১১ জানুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:৩৮

বেড়েছে শীতের তীব্রতা 

 

দিন দিন তীব্র হচ্ছে শীত। দিনের শেষে বিকেলে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা নীচে নেমে এলেও, এবছর তার তুলনায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এই সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। তবে সারা দেশে কুয়াশা ছড়িয়ে পড়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মানুষ শীতে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। এক কথায় উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। সেই তুলনায় রাজধানীসহ অন্যান্য এলাকায় শীতের তীব্রতা কম।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশের ওপর একটি ঘন কুয়াশার চাদর ছড়িয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে তা দেশের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা দখল করে নিয়েছে। ভারতের দিল্লি, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এই কুয়াশা। যার কারণে শীতের অনুভূতি বেড়ে গেছে। 

তবে গতকাল বুধবার কুয়াশা দেশের বেশির ভাগ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার কথা জানায় আবহাওয়া অফিস। ফলে শীতের অনুভূতি আরও বাড়তে পারে। দুপুরের দিকে রোদের দেখা মিললে শীতের অনুভূতি কিছুটা কমতে পারে। তবে বিকেল থেকে আবারও শীত বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, কুয়াশার কারণে দিনের বেলা রোদ কম দেখা যাচ্ছে। এতে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা খুব একটা কমছে না। যে কারণে শীতের অনুভূতি বেশি থাকছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের বেশির ভাগ এলাকায় কুয়াশা বেড়ে যাওয়ার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসতে পারে। যে কারণে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে চলাচলে সমস্যা হতে পারে। আগামী দু’তিন দিন কুয়াশা ও শীতের অনুভূতি দুই-ই বাড়তে পারে। আজ বৃহস্পতিবার উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, জানুয়ারি হচ্ছে সবচেয়ে শীতলতম মাস। এ সময়ে বেশির ভাগ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। কিন্তু এবার ডিসেম্বরের মতো জানুয়ারিজুড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা বেশি রয়েছে। মাসের বাকি সময়ে একই রকম কম শীত থাকতে পারে। 

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর কাছাকাছি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এছাড়া সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।

১২ জানুয়ারির পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘœ ঘটতে পারে।

চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা : চুয়াডাঙ্গায় ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল ১০ জানুয়ারী বুধবার সকাল ৯ টায় জেলায় দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাথে হিমেল বাতাসের কারণে জনজীবনে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতের কারণে খেটে খাওয়া ও নি¤œআয়ের মানুষগুলো চরম ভোগান্তিতে পড়ছে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, কয়েকদিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে। ১০-১২ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা উঠানামা করছে। ঠান্ডা বাতাসের কারণে শীত অনুভূত হচ্ছে সাথে ঘন কুয়াশা রয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে ঠান্ডা বাতাস বইছে। বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি আরো বলেন, আরো কয়েকদিন শীত থাকতে পারে। ঠান্ডা বাতাসের কারণে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে। হিম ঠান্ডা বাতাসের কারণে জনজীবনে শীত অনুভূত হচ্ছে।

তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারনে দুর্ভোগবেড়েগেছে মানুষের। দিন মজুররা কাজ না পেয়ে বাড়ী ফিরে যাচ্ছে। শীতের প্রভাবে তাদেরকে কেউ কাজে নিচ্ছেনা। ব্যবসায়ও শীতের প্রভাব পড়েছে। সন্ধ্যার পর জনসমাগম কম থাকায় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছে। শীতের প্রকোপে গোটা জেলার জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে।

ডিমলা (নীলফামারী) সংবাদদাতা : হিমালয়ের পাদদেশের নীলফামারী জেলার ডিমলায়  বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ঘন কুয়াশার সঙ্গে পাহাড় থেকে বয়ে আসা হিমেল বাতাস ডিমলার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের।

ডিমলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার ডিমলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯১ শতাংশ এবং বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সাড়ে ৫.১ কিলোমিটার। 

মূলত এই ডিমলা উপজেলার তাপমাত্রা কয়েকদিন ধরেই ১৩ থেকে ১৪ ডিগ্রির ঘরে উঠানামা করছে। তবে হঠাৎ করেই হিমেল বাতাসের কারণে বেড়েছে শীতের তীব্রতা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার একটু পরপরই রাস্তাঘাটে মানুষজনের উপস্থিতি একেবারে কমে গেছে। খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন ঘর থেকে বের হচ্ছে না। কষ্টের মধ্যে রয়েছে খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষজন।

শীত কৃষিক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বর্তমানে মাঠে রয়েছে আলুসহ বিভিন্ন ফসল। ঘন কুয়াশার ফলে আলু ও টমেটোতে লেটব্লাইটসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রাম থেকে মোস্তাফিজুর রহমান : গত কয়েকদিন থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে আবৃত কুড়িগ্রামের সর্বস্তরের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কৃষি শ্রমিকগণ জীবীকার সন্ধানে তীব্র ঠান্ডা পানিতে মাঠে কাজকর্ম করতে নিদারুণ কষ্টে পরিবারের আহার জোগাড় করতে কাজ করছেন। তাদের অধিকাংশ পরিবারের অবস্থা খুবই নাজুক। নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ শীতল হাওয়া বা শীত নিবারণের পোশাক। 

পৌষের শেষে এসে কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশার দাপটে হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডায় শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন পড়েছে চরম বিপাকে। দেখা দিয়েছে ঠান্ডা জনিত নানা রোগ বালাই। রাতে বৃষ্টির ফোঁটার মতো পড়ছে কুয়াশা। বুধবার সকালে তাপমাত্রা ছিল ১১ক্ক ডিগ্রী সেলসিয়াস। মঙ্গলবার ০৯ জানুয়ারি সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রী এবং সর্বোচ্চ ২৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সূর্যাস্তের সাথে সাথে ঘটন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় রাস্তা ও মাঠঘাট। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে বের হচ্ছে না সকল শ্রেণী পেশার মানুষজন। 

এদিকে, রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দুপুর পর্যন্ত ঠান্ডা বেশি অনুভূত হয়েছে। এ অবস্থায় শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে সময় মতো কাজে বের হতে পারছে না। বামনাছড়া সোনারীপাড়া এলাকার কৃষি শ্রমিক আসাদুজ্জামান আসাদ এবং নুর নবী ও তাইজুল ইসলাম বলেন, আজ ঠান্ডায় হাত-পা বরফ হয়ে যাচ্ছে। মাঠে কাজ করা যাচ্ছে না। বাতাসে কাবু করে ফেলছে। ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে হাজারো কৃষক কৃষাণী। ফলে মাঠ পর্যায়ে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে কৃষি কাজকর্ম, এ অবস্থায় পিছিয়ে যাচ্ছে চলতি মৌসুমের ইরিগেশন। আলু বেগুন এবং অন্যান্য তরীতরকারী ক্ষেত পরিচর্যায় হিমসিম খাচ্ছে আবাদীগণ। ওদিকে, মৎস্য জীবীগণ পড়েছে চরম বেকায়দায়। পরিবার পরিজন নিয়ে আছেন মারাত্মক উৎকণ্ঠায়

অপরদিকে, গৃহপালিত পশু পাখি নিয়ে রীতি মতো দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কুড়িগ্রামের খামারী ও গ্রামের মানুষজন। 

ভিন্ন দিকে, বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত লোকজন সংস্থার চাপে চাকুরী বাঁচানোর তাগিদে তীব্র ঠান্ডা উপেক্ষা করে, কিস্তির টাকা আদায়ের জন্য বাড়ী বাড়ী গিয়ে ধরনা দিচ্ছে বলে জানা গেছে এনজিও-র অনেক মাঠ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ। 

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, এই রকম তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন থাকবে। তবে এ মাসের মধ্যে আরও একটি শৈত্য প্রবাহ এ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে।

নীলফামারী সংবাদদাতা : গত ৩ দিন ধরে শৈত্য প্রবাহ বিরাজ করছে উত্তরের জেলা নীলফামারীতে।সেই সাথে উত্তরের হিমেল বাতাশ আর ঘন কুয়াশার কারণে চরম দূর্ভোগে পড়েছে এ জেলার দরিদ্র মানুষজন। মেঘলা আকাশ আর কুয়াশার কারণে তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি এই জেলায়। ভোর রাত থেকে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পাত পড়ছে। দিনের বেলায় হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষজন বাহিরে বের হতে না পেরে পড়েছেন দুর্ভোগে। এ দিকে ঘন কুয়াশার কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠা-নামা ব্যহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ 

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হোসেন জানান বুধবার সকাল ৬টায় নীলফামারীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক শুন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।

https://www.dailysangram.info/post/545727