৪ জানুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৮

টিসিবি এবং কম দামের খাদ্য

দরিদ্র জনগণকে বাজারের চাইতে কম দামে খাদ্য সরবরাহের কার্যক্রম আরো একবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সে কারণে রাজধানীর কিছু এলাকায় পণ্য বিক্রিও বন্ধ করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশÑ টিসিবি। গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে জানানো হয়েছে, মাঝখানে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও ক্রমাগত বেড়ে চলা খাদ্য সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের নবেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে টিসিবি নতুন পর্যায়ে খাদ্যপণ্য বিক্রি শুরু করেছিল। তখন সিদ্ধান্ত ছিল, টিসিবির পরিবার কার্ডধারীদের কাছে মাসে একবার করে চাল, মসুর ডাল, ভোজ্য তেল, চিনি ও পেঁয়াজের মতো পণ্য বিক্রি করা হবে। এ উদ্দেশে ট্রাকে করে বিশেষ কয়েকটি এলাকায় পণ্য নিয়ে যাওয়া হবে। পণ্য নিয়ে যাচ্ছিলও টিসিবির লোকজন। কিন্তু সকল এলাকায় নয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, টিসিবির পণ্য গেছে প্রধানত দু’টি স্থানে- ব্যাংক পাড়া মতিঝিল এবং সচিবালয় সংলগ্ন এলাকায়। এ দু’টি স্থানে কার্ডধারীরা দুই কেজি করে মসুর ডাল এবং পেঁয়াজ পেলেও সকলে চাল ও সয়াবিন পায়নি। আলুও খুব কম সংখ্যক মানুষ পেয়েছে। ফলে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে কার্ডধারী ক্রেতাদের মধ্যে। 

প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, টিসিবির ট্রাক সাধারণত সকল বস্তি এলাকাতেই যাতায়াত করতো। সেসব এলাকার কার্ডধারীরাও কম মূল্যে পণ্য কেনার সুযোগ পেতো। কিন্তু বিগত কিছুদিনে অবস্থায় পরিবর্তন ঘটেছে। আজকাল ট্রাকগুলো কর্তাব্যক্তিদের পছন্দের বাইরে আর কোনো এলাকায় পণ্য নিয়ে যাচ্ছে না। আসলে যেতে দেয়া হচ্ছে না। সে কারণে একদিকে বঞ্চিত হচ্ছে এমনকি কড়াইলের মতো বিশেষভাবে পরিচিত বিভিন্ন বস্তি- যেসব বস্তির কোনো কোনোটিতে লক্ষাধিক পর্যন্ত দরিদ্র মানুষ বসবাস করে। কম মূল্যে পণ্য পাওয়া তাদের বিশেষ অধিকার হলেও বস্তিগুলোতে পণ্য পাঠাচ্ছেন না কর্তা ব্যক্তিরা। কথা শুধু এটুকুই নয়, টিসিবির কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সংস্থাটি বেশি ব্যস্ত রয়েছে মতিঝিল, সচিবালয়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, পল্টন, কারওয়ানবাজার, তেজগাঁও, মিরপুর ইসিবি চত্বর, উত্তরা আজমপুর, মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এবং ধানমন্ডির মতো এমন সব এলাকায়Ñযেসব স্থানে বেশি দরিদ্রদের কম বসবাস। এ সবের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলের সামনের এলাকাসহ কোনো কোনো এলাকায় টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক এমনকি ১০ বার পর্যন্ত গেছে। খবরে বলা হয়, উত্তরা ও ধানমন্ডির মতো অভিজাত এবং অবস্থাপন্নদের এলাকায় টিসিবির ট্রাক গেছে ১৮ থেকে ২৫ বার পর্যন্ত। কিন্তু একই টিসিবি একদিকে কড়াইলের মতো বহু বস্তিতে ট্রাক পাঠায় নি। এজন্যই টিসিবির বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করার অভিযোগ উঠেছে। বলা হয়েছে, টিসিবি এ ধরনের অবহেলা না করলে রাজধানীতে পণ্য কিনতে গিয়ে মানুষকে এত বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হতো না।

আমরা মনে করি, কর্মকর্তাদের উচিত টিসিবির কার্যক্রমে দ্রুত পরিবর্তন আনা এবং পরিবার কার্ড ইস্যু করা থেকে পণ্য বিক্রি করা পর্যন্ত সকল বিষয়ে জনগণের সুবিধা ও লাভের দিককে অগ্রাধিকার দেয়া।

https://www.dailysangram.info/post/545078