৮ জানুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ৬:৪১

ভোট দিতে হাঁকডাক কেন্দ্রে নেই লাইন

 

বেলা ৩টা ১৫ মিনিট। ভোট প্রদানের আর ৪৫ মিনিট বাকি। এমন সময় ঢাকা-৪ আসনের জুরাইন শেখ কামাল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে গিয়ে দেখা যায়, একজন আনসার সদস্য হাঁকডাক ছাড়ছেন, আর মাত্র ৪৫ মিনিট বাকি। এখনো যারা ভোট দেননি তারা ভোট দিতে আসেন। এ সময় ওই কেন্দ্রে প্রবেশ করে দেখা যায়, স্কুলের সামনে ভোটারদের কোনো লাইন নেই। শুধু পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। ওই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় নারী ও তৃতীয় তলায় পুরুষ ভোটারদের জন্য দু’টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় নারী ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মোট তিন ৫৭৮ জন ভোটারের জন্য পাঁচটি কক্ষে ৯টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসার ওয়ালিউল্লাহ মিয়া জানান, বেলা ৩টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত সবগুলো বুথে ভোট পড়েছে ৭০৬টি, যা মোট ভোটারের ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এর মধ্যে ৮ নম্বর বুথে দেখা যায় ৩৯৫ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৭২ জন। আর ৫ নম্বর বুথে ৪৩১ জনের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১০৫ জন। তৃতীয় তলায় পুরুষ ভোট কেন্দ্রে দেখা যায়, মোট ভোটার রয়েছেন এক হাজার ৯৭১ জন। প্রিজাইডিং অফিসার মফিজুর রহমান জানান, বেলা ২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২৩ শতাংশ। তবে ৩ নম্বর বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বেলা ৩টা ২০ মিনিটে জানান, মোট ৫০৩ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১৭১ জন। এ দিকে গতকাল রোববার সকাল ৮টায় ভোট শুরুর পর ঢাকা-৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর আসন এলাকার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ভোটারদের উপস্থিতি খুবই কম। কেন্দ্রে ভোটারদের কোনো লাইন নেই। মাঝে মাঝে দু-একজন এসে ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা-৭ আসনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের এ এম সি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে দিয়ে একজন ভোটার হেঁটে যাচ্ছেন। তিনি ভোট দিতে এসেছেন। কিন্তু কেন্দ্রের বাইরে গলির রাস্তা। ভেতরে ভোটারদের কোনো লাইন নেই। রাস্তায়ও কোনো লাইন না থাকায় তিনি বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। জানতে চান এ কেন্দ্রে কি এবার ভোট হচ্ছে না? পরে তিনি ওই বিদ্যালয়ে দুই তলার দিকে তাকিয়ে সেখানে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের দেখে অবশেষে নিশ্চিত হন ওই বিদ্যালয়ে কেন্দ্র রয়েছে। এরপর তিনি ভোট দিতে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারদের কোনো লাইন নেই। মাঝে মাঝে দু-একজন এসে ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। পিজাইডিং অফিসার সাদিকুর রহমান খান জানান, কেন্দ্রে মোট আড়াই হাজার ভোটার রয়েছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত ছয়টি বুথে ভোট পড়েছে শ’খানেক। ওই কেন্দ্রের পাশেই কাউন্সিলর মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদের অফিসের সামনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সোলায়মান সেলিমের সমর্থকরা ভোটারদের স্লিপ দিচ্ছেন। সেখানে বসা ছিলেন, স্থানীয় ৮ নম্বর ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মান্নান বেপারী। কাউকে ওই পথ দিয়ে যেতে দেখলেই তাকে থামিয়ে জানতে চাচ্ছেন ভোট দিয়েছেন কি না? না বললে তাকে দ্রুত ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে ভোটারদের লাইন নেই ঠিকই তবে দু-একজন এসে ভোট দিয়ে আবার চলে যাচ্ছেন। রিকশা রিজার্ভ করা আছে। তারা ভোটারদের নিয়ে আসছেন।
শেষ মুহূর্তে মাইকিং করে ভাটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান : ঢাকা-৬ আসনের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে দুপুরের দিকে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তে মাইকিং করে ও বাসায় বাসায় গিয়ে কলিংবেল বাজিয়ে ভোটারদের ডাকছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ৪২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ নাসির ও তার অনুসারীরা মাইকিং করে ভোটারদের ভোট দিয়ে নিজের অধিকার আদায়ের কথা বলেন।

সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-৬ আসনের সূত্রাপুর থানার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথ দাস লেনসহ বিভিন্ন অলিগলিতে হ্যান্ড মাইকে বলা হচ্ছে, নাসির ভাইয়ের সালাম নিন নৌকা মার্কায় ভোট দিন। যারা এখনো ভোট দেননি, তারা অতিদ্রুত ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিন। এ সময় তারা বিভিন্ন বাসায় গিয়ে কলিংবেল বাজিয়ে ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য স্থানীয় জনসাধারণকে আহ্বান জানান। মাইক দিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে আহ্বান জানানোর বিষয়ে সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা নৌকা সমর্থিত রিফাত (২৫) নামের একজন কর্মী বলেন, উপরের নির্দেশে আমরা মাইকিং করে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। ভোট দেয়া সবার অধিকার। আমি নৌকার সমর্থক বলে যে শুধু নৌকায় ভোট দিতে বলতে যাচ্ছি বিষয়টি এমন নয়। আমি কেন্দ্রে গিয়ে সবার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার অনুরোধ করছি।

এ দিকে বেলা ২টা পর্যন্ত ঢাকা-৬ আসনের ৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১৯.৪১ শতাংশ। কেন্দ্র নম্বর ১ কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালে মোট ভোটার দুই হাজার ১১৪ জন, ভোট পড়ে ৩৫৭টি। কেন্দ্র নম্বর ৪ অল কেয়ার প্রি ক্যাডেট অ্যান্ড হাইস্কুলে মোট ভোটার এক হাজার ৮৭২ জন। ভোট পড়ে ৩৫০টি। কেন্দ্র নম্বর ১১ পোগোজ ল্যাবরেটরি অ্যান্ড হাইস্কুলে মোট ভোটার দুই হাজার ৬৬৪ জন, ভোট পড়ে ৯৮৩টি। কেন্দ্র নম্বর ১২ ইস্টবেঙ্গল ইনস্টিটিউশনে মোট ভোটার দুুই হাজার ২৭৯ জন, ভোট পড়ে ৩২৮টি। কেন্দ্র নম্বর ১৫ বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট ভোটার তিন হাজার ২২০ জন, ভোট পড়ে ৫৭০টি। কেন্দ্র নম্বর ১৬ নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট ভোটার এক হাজার ৭৯২ জন, ভোট পড়ে ২৯৩টি। কেন্দ্র নম্বর ১৯ গোয়ালঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ভোটার তিন হাজার ৯৫১ জন, ভোট পড়ে এক হাজার ৩৫টি। কেন্দ্র নম্বর ৩১ শহীদ নবী উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট ভোটার দুই হাজার ৬২৫ জন। ভোট পড়ে ২৩৬টি। কেন্দ্র নম্বর ৫৬ ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট ভোটার দুই হাজার ৪২০ জন, ভোট পড়ে ৩০২টি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/804667