১০ মে ২০১৭, বুধবার, ১০:১২

হাওরে চালের জন্য লম্বা লাইন

ওখানে কম দামে চাল পাবেন। এ আশায় সকাল থেকেই ওই দোকানগুলোতে ভিড় হাওর তীরের ক্ষতিগ্রস্তদের। ওএমএসের চালের জন্য এখন দীর্ঘ লাইন। কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ঘোষণা আসে চাল শেষ। তাই অসহায় হয়ে খালি হাতে
ফিরতে হচ্ছে বাড়িতে। জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার থেকে হাকালুকি হাওর তীরে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নায্যমূল্যে চালের দোকানের ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। ওই দিনই বিক্রি শুরু হয় দু-একটি দোকানে। তবে সোমবার থেকে পুরোদমে শুরু হয়েছে ওএমএসের চাল বিক্রির কার্যক্রম। ওএমএসের চাল বিক্রির জন্য হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখায় নিয়োগ পান ১৪ জন ডিলার। যারা শনিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পরিবার প্রতি ৫ কেজি করে ২০০ জনের নিকট প্রতি কেজি ১৫ টাকা দামে বিক্রির জন্য ১ টন চাল পান। কিন্তু বরাদ্দকৃত চাল বিক্রির জন্য দোকান খোলার আগেই দীর্ঘ লাইন ৫-৬শ মানুষের। লাইনের প্রথম থেকে ২শ লোক চাল কিনতে পারলেও অধিকাংশ মানুষ শূন্য হাতেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এখন এমন দৃশ্য হাকালুকির হাওর তীরে ওএমএসের চাল বিক্রির প্রতিটি দোকানে। প্রতিদিনই এতো লোকের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দোকানদারদের। ক্ষতিগ্রস্তদের তুলনায় চালের যে বরাদ্দ হয়েছে তা একেবারেই অপ্রতুল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ক্ষতিগ্রস্ত হাওর পাড়ের মানুষ ও ওএমএসের চাল বিক্রেতারা চালের বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য জোর দাবি জানান। তাদের তথ্য মতে, প্রতিদিনই চাল নিতে আসা লোকজনের মধ্যে ২ হাজার ৮শ লোক চাল কিনতে পারলেও পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন প্রায় ৬ হাজার লোক। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায় কুলাউড়ায় ওএমএসের চাল বিক্রির জন্য ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৭ জন। জুড়ীতে ৩ জন। বড়লেখায় ৪ জন। ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নগুলোর জনপ্রতিনিধিরা জানান, হাওর তীরের ক্ষতিগ্রস্তদের তুলনায় নায্য মূল্যের চালের দোকান যেমন কম তেমনি বরাদ্দও কম। তাই প্রতিদিনই এ নিয়ে তাদের নানা কথা শোনতে হচ্ছে। তাদের দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনায় যেন তাদের জন্য দ্রুত বাড়ানো হয় চালের বরাদ্দ ও নায্যমূল্যের দোকান। হাকালুকি হাওর তীরের বড়লেখা উপজেলার ৪ ইউনিয়নের বোরো ফসল হারানো ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ওএমএস-এর চাল বিক্রি কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট ডিলারদের দোকানে চাল বিক্রি শুরুর ঘন্টার মধ্যেই ওএমএসের সব চাল শেষ হয়ে যাওয়ায় শত শত দুর্গত নারী-পুরুষ চাল না নিয়েই ফিরছেন। জানা যায়, হাকালুকি হাওর পাড়ের বড়লেখা উপজেলায় ওএমএসের চাল বিক্রির জন্য ৪ জন ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। তালিমপুর ইউনিয়নে রেজাউল হোসেন, সদর ইউনিয়নে সায়ফুর রহমান, বর্নি ইউনিয়নে সুমন চন্দ্র দাস ও সুজানগর ইউনিয়নে মো. ছায়াদ আহমদকে ন্যায্য মূল্যে ওএমএসের চাল বিক্রির জন্য নিয়োগ করা হয়। রোববার বিকালে ডিলাররা খাদ্য গুদাম থেকে ১ টন করে চাল উত্তোলন করে সোমবার সকাল থেকে বিক্রি শুরু করেন। তালিমপুর ইউনিয়নের ডিলার রেজাউল হোসেনের বিক্রয় কেন্দ্রে নিয়ম অনুযায়ী ২শ’ জন চাল ক্রয় করতে পারলেও লাইনে দাঁড়িয়ে খালি হাতে ফিরেন কয়েক শ’ নারী-পুরুষ। ডিলার জানান, প্রতিদিন জনপ্রতি ৫ কেজি করে ২০০ জনের কাছে ১৫ টাকা দামে বিক্রির জন্য তাদের ১ টন করে চাল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বিক্রি শুরু করতেই দোকানে ৪-৫শ’ মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। চালের সরবরাহ বৃদ্ধি না করলে খোলাবাজারে চাল বিক্রিতে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন তারা। বড়লেখার হাওর পাড়ের বাসিন্দারা জানান, তালিমপুর ও সদর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ওএমএসের দোকান না খোলে অনেকটা শহর এলাকায় ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। এতে হাওর পাড়ের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনকে ৭০-৮০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে চাল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তারা হাওরপাড়ের খোঠাউরা, কানুনগোবাজার, সোনাতোলা এলাকায় ডিলার নিয়োগের ও ১ টনের স্থলে প্রতিদিন ৩-৪ টন করে চাল সরবরাহের দাবি জানান। এদিকে হাওর তীরের ৩টি উপজেলায় ১৪ জন ডিলারের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যের এ চাল বিক্রির কার্যক্রম শুরু হওয়ায় হাওরপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। এখন থেকে একমাস প্রতিদিন কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার হাওর তীরের ২ হাজার ৮শ’ লোক তাদের পরিবারের জন্য ৭৫ টাকায় ৫ কেজি চাল পাবেন। এবছর চৈত্র মাসের অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হন দেশের বৃহত্তম হাকালুকি হাওর পাড়ের বোরো চাষি ও মৎস্যজীবীরা। হাওর পাড়ের এলাকাগুলোয় দেখা দেয় হাহাকার। সব হারিয়ে দিশেহারা হাওর পাড়ের মানুষের এখন একমাত্র ভরসা সরকারি সহযোগিতার ওপর। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্তরা বঞ্চিত হন সরকারি তরফে প্রাপ্ত নানা সহযোগিতার। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার ঘোষিত ওএমএসের চালের জন্য প্রতিক্ষায় ছিলেন হাওর তীরের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর হাওর পাড়ের বিভিন্ন এলাকায় সোমবার থেকে পুরোদমে শুরু হয় ন্যায্যমূল্যে নির্দিষ্ট দোকানে ওএমএসের চাল বিক্রির কার্যক্রম। এমন কার্যক্রমে ক্ষতিগ্রস্তরা আশ্বস্ত হলেও ওএমএসের চাল চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় তারা হতাশ। তবে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায় ওএমএসের চালের বরাদ্দ বৃদ্ধি ও নায্য মূল্যের দোকান বড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তারা চিঠি দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন ক্ষতিগ্রস্থদের বিবেচনায় হয়ত বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=64893&cat=3/