৪ জানুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৮

এ অসভ্যতা থামাতেই হবে

 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে থার্টিফার্স্ট নাইটে কিছু মানুষ যে ধরনের উন্মত্ততায় মেতে ওঠে, তা কোনওভাবেই গ্রহণীয় হতে পারে না। পুলিশের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এ বছরও থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের সময় রাজধানীতে বেপরোয়া আতশবাজি এবং ফানুস উড়তে দেখা গেছে। মেট্রোরেলের লাইনের তারে আটকে থাকা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ফানুস অপসারণ করা হয়েছে। এটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারতো। গত কয়েক বছর ধরেই থার্টিফার্স্ট নাইটে আতশবাজির বিকট শব্দে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি ও রোগীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

গত বছর জন্মগতভাবে হৃদযন্ত্রে ছিদ্র থাকা এক শিশু থার্টিফার্স্ট নাইটে আতশবাজির শব্দে কীভাবে ছটফট করেছে, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হয়েছিল। পরদিন শিশুটির মৃত্যুর খবর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। থার্টিফার্স্ট নাইটে যারা বেপরোয়া আচরণ করে, এসব খবর কি তাদের বিবেক স্পর্শ করে না?

এবার থার্টিফার্স্ট নাইটে রাজধানীসহ সারাদেশে আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ফানুস ওড়ানো-এসব কারণে অতিষ্ঠ হয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে রাতভর পুলিশের সহায়তা চেয়েছেন অসংখ্য মানুষ। একই রাতে ফানুস ওড়াতে গিয়ে রাজধানীতে তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। কামরাঙ্গীরচরের একটি বাড়ির ছাদে এ ঘটনা ঘটে।

দগ্ধদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জাতীয় জরুরি সেবা সূত্রে জানা যায়, ফোন কল পেয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর গুলশান, রামপুরা, বাড্ডা, ইস্কাটন গার্ডেন, বাংলামোটর, মগবাজার, মহাখালী, মিরপুর, যাত্রাবাড়ি, কল্যাণপুর, শ্যামলি, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রোববার সন্ধ্যার পর থেকে মাঝেমধ্যে পটকা ফোটানোর শব্দ পাচ্ছিলেন তারা। রাত ১২টার আগে-পরে তা বেড়ে যায় বহুগুণ। কোনও কোনও এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত বেপারোয়া আতশবাজি ও পটকা ফোটানো হয়। বাসাবাড়ির ছাদ ও ফাঁকা জায়গা থেকে ফানুস ওড়াতে দেখা যায়। আতশবাজির আওয়াজ ও আগুনে অনেক পাখি মারা যায়। এমনকি তা দেয়া হাঁস-মুরগির ডিমও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন অনুসারে লাইসেন্সধারী ছাড়া কেউ পটকা ফোটাতে পারে না। কাজেই আইন অমান্যকারীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শুধু নিষেধাজ্ঞা জারি করে বা নির্দেশনা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দায়িত্ব শেষ করলে এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। কাজেই এ ঘটনা প্রতিরোধে অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। থার্টিফার্স্ট উদযাপনকালে অনেক স্থানে লেজার রশ্মির ব্যবহারও দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, এটিও একটি বিপজ্জনক কর্মকাণ্ড। বিশেষ করে বিমানবন্দরের আশপাশে লেজার রশ্মির ব্যবহার ফ্লাইট ওঠানামার সময় পাইলটকে বিভ্রান্ত করতে পারে। এটি পাইলটের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ারও কারণ হতে পারে। যত্রতত্র লেজার রশ্মির ব্যবহারে বিধিনিষেধ রয়েছে। কেউ এ বিধিনিষেধ অমান্য করলে তাকে আইনের আওতায় আনা দরকার। থার্টিফার্স্ট নাইটে কেন এবং কীভাবে লেজার রশ্মির ব্যবহারের প্রচলন হলো, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এসবের সহজলভ্যতা দূর করতে হবে। ফানুসের উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে কেবল নিষেধাজ্ঞা আরোপে কতটা সুফল মিলবে, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্যও নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। অন্যথায় থার্টিফার্স্টের অসভ্যতা যেমন অব্যাহত থাকবে, তেমনই মারাত্মক কোনও দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। তখন হয়তো আফসোসের অবধি থাকবে না।

 

https://www.dailysangram.info/post/545079