২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবার, ৩:১৬

শয্যার তিন গুণ রোগী, শিশু ওয়ার্ডে ঠাঁই নেই

 

রংপুর অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বাড়ায় শিশুদের মধ্যে দেখা দিয়েছে শীতজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের প্রকোপ। ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তির সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। হাসপাতালে আসা শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। শিশু বিভাগের দুটি ওয়ার্ডে ৮০ শয্যার বিপরীতে গতকাল রোববার বিকেল পর্যন্ত ভর্তি ছিল ২১৩ জন। অনেক শিশুকে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, তৃতীয় তলার ৯ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ৪০ শয্যার বিপরীতে শিশু ভর্তি আছে ১২০ জন। গতকাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৩২ জন। এক বেডে তিনজন পর্যন্ত শিশু রাখতে হচ্ছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া রোগীদের আলাদা রাখার জন্য ১০টি শয্যা বরাদ্দ রয়েছে। এর বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ১৫ জন। তবে আলাদা রাখার নিয়ম থাকলেও কম ও মৃদু আক্রান্ত ডায়রিয়া রোগীদের বাধ্য হয়ে অন্য শিশুদের সঙ্গে রাখা হয়েছে। 

ওই ওয়ার্ডে কর্মরত জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স কাজলী আক্তার বলেন, শীতজনিত বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে এই ওয়ার্ডে ৩০৬ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। শয্যা সংকটসহ এত শিশুর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে দেখা যায়, ৪০ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ৯৩ শিশুর। যার মধ্যে শীতজনিত রোগে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৮৫ শিশু। এই ওয়ার্ডে গত এক সপ্তাহে ভর্তি হয়েছে ৫১২ শিশু। মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের।

রংপুরের পীরগাছার রাসেল মিয়ার ১১ মাস বয়সের জিম বাবু নামের শিশুকে গতকাল সকালে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করান তাঁর মা নাজমিন বেগম। তিনি জানান, শিশুটি কাশতে কাশতে বমি করছিল। দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

লালমনিরহাটের আদিতমারী এলাকা থেকে এসে শিশু বিভাগে ভর্তি হওয়া দুই বছরের শিশু আক্তারী বেগমের মা আইরিন বেগম জানান, গত কয়েক দিনের ঠান্ডায় শিশুটির নিউমোনিয়া হয়েছে। শ্বাসকষ্টও হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামান শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি সমকালকে বলেন, বছরের যে কোনো সময় ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে। তবে ঠান্ডাজনিত কারণে রোটা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে শিশুদের ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। 

হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুস আলী জানান, রংপুর অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে বাড়ছে। তাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি। শীতজনিত রোগবালাই বিশেষ করে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে গরম কাপড় পরানো জরুরি। মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন বাচ্চাদের ঠান্ডা না লাগে। বেশি অসুস্থ মনে হলে অবশ্যই শিশুকে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

https://www.samakal.com/whole-country/article/214736