১০ মে ২০১৭, বুধবার, ১০:০৭

সরকারি কর্মচারীদের বেতন ফের বাড়ানোর উদ্যোগ

নতুন বেতন স্কেল পুরোপুরি কার্যকর করার এক বছরও যায়নি; এরই মধ্যে আবারও সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা তাঁদের জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে একটি সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল মঙ্গলবার জারি করা এ প্রজ্ঞাপনে কমিটিকে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয়করণের উপায় নির্ধারণের জন্য সার্বিক বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করে একটি সুপারিশমালা প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে। কমিটি আগামী ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।

সরকারি কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ বেতন-ভাতা নির্ধারণ ও পরিবর্ধনের বিষয় পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদসচিবকে (সমন্বয় ও সংস্কার)। কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন অর্থ বিভাগের নিযুক্ত প্রতিনিধি। এ ছাড়া কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০১৫ সালে যখন নতুন পে স্কেল কার্যকর করা হয় তখনই বলা হয়েছিল, সরকার কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর জন্য আর নতুন কোনো কমিশন গঠন করবে না। এই পরিস্থিতিতে কিভাবে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের বেতন সমন্বয় করা হবে সেই সুপারিশ করার জন্য মন্ত্রিপরিষদসচিবকে (সমন্বয় ও সংস্কার) আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ’
২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভায় অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদন করা হয়। এ কাঠামো ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়। তবে পুরোপুরিভাবে ভাতাসহ বেতন স্কেল কার্যকর করা হয় ২০১৬ সালের ১ জুলাই। নতুন পে স্কেলে সরকারি কর্মচারীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। ওই পে স্কেলে বৈশাখী ভাতা নামে নতুন একটি ভাতা দেওয়া হয়েছে। মূল বেতন বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৫ সালে সরকারের খরচ বেড়েছে ১৫ হাজার ৯০৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ভাতা বৃদ্ধির পর সরকারের অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে বছরে ২৩ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, এই বেতন বৃদ্ধির কারণে সব কিছুর দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। নতুন পে স্কেলে চতুর্থ শ্রেণির চাকরির প্রারম্ভিক পদ ২০তম গ্রেডের বেতন ১০১.২৩ শতাংশ বাড়িয়ে আট হাজার ২৫০ টাকা করা হয়েছে। পুরনো স্কেলে এই বেতন ছিল চার হাজার ১০০ টাকা। সচিব পদমর্যাদার গ্রেড-১-এর বেতন ৯৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৭৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের বেতন স্কেলে গ্রেড-১-এর বেতন ছিল ৪০ হাজার টাকা। বেতন কাঠামোর ২০টি গ্রেড বহাল রাখা হলেও সিনিয়র সচিবের একটি বিশেষ গ্রেড সৃষ্টি করা হয়েছে। সিনিয়র সচিবের আগের বেতন ছিল ৪২ হাজার টাকা। নতুন কাঠামোতে এই বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৮২ হাজার টাকা। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের স্পেশাল গ্রেডের বেতন ৯১.১১ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। সর্বোচ্চ এই দুই প্রশাসনিক কর্মকর্তার আগের বেতন ছিল ৪৫ হাজার টাকা।
গত পে স্কেলে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। আগে তাঁরা মূল বেতনের ৮০ শতাংশ পেনশন পেতেন। নতুন বেতন কাঠামোতে এটা ৯০ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সর্বনিম্ন নিট পেনশনের পরিমাণ মাসে দুই হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর চিকিৎসা ভাতা ৬৫ বছর পর্যন্ত ৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়স হলে এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
আর পাওনা সাপেক্ষে অর্জিত ছুটি নগদায়নের সুবিধা হিসেবে ১২ মাস হতে ১৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া হচ্ছে। গত পে স্কেলে দীর্ঘদিনের পুরনো পদ্ধতি টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করা হয়েছে। এর পরিবর্তে সব কর্মচারীকে বিভিন্ন হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। আগে টাইম স্কেলে যে বেতন বেড়েছে এখন তার চেয়ে অনেক বেশি হারে ইনক্রিমেন্ট হচ্ছে। নতুন পে স্কেলে চাকরিজীবীদের শিক্ষা সহায়ক ভাতা, চিকিৎসা, যাতায়াত, ধোলাই ও টিফিন ভাতা বাড়ানো হয়েছে।
গত জুলাই থেকে এ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি প্রায় ৫ শতাংশ। এই হিসাবে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও ৫ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে। তবে সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, এখনই এ মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করা হবে না। এ কমিটি শুধু কিভাবে সমন্বয় করা হবে সেই সুপারিশ করবে। তারপর স্থায়ী একটি কাঠামো দাঁড় করানো হবে। সেই স্থায়ী কাঠামোই বেতন বাড়ানোর চূড়ান্ত সুপারিশ করবে। আগামী নির্বাচনের আগে সরকারি কর্মচারীদের অনুকম্পা আদায়ের জন্য বর্ধিত বেতনের হার ঘোষণা করা হতে পারে বলে সূত্র জানায়। তবে তাঁর মত হলো, সরকারের বেতন বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ সরকারের বেতন বাড়ানোর পর এখনো বিভিন্ন সেক্টরে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হয়নি। এখনো রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়নি। সাংবাদিকরা আন্দোলন করছেন তাঁদের জন্য নতুন ওয়েজ বোর্ড ঘোষণার। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর ঘোষণা এলেই তার প্রভাব পড়ে বাজারে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে কমিটি করা হলেও সরকার ধীরগতিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলে তিনি মনে করেন।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/05/10/495904