৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবার, ১:০১

তারুণ্যের শক্তি ও জাতির ভবিষ্যৎ

-ইবনে নূরুল হুদা

 

তরুণ বলতে নবীন, নবযুবক, অপরিণত; নবযৌবনপ্রাপ্তদের বোঝানো হয়। তারুণ্য জীবনের সেই সময় যখন একজন মানুষ তরুণ থাকে। কিন্তু শৈশব এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝামাঝি সময়কেও তারুণ্য বলা হয়। আরেকভাবে বলা যায় যে, ‘যার মধ্যে সৌন্দর্য, সজীবতা, জীবনীশক্তি উদ্দীপনা ইত্যাদি থাকে সেই তরুণ। তারুণ্য কখনও সময়ের সাথে বা নির্দিষ্ট কোন বয়সসীমায় বেঁধে রেখে বর্ণনা করা যায় না। তারুণ্য একটি অভিজ্ঞতা বা নির্ভরতা, যা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী চিহ্নিত করা যেতে পারে।

তরুণ ও তারুণ্য সবসময় অপ্রতিরোধ ও দুর্জেয়। পৃথিবীতে অনেক বড় বড় অর্জন এসেছে তরুণ ও তারুণ্যের মাধ্যমেই। মূলত, আজকের তরুণরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। বিশে^র বড় বড় বিজয় ও সাফল্য এসেছে এই তরুণদের হাত ধরেই। আর প্রবীণদের প্রজ্ঞা ও পরামর্শ, নবীনের বল-বীর্য, সাহস ও উদ্দীপনায় বিশ^ ইতিহাসের গতিপথই ঘুরিয়ে দিয়েছে। অসম্ভবকে সম্ভব করতে ঝুঁকি নিতে পারে শুধু তরুণরাই। প্রথাভাঙায় দুঃসাহস ও অসাধ্য সাধনের স্বপ্ন দেখানোও তাদের পক্ষেই সম্ভব। ইতিহাস তো সে কথারই সাক্ষ্য দেয়। তাই নতুন শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তরুণদেরকেই প্রস্তুত করতে হবে। তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে যোগ্যতর নাগরিক হিসাবে; যাতে তারা দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালন করতে হবে তরুণ সমাজকেই।  

ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিশে^ যত দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালিত হয়েছে তার সবগুলোর সাথে তরুণ্যের সম্পৃক্ততা ছিল। এ বিষয়ে বৈশি^ক প্রতিযোগিতাও বেশ লক্ষ্যণীয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন মহাকাশের কক্ষপথে তরুণদের দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু বসে থাকেনি। ১৯৬৯-এ নিল আর্মস্ট্রংয়ের নেতৃত্বে তিন মার্কিন তরুণ নভোচারী ‘অ্যাপোলো-১১’ নিয়ে সোজা চাঁদে গিয়ে নেমে পড়েছিলেন। সে এক বিস্ময়কর এবং অবিশ্বাস্য ঘটনা। মূলত, জীবন বাজি রেখে অনিশ্চিত যাত্রায় বেরিয়ে পড়ার দুঃসাহস শুধু তরুণদেরই থাকে; প্রবীণ ও বৃদ্ধের নয়। মূলত, সকল দিক থেকেই তরুণরাই বেশ অগ্রগামী। আর তাদের মাধ্যমে অনেক অসাধ্য সাধন করা সম্ভব।

তারুণ্যের কর্মপরিধি অনেক বিস্তৃত ও ব্যাপক। নির্দিষ্ট কোন গ-ির মধ্যে তা মোটেই সীমাবদ্ধ নয়। বস্তুত, শুধু মহাকাশে অভিযান পরিচালনা করাই তারুণ্যের কাজ নয় বরং তারুণ্যের প্রকাশ ঘটতে পারে জীবনের ও জাগতিক যেকোনো বিষয়ে। আর তা বিশ^বাসী ষাটের দশকে ভালভাবেই প্রত্যক্ষ করেছে। তরুণরা স্থিতাবস্থা পছন্দ করেন না; তারা পরিবর্তন প্রত্যাশী। বহু বড় বড় প্রবীণ ও প্রাজ্ঞ দার্শনিক ছিলেন, তাদের তত্ত্বের মূল্য বিরাট, কিন্তু পরিবর্তনের জন্য পথে নামতে হয়েছিল মার্টিন লুথার কিং-এর মত তরুণকে। বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে তার শান্তিপূর্ণ সংগ্রাম। ১৯৬৩- তে ওয়াশিংটনে তার লংমার্চের কথা শুনে এবং তার স্বপ্নের ঘোষণায় বিশে^র বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই মানুষ উদ্দীপ্ত হয়েছিল। আমরাও উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম স্বাধিকার অর্জন আমাদের জন্য কঠিন নয়।

বস্তুত, তারুণ্য হলো আগুন, যা মানুষের কল্যাণে ও ধ্বংসাত্মক কাজে যুগপৎভাবেই ব্যবহার করা যায়। তারুণ্য যখন মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়, তা দিয়ে অন্যায়-অবিচার দূর করা সম্ভব। দেশে দেশে মুক্তিসেনারা যে কাজটি করেন। একাত্তরে বা তারও আগে বাংলাদেশের তরুণরা বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সে ভূমিকা পালন করেছেন। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, দেশে এবং বিদেশে বাংলাদেশের তরুণদের অনেকের ভূমিকাই গৌরবজনক। যা কোনভাবেই বিস্মৃত হওয়ার মত নয়।

মূলত, যে আগুন মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয়, সে আগুনকেই মানুষের ভয়। ধ্বংসাত্মক কাজেও তরুণরা ব্যবহৃত হন, তার পরিণাম তাদের জন্য যেমন খারাপ, তেমনি সমাজের জন্যও। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ৮০ ভাগেরই বেশি ছিলেন তরুণ, যাদের বয়স ৪০-এর নিচে। আর সঙ্গত কারণেই আমাদের বিজয়ও ছিল অনিবার্য। যার ফলশ্রুতি ছিল মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। 

বাংলাদেশের জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছর। আগামী ১৫ বছর পর তারাই রাষ্ট্রের ও সমাজের সব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের মেধা ও প্রতিভা বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে না দিলে তারা যে শুধু অযোগ্য নাগরিক হবেন তা নয়, তাদর একটি অংশ বিপথগামী হতে পারে। বাস্তবতা তো সেকথারই প্রমাণ বহন করে। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়।

আমাদের দেশের তরুণদের যোগ্যতার কোন অভাব নেই। তাদের কেউ পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতের চূড়ায় গিয়ে বাংলাদেশের পতাকা পুঁতে এসেছেন এবং সে ধারা এখনও অব্যাহত আছে এবং আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে। তারা অনেকে পৃথিবীর খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখছেন। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, আমাদের শিক্ষার মান এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে নিচে নেমে গেছে। সে জন্য দায়ী আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নয় বরং সরকারের ভ্রান্তনীতি। সর্বোপরি সীমাহীন উদাসীনতা। আমাদের যুবসমাজের কাছ থেকে তখনই ভাল কিছু আশা করতে পারি, যখন তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে যাবতীয় সহযোগিতা দেয়া সম্ভব হবে। কাউকে কিছু না দিয়ে তার থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না। যোগ্য ও মূল্যবোধ সম্পন্ন তরুণসমাজ জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাদের কাছে জাতির অনেক আশা ও দাবি। তবে রাষ্ট্রের কাছেও তাদের দাবি কম নয়। সেই দাবি পূরণ কোনো দয়া নয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব; নাগরিকের মৌলিক অধিকার। মূলত, তারুণ্য জীবনের এমন এক সময় যখন একজন মানুষ তরুণ থাকে। আরেকভাবে বলা যায় যে, ‘যার মধ্যে সৌন্দর্য, সজীবতা, জীবনীশক্তি ও উদ্দীপনা থাকে সেই তরুণ। তারুণ্যকে কখনও সময়ের সাথে বা নির্দিষ্ট কোন বয়সসীমায় বেঁধে রেখে বর্ণনা করা যায় না।

দেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক-পঞ্চমাংশ তরুণ ও যুবগোষ্ঠী হলেও তাদেরকে যোগ্যতর করে গড়ে তোলা বা প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি নেই। ফলে তরুণদের বেকারত্বের সবচেয়ে বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে সে অবস্থার বড় ধরনের অবনতি ঘটেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের জাতীয় জীবনের ওপর। এমন বাস্তবতায় দেশের অগ্রযাত্রায় বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির তাগিদ এসেছে বিভিন্ন মহল থেকেই। বিলম্বে হলেও বিষয়টি দেশ ও জাতির গোচরে এনেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি এ বিষয়ে সরকারের কাছে কিছু সুপারিশমালাও পেশ করেছে। টেকসই উন্নয়ন, সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ নির্মাণে তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা নিশ্চিতে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ ৯ দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। যা খুবই সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। 

এ বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির পক্ষে বলা হয়েছে, ‘সর্বশেষ প্রকাশিত জনশুমারিকে বিবেচনায় নিলে, তরুণ-যুব জনগোষ্ঠীর হাত ধরে দারুণ এক জনমিতিক সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। যদিও সেই সম্ভাবনার পুরোটাই নির্ভর করে এই বিপুল তারুণ্যকে কতটা কার্যকরভাবে দক্ষ করে কাজের সুযোগ তৈরি করে দেয়া যাচ্ছে তার ওপর। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সুখকর অবস্থায় নেই তার বড় প্রমাণ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ফর ইয়ুথ-২০২২’ এর তথ্য। প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০.৬ শতাংশ। যেখানে জাতীয় পর্যায়ে বেকারত্বের হার মাত্র ৪.২ শতাংশ। গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা মহামারির প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর বড় অংশই তরুণ। কিন্তু বিপুল এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে কর্মোপযোগী করার বিষয়ে এখনো কোনো সমন্বিত উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। যা শুধু হতাশার নয় বরং বেশ উদ্বেগের। যদিও দেশের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় এ উদ্যোগ নেয়া সবচেয়ে জরুরি।’

দেশে প্রচলিত শিক্ষা কর্মোপযোগী দক্ষতা তৈরিতে ব্যর্থ হচ্ছে এমন বাস্তবতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে টিআইবির পক্ষে বলা হয়েছে, ‘দেশে ৪৭ শতাংশ শিক্ষিতই বেকার। যার বড় কারণ হচ্ছে কাজে যোগ দেবার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা যাচ্ছে না প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে। এই সমস্যাটি ধীরে ধীরে প্রকট হয়ে উঠলেও তা সমাধানে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ এখনও দেখা যায় নি। সবচেয়ে আতঙ্কজনক বিষয়টি সম্ভবত দেশের যুব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারের প্রকৃত সংখ্যাকে অস্বীকার করা বা প্রকাশ না করার প্রচেষ্টা। এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মসংস্থান উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু এবং যুব কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও বাজেট বরাদ্দের উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবি। একইসাথে প্রয়োজন বৈশ্বিক মানদ- অনুযায়ী কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত ও কারিগরিভাবে দক্ষ করে তোলা। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য তরুণ-যুব জনগোষ্ঠীকে প্রস্তুত করতে না পারলে সংখ্যাতাত্ত্বিক বিচারেই খুশি থাকার চেষ্টা বুমেরাং হবে।’

এতে আরো বলা হয়, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতিক লভ্যাংশ অবস্থায় আছে বলে এক ধরনের আত্মতৃপ্তিমূলক প্রচার রয়েছে। তবে প্রকৃত অর্থে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে কাজে লাগাতে চাইলে উন্নয়ন পরিকল্পনায় তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠীর চাহিদা ও মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভয়-ডরহীনভাবে তরুণদের মত প্রকাশের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাদের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের পরিবেশ তৈরিও জরুরি।’

সম্ভাবনাময় যুব জনগোষ্ঠীকে জাতীয় অর্জনের মূল চালিকাশক্তি বিবেচনা করে, বিশেষ করে টেকসই উন্নয়ন, সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে তরুণদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতে টিআইবি নিম্নলিখিত সুপারিশ প্রস্তাব করেছে। আর এই সুপারিশগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলেই আমাদের নতুন প্রজন্মকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপযোগি করে গড়ে তোলা সম্ভব। সুপারিশমালায় বলা হয়েছে-

১. আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তরুণ জনগোষ্ঠীকে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত ও কারিগরিভাবে দক্ষ করে তুলতে হবে।

২. আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও নারী শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. জাতিসঙ্ঘের সুপারিশ অনুয়ায়ী শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।

৪. স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত থেকে তরুণরা কর্মহীন হয়েছে সেগুলো চালুর উদ্যোগ নিতে হবে।

৫. তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ প্রতিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প পেশার (যেমন- আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং) জন্য কর্মহীন তরুণ বা নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিতে হবে।

৬. সরকারি-বেসরকারি যে সকল চাকরির নিয়োগ, পরীক্ষা, যাচাই বন্ধ রয়েছে অবিলম্বে বিশেষ ব্যবস্থায় সেগুলোর প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নিতে হবে।

৭. সকল চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত এবং মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৮. কোভিডের কারণে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে সরকারিভাবে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

৯. তরুণ সমাজসহ সকল নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আইন ও নীতিকাঠামোর প্রয়োজনীয় আমূল সংস্কার করতে হবে। 

তারুণ্য হলো জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ও আনন্দের সময়। আর সৃজনশীলতা থাকে তারুণ্যের মধ্যেই। তরুণদের দিয়েই কোন দেশ ও জাতির শক্তি মাপা হয়। তাই এই মূল্যবান সময় তরুণ সমাজকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো উচিত। নিজেদেরকে যোগ্যতর হিসাবে গড়ে তোলার মূল দায়িত্ব তাদেরই। আর নতুন প্রজন্ম যাতে নিজেদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে এবং নিজেদেরকে যোগ্যতর হিসাবে গড়ে তুলে আগামী দিনে দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দিতে পারে সে পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র এই সাংবিধানিক দায়িত্ব কোনভাবেই এড়াতে পারে না। আর তারুণ্য-নির্ভর সমাজই পারে সকল চ্যালেঞ্জের মোবাবেলা করতে। একই সাথে পারে দেশের হারানো গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে। দেশ ও জাতি তরুণ ও তারুণ্যের কাছে সে আশা করে, যাতে তারা দেশ ও জাতির সোনালী ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।

https://www.dailysangram.info/post/544591