে আমি পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ব।

গ্রিনল্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তাজদিকা লাবনি বলেন, কলেজ তো বন্ধ দেয়নি। ঠাণ্ডা হলেও কিছু করার নেই, কলেজে যেতে হবে। এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মুরশিদা খাতুন বলেন, আমার ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। শীতের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো নিয়ে ভয় কাজ করছে। তবুও স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে। চিরিরবন্দর সরকারি মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুভাস চন্দ্র রায় বলেন, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসলে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু সোমবার দিনাজপুরে তাপামাত্র ৮ ডিগ্রিতে নামলেও বিদ্যালয় বন্ধের কোনো নির্দেশনা পাইনি। জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। এখনো স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। 

মাউশির নির্দেশনা উপেক্ষা করে এই তীব্র শীতে চুয়াডাঙ্গার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সোমবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এদিকে হাড়কাঁপানো শীতে মানুষ নাজেহাল হয়ে পড়ছে। সব থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন  খেটে খাওয়া মানুষেরা এবং শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। শীতে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছে না দিনমজুররা। এই তীব্র শীতের সকালে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে দেখা যায়। 

অভিভাবকরা জানান, তীব্র শীতের কারণে বাচ্চারা ঘুম থেকে দেরিতে উঠছে। আমরাও তাদেরকে চাপ দেইনা। বাইরে কুয়াশার কারণে অনেক বাচ্চারা ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই সকালে স্কুল-কলেজ ও প্রাইভেট পড়তে যেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তাদের।

তীব্র শীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে, তাপমাত্রা নেমে গেছে ১০ ডিগ্রির নিচে। তাই জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জেছের আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সোমবার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আগেরদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি।

সিরাজগঞ্জে চলতি শীত মৌসুমের তাপমাত্রা আরও কমেছে। জেলাটিতে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সোমবার। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামায় সিরাজগঞ্জের মোট ১৬৭১টি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক দিন ও মোট ৫৮৪টি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, সকাল ৯টায় এখানে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে গতকাল তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া অফিসের হিসেবে ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজকের তাপমাত্রা চলতি শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। 

গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানান, শীতের কারণে গাইবান্ধার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকালে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস.এম আরশাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামার কারণে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ সোমবার (২২ জানুয়ারি) এবং আগামীকাল মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) গাইবান্ধার সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই কনকনে শীতের মধ্যে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াত খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাপমাত্রা আবারও ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিদ্যালয়ের ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করলেও মাধ্যমিক স্কুলগুলো খোলা রয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে জেলা শিক্ষা অফিসার মোছা. রোকসানা বেগম বলেন, মাধ্যমিক স্কুল বন্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

নীলফামারী সংবাদদাতা : চলমান শৈত্য প্রবাহে কাহিল হয়ে পড়েছে নীলফামারীর জনজীবন। ঘন কুয়াশা না থাকলেও কনকনে ঠা-া আর হিমেল বাতাসে ঘর হতে বের হওয়া যাচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষজন। হাড় কাপানো ঠাণ্ডায় তারা  কাজে যেতে না পেরে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। অনেকে শীতবস্ত্রের অভাবে দিনভর খড়কুটে জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। সোমবার নীলফামারীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে  ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ মৌসুমে এটাই নীলফামারীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে ৯ দশমিক তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হোসেন জানান সোমবার সকাল ৬টায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।  তিনি জানান প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকলেও ঘন কুয়াশা না থাকায় বিমান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। 

এদিকে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসায় নীলফামারী জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহের শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে লালমনিরহাট জেলাবাসী। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ২দিনের ছুটি ঘোষণা করেছেন জেলা শিক্ষা বিভাগ।

জেলা শিক্ষা অফিসার মাহবুব রহমান জানান, লালমনিরহাটের তাপমাত্রা ১০ডিগ্রীর নিচে চলে এসেছে।  এজন্য জেলার সকল মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  সোমবার ও  মঙ্গলবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাপমাত্রা স্বাভাবিক না হলে এ ছুটি বাড়তে পারে বলেও তিনি  নিশ্চিত করেছেন। এদিকে গত ২ দিনের হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। কুয়াশার সাথে অব্যাহত হিমেল হাওয়ায় শীত বেড়েছে উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে।  রোববার  রাত ভর পড়েছে বৃষ্টির মতো কুয়াশা। দেখা মিলছে না সূর্যের। আবহাওয়া অফিস জানালো আরও দীর্ঘ হতে পারে শৈত প্রবাহ। কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, সোমবার ২২জানুয়ারী সকাল ৯ টায় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতে কৃষিনির্ভর তিস্তা ও ধরলা চরাঞ্চলের মানুষ পড়েছে বিপাকে। প্রচণ্ড শীতেও শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষজন বের হচ্ছেন  না জীবিকার সন্ধানে। এখন পর্যন্ত নদী চরের অনেক এলাকায় সরকারি সহায়তা পাননি বলে অনেকের অভিযোগ। এদিকে হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় আরো বেশি শীত অনুভব হচ্ছে। 

এদিকে প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে দরিদ্র মানুষজন। খড় খুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন গ্রামাঞ্চলের মানুষজন। প্রচণ্ড শীতে বয়োবৃদ্ধ  ও শিশুরা ডায়রিয়া এবং  শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। 

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মলেন্দু রায় শীতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, শীতের কারণে কয়েকদিন ধরে হাসপাতালগুলোতে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। আমরা আমাদের সাধ্যমত সেবা দিচ্ছি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বরাদ্দকৃত ২ দফায় পাওয়া মোট ২৮ হাজার পিচ কম্বল বিতরণ শেষের দিকে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আরো চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

বগুড়া অফিস: বগুড়ায় শীতের তীব্রতা বেড়ে ১০ ডিগ্রীর নীচে নামার কারণে সোমবার সকালে বগুড়া জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। তবে বন্ধের সিদ্ধান্ত সময়মত না পৌঁছায় বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যথারীতি চালু ছিল। এছাড়া কোচিং সেন্টারও খোলা ছিল যথারীতি। শিক্ষার্থীরা প্রচণ্ড শীতের মধ্যে ক্লাস করেছে। 

বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ আলম জানান, সকাল ৯টায় জেলায় এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ মাস জুড়েই এমন অবস্থা থাকবে। বগুড়া জিলা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক (প্রভাতী) আনোয়ার হোসেন জানান, সকালে জেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশনার পর স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার হযরত আলী বলেন, জেলার সকল মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সকল উপজেলা শিক্ষা অফিসকে জানানো হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামায়  জেলার সকল প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, পরিপত্র অনুযায়ী দুই শিক্ষা অফিসার তাদের উপপরিচালক ( ডিডি')র সাথে কথা বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছেন। এদিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়া হলেও সময়মত নির্দেশনা সকল প্রতিষ্ঠানে না পৌঁছায় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সকাল ১০টা পর্যন্ত খোলা ছিল। ১০টার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রচণ্ড শীতের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা কয়েখ ঘন্টা ক্লাস করতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়া কোচিং সেন্টারের বিষয়ে কোন নির্দেশনা না থাকায় শহরের সব কোচিং সেন্টার দিনভর খোলা ছিল।

হিলি (দিনাজপুর) সংবাদদাতা : তীব্র শীত ও চলমান শৈত্য প্রবাহের কারণে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার ৩৭ টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুই দিন পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিসার।

গতকাল সামবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম এর স্বাক্ষরিত এক চিঠি প্রাপ্তির পরে বিকেল সাড়ে তিন টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আহমদ আহসান হাবিব। 

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠির বরাত দিয়ে হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আহমদ আহসান হাবিব বলেন, দিনাজপুর জেলা আবহাওয়া অফিসের হিসেব অনুযায়ী তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে আসায় আগামী দুই দিন (২৩-২৪) তারিখ জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার। সেহেতু আমাদের উপজেলার সকল স্কুল কলেজ, মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামী দুই দিন (২৩-২৪) জানুয়ারি পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আজ দিনাজপুর জেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮:২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে আজ জেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

 

https://www.dailysangram.info/post/546851