২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৩:২৯

বৈরী আবহাওয়ার কবলে দেশের লবণ উৎপাদন

 

বৈরী আবহাওয়ার কবলে দেশের লবণ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার কারণে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেড় মাসে মাত্র ৩১ হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে উপকূলে।

একই সময়ে গত মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ৯৬ হাজার ২৩৯ মেট্রিক টন। গতকাল ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে দ্বৈতভাবে লবণ উৎপাদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিসিক সদর দফতরের লবণ সেলের প্রধান সরওয়ার হোসেন এবং বিসিক লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাফর ইকবাল ভূঁইয়া। এ দিকে লবণ উৎপাদন কম হওয়ার কারণে উপকূলে পাইকারি অপরিশোধিত লবণের মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রতি মণ ৫৩০ টাকা (গড়ে ধোলাইখরচ ৩০ টাকা ছাড়া)।

এ দিকে গত মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে লবণ উৎপাদনে ঘাটতি হওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিদেশ থেকে মাত্র এক লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানির অনুমতি প্রদান করলেও গতকাল ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে আমদানি করা কোনো লবণ আসেনি বলে জানিয়েছেন বিসিক কর্মকর্তারা। বর্তমানে দেশে প্রতি মাসে গড়ে পৌনে দুই লাখ মেট্রিক টন লবণ প্রয়োজন হয়। অপর দিকে গতকাল পর্যন্ত দেশে লবণের মালিক ও উপকূলে চাষিদের কাছে মজুদ রয়েছে মাত্র এক লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। গত মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনে ঘাটতি হওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিদেশ থেকে এক লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানির যে অনুমোদন প্রদান করে তার পরিপ্রেক্ষিতে লবণ মিল মালিকরা লবণ আমদানির এলসি সম্পন্ন করেছেন। দুই-এক দিনের মধ্যে আমদানিকৃত লবণ দেশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেলেও গতকাল পর্যন্ত দেশে কোনো লবণ আমদানি হয়নি বলে জানিয়েছেন লবণ সেলের প্রধান সরওয়ার হোসেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত লবণ দেশে আসা শুরু হবে।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে (২০২৩-২০২৪) দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। এ দিকে সাগর উপকূলে লবণ উৎপাদনে চাষিরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামলেও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ঘন কুয়াশা ও মাঝে মধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়াসহ বৈরী আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে দেশের উপকূলে লবণ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

চলতি বছরের শুরুতে পরপর কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় ও লঘুচাপজনিত বৈরী আবহাওয়ার বৃষ্টিপাত ও ঘন কুয়াশার কারণে উপকূলের চাষিরা চলতি বছর লবণ উৎপাদনে আগাম মাঠে নামলেও গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৩১ হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টন। বুধবার পর্যন্ত (৬ ডিসেম্বর) লবণ উৎপাদন হয়েছে মাত্র সাত হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন, যা গত বছরের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ।

দুই বছর ধরে মাঠে পাইকারি লবণের মূল্য বেশি হওয়ার পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কারণে চলতি লবণ উৎপাদন মৌসুম শুরু হওয়ার আগে মধ্য অক্টোবর থেকেই নতুন লবণ উৎপাদন মাঠে নামে চাষিরা।

২০২২-২০২৩ মৌসুমে লবণ চাষের পরিধি ও লবণচাষি ও মৌজা এবং ঘোনার সংখ্যা বেড়েছে। লবণ চাষের মাঠের পরিমাণ বেড়ে ৬৬ হাজার ২৯১ একরে দাঁড়িয়েছিল। অপর দিকে লবণচাষির সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ৩৯ হাজার ৪৬৭ জনে। অন্য দিকে দু’টি নতুন মৌজাসহ গত মৌসুমে মৌজার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭ এবং লবণ চাষে ঘোনা আগের ৮৮৮ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫৯টিতে।

মৌসুমের শুরুতে মাঠে পাইকারি লবণের মূল্য বেশি হওয়ার পাশাপাশি সরকারিভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কারণে মৌসুম শুরু হওয়ার আগে চাষিরা আগাম লবণ উৎপাদনে মাঠে নামলেও পরপর কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে লবণ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

জানা গেছে, একসময় দেশে প্রতি বছর সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে লাখ লাখ মেট্রিক টন লবণ আমাদানি করত অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া মিস ডিলারেশনের মাধ্যমেও লাখ লাখ মেট্রিক টন লবণ আমাদানি করত; সে কারণে দেশে লবণ উৎপাদন করে চাষিরা লাভের মুখ দেখত না। এ নিয়ে নয়া দিগন্তে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার লবণশিল্প ও চাষিদের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির ওপরে শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৯ শতাংশ করেছে।

এ কারণে আমদানিকৃত লবণের দাম বেশি হওয়ার কারণে আমদানিকারকরা অতিরিক্ত লবণ আমদানিতে নিরুৎসাহিত হওয়ায় দেশে লবণশিল্পে প্রাণ ফিরে আসে।

এ ছাড়া বিসিকের উদ্যোগে নামমাত্র সুদে গত মৌসুম থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণসুবিধা দেয়া হচ্ছে। অপর দিকে চাষিদের রেয়াতি সুদে এক লাখ ৫৩ হাজার টাকার কৃষিঋণ সুবিধাও দেয়া হচ্ছে; সে কারণে চাষিদের লবণ চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/801452