শাহ্ আব্দুল হান্নান
১১ মে ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৪:০১

ভ্যাট নিয়ে এনবিআর ব্যবসায়ী মুখোমুখি

পরিস্থিতি পূর্বাবস্থায় যাচ্ছে : শাহ্ আব্দুল হান্নান

নতুন ভ্যাট আইন আগামী ১ জুলাই থেকে চালু হবে। এ ভ্যাট আইন নিয়ে ইতোমধ্যে হইচই পড়ে গেছে। মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে এনবিআর ও ব্যবসায়ীরা। এর প্রথম প্রতিফলন দেখা যায় গত ৩০ এপ্রিল। ওই দিন এনবিআর ও এফবিসিসিআই আয়োজিত যৌথ পরামর্শক কমিটির সভায় ভ্যাট আইন নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সাথে ব্যবসায়ীদের বাগি¦তণ্ডার ঘটনায় সারা দেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মাঠপর্যায়ের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ােভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার পর এফবিসিসিআইসহ নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছেন। ঘটনাটি অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
যে কারণে হইচই : বর্তমান ভ্যাটব্যবস্থাকে এক হারে নিয়ে যাওয়া, কিছু স্থানে যে সঙ্কুচিত ভিত্তিমূল্য ছিল তা বাদ দেয়া এবং নতুন আইনে বিদ্যমান টার্নওভার ট্যাক্সে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাইরে রাখা যেটাকে ব্যবসায়ীরা কম মনে করেন। তারা মনে করেন সর্বনি¤œ ৩০ লাখ টাকা এবং সর্বোচ্চসীমা ৮০ লাখ টাকাকে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বর্তমান আইনে স্থানীয় শিল্পের সুরাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া আছে। নতুন আইনে আমদানি পর্যায়ে সব পণ্যের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন ভ্যাট আইন রেয়াত ও হিসাবনির্ভর। উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ এবং খুচরা-পাইকারি ব্যবসার প্রতি স্তরে রেয়াত বা ক্রেডিট নেয়ার সুযোগ আছে। তবে এ সুবিধা নিতে হলে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে লেনদেনের চালান বা ইনভয়েস অবশ্যই রাখতে হবে। এ জন্য আধুনিক তথা কম্পিউটার ব্যবহার করে হিসাব সংরণ করতে হবে।
এনবিআরের যৌক্তিকতা : ভ্যাটের বহু হার থেকে একক হারে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এনবিআরের বক্তব্য হলো বহু হার বিশিষ্ট ব্যবস্থায় ভ্যাট চেইন পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হয় না, একক হারে ভ্যাট চেইন পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হয়। আর সঙ্কুচিত ভিত্তিমূল্যের ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে কর হার কম বিধায় কম কর পরিশোধ করতে হয় মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে রেয়াত না থাকায় একটি সরবরাহ চক্রে প্রকৃত নিট করের পরিমাণ সর্বশেষ ভোক্তা ক্রয়মূল্যের ১৫ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। আর নতুন আইনে রেয়াত সুবিধা থাকায় আপাতদৃষ্টিতে কর হার ১৫ শতাংশ বিধায় বেশি কর পরিশোধ করতে হবে মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে রেয়াত থাকায় একটি সরবরাহ চক্রে প্রকৃত নিট করের পরিমাণ সর্বশেষ ভোক্তা ক্রয়মূল্যের ১৫ শতাংশের সমান হবে।
পূর্ব ও বর্তমান ভ্যাট আইন পর্যালোচনা : এনবিআরের ভ্যাট আইন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সব উৎপাদন ও আমদানি পর্যায়ে (সেবাসহ) আগেও ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল এবং রফতানি পর্যায়ে কোনো ভ্যাট ছিল না। কারণ, ভ্যাট দিতে হয় ভোক্তাপর্যায়ে। যেহেতু রফতানিপণ্যের ভোক্তা বিদেশে, এ কারণে কোনো দেশেই রফতানিতে ভ্যাট থাকে না। ভ্যাট আইন প্রবর্তনের সময় কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে কিছু পণ্যের ওপর ট্যারিফ মূল্য বা সঙ্কুচিত ভিত্তিমূল্য দেয়া হয়েছিল।
সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যানের বক্তব্য : নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে যখন যুদ্ধাবস্থা তখন ভ্যাটের প্রবক্তা এনবিআরের সাবেক সদস্য, পরে এনবিআরের চেয়ারম্যান এবং সরকারের সাবেক সচিব শাহ্ আব্দুল হান্নানের কাছে এ বিষয়ে নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে বক্তব্য চাওয়া হয়। প্রসঙ্গত ১৯৯১ সালে দেশে প্রথমে ভ্যাট চালু হয় এবং বলা যায়, শাহ্ আব্দুল হান্নানের একক প্রচেষ্টায় তখন ভ্যাট চালু করা সম্ভব হয়েছিল। তিনি বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাটের একক হার আগেও ছিল, এখানে নতুন কিছু করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, এটাতে তো তিনি কোনো অসুবিধা দেখছেন না। তিনি মনে করেন, ভ্যাট চালু হয়েছে প্রায় ২৫ বছর আগে। তখন ভ্যাটের হার ছিল ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে তা বাড়ানো হয়নি। রফতানিতে ভ্যাট শূন্য শতাংশই আছে। এটাও ভালো। তখন তিন-চারটি আইটেমে ভিত্তিমূল্য ছিল। যেমন চিনি। এটাতে তো বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার কথা ছিল না। কারণ ভ্যাট দেবে ভোক্তারা। ব্যবসায়ীরা নয়। এখন ভিত্তিমূল্য তুলে দেয়া হচ্ছে। এখানে সরকার ও এনবিআর দু-একটি ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ভিত্তিমূল্য রাখতে পারে।
তিনি আরো মনে করেন, ভ্যাটের একক হারে চেইন রক্ষা হয় এবং এটা শুরু থেকেই ছিল। পরে যদি কিছু আইটেমে অন্য হারে করা হয়ে থাকে তবে তা সঠিক হয়নি। যেসব দেশ পুরো ভ্যাট করে নাই তারাই বিভিন্ন হার করে, যা যুক্তিযুক্ত নয়। তিনি মনে করেন ভ্যাটের সৌন্দর্য এক হার।
শাহ আব্দুল হান্নান ক্ষোভ প্রকাশ করেন যে, ভ্যাট আইনে বেশ কিছু পরিবর্তন করা হচ্ছে অথচ এই ব্যবস্থার যারা বিকাশ ঘটিয়েছেন তাদের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে না। যদি করা হতো তাহলে জটিলতা কম হতো।
ওয়াকিবহাল মহল মনে করেন, ভ্যাট আইনে যে পরিবর্তন করা হচ্ছে, তা মূলত মূল আইনে (৯১) ফিরে যাওয়া হচ্ছে। মধ্যবর্তী সময়ে যেসব অসঙ্গতিপূর্ণ কাজ করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তবে ভিত্তিমূল্য তুলে দেয়া হচ্ছেÑ যা মূল আইনে ছিল। নতুন আইনে বরং রেয়াত পুরোপুরি যাতে পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে শাহ আব্দুল হান্নান মনে করেন, টার্নওভার ট্যাক্সের ক্ষেত্রে করমুক্ত সর্বনি¤œ সীমা ৩০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকা করা যেতে পারে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/219093