১১ জানুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:৪২

নির্বাচনে সব দল অংশ না নেয়ায় ইইউর হতাশা

গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষায় সমর্থন দেবে যুক্তরাষ্ট্র

 

বাংলাদেশে সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনে সব প্রধান রাজনৈতিক দল অংশ না নেয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। জোটটি বলেছে, ইইউ-বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের মূল্যবোধের ওপর রচিত।

ব্রাসেলস থেকে দেয়া বিবৃতিতে ইইউ বলেছে, নির্বাচন চলাকালে সহিংস ঘটনাগুলোর নিন্দা জানায় ইইউ। নির্বাচনোত্তর পরিবেশে সবাইকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার সমুন্নত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আটক রাখা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
এতে বলা হয়, ইইউ রাজনৈতিক বহুত্ববাদ, গণতান্ত্রিক মূল্যোবোধ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শান্তিপূর্ণ সংলাপে বসার জন্য সব অংশীদারদের জোরালোভাবে উৎসাহিত করছে। সেন্সরশিপ বা প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ করতে পারাটা অত্যাবশ্যক।

বাংলাদেশে কাজ করা ইইউর নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মিশনের আসন্ন প্রতিবেদন ও সুপারিশগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার একই চেতনায় আমরা নির্বাচন সংক্রান্ত সব অনিয়মের খবরের যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই। রাজনৈতিক, মানবাধিকার, বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতাসহ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি প্লাসে সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তির জন্য বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করে যাবে ইইউ।

জনগণের গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষায় সমর্থন দেবে যুক্তরাষ্ট্র : বাংলাদেশে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিকে সমর্থন দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য গ্রেগরি মিকস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক বার্তায় তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের গণতন্ত্রের প্রতি আকাক্সক্ষায় অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, সহিংসতার রিপোর্ট তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর যে আহ্বান জানিয়েছে, তার প্রতি আমি সমর্থন জানাই।

উল্লেখ্য, গ্রেগরি মিকস ১৯৯৮ সাল থেকে নিউ ইয়র্কে ডেমোক্র্যাট দল থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য। তিনি ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি এখনো এই কমিটির একজন পদস্থ সদস্য।

বাংলাদেশের নির্বাচনে গণতান্ত্রিক মূলনীতি পূরণ হয়নি : কানাডা : যে গণতান্ত্রিক মূলনীতি ও স্বাধীনতার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূরণ হয়নি বলে হতাশা প্রকাশ করেছে কানাডা। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মৌলিক স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে স্বচ্ছতার সাথে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষার প্রশংসা ও সমর্থন করে কানাডা। নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং নির্বাচন চলাকালীন যে ভীতিপ্রদর্শন ও সহিংস ঘটনা ঘটেছে আমরা তার নিন্দা জানাই। এসব সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রতি আমাদের সহানুভূতি জানাচ্ছি। একটি শক্তিশালী ও সুস্থ গণতন্ত্র নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি কার্যকর বিরোধী দল, নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা।

এতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশকে প্রথম যে কয়েকটি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছিল, কানাডা তার অন্যতম। একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের যে আকাক্সক্ষা বাংলাদেশী জনগণের মধ্যে রয়েছে, তাকে সমর্থন দিতে কানাডা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সব অংশীজন প্রকৃতভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেনি : অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। লাখ লাখ মানুষ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এটিকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু দুঃখজনক যে, এই নির্বাচন এমন এক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে সব অংশীজন অর্থপূর্ণ এবং প্রকৃতভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের বন্ধু হিসেবে নির্বাচনের আগে ঘটে যাওয়া সহিংসতা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের গ্রেফতারে অস্ট্রেলিয়া উদ্বিগ্ন।

ইতঃপূর্বে বাংলাদেশের কাছে ধারাবাহিকভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারকে তার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। এই প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকারের সুরক্ষা, আইনের শাসন এবং উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে অস্ট্রেলিয়া একটি উন্মুক্ত, স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অঞ্চলের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

 

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/805521