২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ৬:৫৭

ভরা মৌসুমেও আলুর ঘাটতি দেখিয়ে চড়ছে দর

 

পুরোনোর সঙ্গে শীত মৌসুমে যুক্ত হয় নতুন আলু। ক্রেতারাও শীতকালীন সবজির সঙ্গে স্বস্তিতে কেনেন পণ্যটি। তবে এবারের শীতে চিত্র একেবারে ভিন্ন। আলুর কেজি ঠেকেছে ৮০ টাকায়। এমন দামের পেছনে ব্যবসায়ীদের যুক্তি, হিমাগারে পুরোনো আলু নেই। আমদানিও বন্ধ। বৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়ায় বাজারে নেই পর্যাপ্ত নতুন আলু। এ জন্যই ভরা মৌসুমেও বেড়েছে আলুর দাম।

রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে নতুন আলুর কোনো সংকট পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীরা গত বছরের এ সময়ে চাষিদের কাছ থেকে যে পরিমাণ নতুন আলু পেয়েছেন, তার থেকে বেশি পাচ্ছেন বলে স্বীকার করছেন। তবে তাদের কেউ কেউ বলছেন, এ মুহূর্তে দাম কিছুটা বেশি হলে তা কৃষকের জন্য ভালো। কারণ নতুন আলু সরাসরি কৃষক থেকে পাইকারদের কাছে যাচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য নেই। কৃষক ভালো দাম পেলে উৎপাদন বাড়বে।

এদিকে এবার বীজ, সার ও কীটনাশকের বাড়তি দামের কারণে আগামী বছর আলুর দর আরও ভোগাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় সমাধান হিসেবে আবারও আইপির মেয়াদ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য মতে, আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ সপ্তম। বিগত বছরে কিছু রপ্তানিও হয়েছে। এ বছর দেশে আলু নিয়ে বেশ হইচই হয়। সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় গত সেপ্টেম্বরে আলুর দর বাড়তে শুরু করে। অক্টোবরে দাম অস্বাভাবিক পর্যায়ে ঠেকে হয় সর্বোচ্চ ৭০ টাকা। দাম নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৪ সেপ্টেম্বর খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং হিমাগার পর্যায়ে ২৬ থেকে ২৭ টাকা বেঁধে দেয়। এরপরও বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসায় কৃষি মন্ত্রণালয় ৩০ অক্টোবর আলু আমদানির অনুমতি দেয়। একই সঙ্গে সারাদেশে খুচরা বাজার ও হিমাগারে অভিযান চালায়। তাতে বাজারে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। অবশ্য কিছুটা কমে তখন কেজি ৫০ টাকার আশপাশে নেমে আসে। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে আবারও ঊর্ধ্বমুখী আলুর দর।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, হাতিরপুল ও কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, নতুন আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৮০ টাকায়। পুরোনো যথারীতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তবে বড় বাজারের তুলনায় এলাকাভিত্তিক ছোট বাজার ও মহল্লায় কিনতে গেলে ক্রেতাকে নতুন ও পুরোনো– দুই কিসিমের আলুর জন্য ভাঙতে হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বিক্রয়মূল্য চাষির উৎপাদন খরচের তুলনায় প্রায় আট গুণ। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে প্রতিকেজি আলুর উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দর অনুযায়ী, ঢাকায় মানভেদে প্রতি কেজি নতুন ও পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। সংস্থাটির হিসাবে গত এক মাসে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশের মতো। গত বছরের এ সময়ে ঢাকার বাজারে আলুর কেজি ছিল ১৬ থেকে ২২ টাকা। সেই হিসাবে এক বছর ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ২৩৯ শতাংশ।

কারওয়ান বাজারের আলু ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, ভারত থেকে আমদানি ও নতুন আলু ওঠায় দাম কমেছিল। ১৫ ডিসেম্বর থেকে আলু আমদানি বন্ধ। হিমাগারের আলুও প্রায় শেষ। হঠাৎ করে বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। তবে নতুন আলুর সরবরাহ আরও বাড়লে দামও কমে আসতে পারে।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, এবার ৩ লাখ ৬ হাজার টন আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। তবে আমদানি হয়েছে আইপির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত মাত্র ৭৫ হাজার ৬০০ টন। অর্থাৎ আইপির ৪ ভাগের এক ভাগের মতো আমদানি হয়েছে।

বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু সমকালকে বলেছেন, অন্যান্য বছরে পুরোনো ও নতুন আলুর সমন্বয়ে ডিসেম্বরের চাহিদা মিটে যায়। এ সময় দরও থাকে কম। কিন্তু এবার হিমাগারে নভেম্বরেই আলুর মজুত ফুরিয়ে গেছে। আশার কথা, এখন পুরোদমে নতুন আলু ওঠা শুরু হয়েছে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে দাম কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, এখন বাজারে নতুন যে আলু পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোতে মধ্যস্বত্বভোগীদের কোনো হাত নেই। কৃষকের কাছ থেকে পাইকাররা এনে সরাসরি বাজারে বিক্রি করছে। ফলে কৃষক ভালো দাম পাচ্ছেন। তারা দর ভালো পেলে বাড়বে উৎপাদন।

কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার সমকালকে বলেছেন, আসলে আমদানির সময়সীমা বাড়ানো দরকার ছিল। মন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। হয়তো আমদানির অনুমতির সময়সীমা বাড়তে পারে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আলুর বাজারে বিশৃঙ্খলার পেছনে উৎপাদন ও চাহিদার গরমিলও অনেকটা দায়ী। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত মৌসুমে আলুর উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৪ লাখ টন, যা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে ১ কোটি ১১ লাখ। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব বলছে, আলু উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৯ লাখ টন। তবে সরকারি এসব সংস্থার তথ্য আমলে না নিয়ে হিমাগার সমিতি বলেছে, গত মৌসুমে সাকল্যে আলু উৎপাদন হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টন। অথচ দেশে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টনের মতো।

https://samakal.com/economics/article/215377