রাস্তা খুঁড়ে চলছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। ফলে সংকীর্ণ সড়কে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লেগে থাকছে যানজট। বাড্ডার প্রগতি সরণি এলাকার চিত্র। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
৯ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:৩৯

দিনরাত মহাবিশৃঙ্খলা

রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত প্রগতি সরণির দুর্ভোগ যেন মেটার নয়। তিন বছর ধরে একের পর এক ‘উন্নয়ন’কাজের কারণে তিতিবিরক্ত রাস্তা ব্যবহারকারীরা। ড্রেন পরিষ্কার ও ফুটপাত নির্মাণের জন্য দীর্ঘ সময় সড়কটি প্রায় অচল ছিল। এরপর এক মাস ধরে পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এ কারণে তিন লেনের সড়কটির এক লেন এখন ব্যবহার করা যাচ্ছে। এ ছাড়া রাস্তাটির কয়েকটি স্থান ভেঙে যাওয়ায় যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। ২০ মিনিটের পথ এক ঘণ্টায়ও ফুরায় না। এর মধ্যে আবার হাতিরঝিলের বাড্ডা অংশে ইউলুপ নির্মাণ যেন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে উঠেছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে সকাল থেকে রাত অবধি চলে মহাবিশৃঙ্খলা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রগতি সরণির বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেট থেকে নর্দা সংযোগ সড়ক পর্যন্ত রাস্তার প্রায় অর্ধেক অংশ কেটে রাখা হয়েছে। আবার ড্রেনের বিভিন্ন অংশে স্ল্যাব তুলে রাখায় রাস্তার তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে কোনো রকমে যানবাহন চলছে। এই এক লেনের অংশটুকুও মাঝেমধ্যে গণপরিবহন দাঁড় করিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে ২০০ থেকে ৩০০ মিটার রাস্তা পার হতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লেগে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে হাঁটারও অবস্থা থাকে না।
বারিধারার মোস্তফা কার ডেকোরেশনের মালিক মো. আবুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের এ সড়কে কয়েক দিন পর পর কাজ করে সিটি করপোরেশন। কয়েক মাস সামনে মোটা পাইপ ফেলে রাখা হয়েছিল। এ কারণে দোকান কোনো রকম খুলে বসে থাকলেও বেচা-বিক্রি ছিল না। এখন আবার রাস্তার অর্ধেক কাটা। উঠিয়ে রাখা মাটির কারণে ছড়াচ্ছে ধুলা। দুর্বিষহ সময় কাটছে আমাদের। ’
পাশের আরেকটি দোকানের কর্মচারী প্রদীপ কুমার বলেন, ‘খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বসা যায় না। যানবাহন গেলেই দোকান ধুলায় ঢেকে যায়। কাজের গতি দেখে মনে হয় কয়েক মাসেও এ ভোগান্তি কাটবে না। ’
প্রগতি সরণির উত্তর বাড্ডা কাঁচা বাজারসংলগ্ন জৈনপুরী রেস্টুরেন্টের সামনের অংশটি তিন বছর ধরে ভাঙা। ফলে যানবাহনের বাড়তি চাপ পড়লেই সেখানে এক থেকে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। এরই মধ্যে পাইপ বসানোর কাজ শুরু হওয়ায় এখান দিয়ে চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে যাচ্ছে হাঁটুপানি। তখন একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে।
গতকাল দুপুরে উত্তর বাড্ডা সড়কে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট সাগর হোসেন। তিনি বলেন, ‘তিন বছর ধরে কাঁচা বাজারসংলগ্ন রাস্তাটা ভাঙা। সেখানে স্বাভাবিক সময়েই যানবাহন আটকে থাকে। এখন রাস্তা কাটার কারণে এক লাইনে গাড়ি চলে। ফলে যানজট আর কাটে না। ’ এই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা আরেকজন সার্জেন্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তিন বছর ধরে রাস্তায় গর্ত। যানবাহন সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। পুলিশ মানুষের বাসাবাড়ির ইট-সুরকি এনে গর্ত ভরাট করছে। ’
একই সড়কের বাড্ডা লিং রোড থেকে বাড্ডা নতুনবাজার পর্যন্ত অংশে চলছে ফুটপাত উন্নয়নের কাজ। গত কয়েক দিন ঘুরে দেখা যায়, বাড্ডা নতুনবাজার মিরপুর সিরামিকসের সামনে থেকে লিংক রোডের ইমপ্রেস সুইটস পর্যন্ত ফুটপাত খুঁড়ে রাখা হয়েছে। নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে রাস্তার ওপর। ফলে এক লেনে যানবাহন চলছে। এরই মধ্যে দোকানে মালামাল সরবরাহের কাজে নিয়োজিত ছোট যানবাহনও রাখা হচ্ছে রাস্তায়। বাসগুলোও লম্বা সময় দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। ফলে যানজট বেধে যাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি আরো খারাপ মেরুল বাড্ডা অংশে, যেখানে ইউলুপের কাজ চলছে। কয়েক মাস ধরে সেখানে ব্যাপক যানজট লেগে থাকছে। রামপুরা পুলিশ বক্সের পরিদর্শক সারোয়ার জাহান গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইউলুপের কাজ শুরু হওয়ায় ডিভাইডার দিয়ে রাস্তার অর্ধেক অংশ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সেখানে এক সারি দিয়ে কোনো রকমে যানবাহন চলতে পারে। ফলে অফিস শুরু আর ছুটির সময় ভয়াবহ জট লেগে যায়। গাড়ির লাইন রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল বাড্ডার শেষ ভাগ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তবে এক মাসের মধ্যে ইউলুপের কাজ শেষ হলে এ যানজট আর থাকবে না। ’
ডিএনসিসির ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. উসমান গনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মেরুল বাড্ডা অংশে হাতিরঝিলের ইউলুপের কাজ চলছে। এ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা অন্য কিছু করতে পারছি না। এ ছাড়া রাস্তায় পাইপ বসানো ও ফুটপাত উন্নয়নের কাজ চলছে। এটা শেষ হলে সড়কের ভাঙা অংশ মেরামতের কাজ করব। ’

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/05/09/495499