৯ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:২৩

ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন

বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়ে দুই বিভাগের রশিটানাটানি * জটিলতা কাটাতে শিগগিরই মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে বৈঠক

বহুল আলোচিত ঢাকা চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মানের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। বলা হয়েছে,সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করলে বিদ্যমান জাতীয় মহাসড়কের উপর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া কনক্রিট দিয়ে তৈরি অবকাঠামো বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাধারনত ৫০ বছর স্থায়ী হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে কনক্রিটের তৈরি অবকাঠামো নির্মাণ কতটা টেকসই হবে তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। তাছাড়া বর্তমানে পৃথিবীতে ৫৪ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নেই। কাজেই বাংলাদেশে অর্থনীতি বিবেচনায় ২১৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কতটা ফিজিবল হবে তাও বিবেচনা করা প্রয়োজন। সম্প্রতি সাপোর্ট টু ঢাকা-চট্টগ্রাম একসপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এসব প্রশ্ন তোলা হয়। তাছাড়া প্রকল্পটি কোন সংস্থা বাস্তবায়ন করবে অর্থাৎ সেতু বিভাগ নাকি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ তা নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। কেননা উভয় সংস্থাই এটি বাস্তবায়ন করতে চায়। এ অবস্থায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি নিস্পতির তাগিদ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। পিইসি সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানাগেছে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, বাস্তবায়নকারী সংস্থা নিয়ে জটিলতার সৃস্টি হয়েছে। কেননা ইতোমধ্যেই সেতু বিভাগ থেকেও সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন করা হয়েছে । আবার সড়ক ও জনপথ অধিদফতরও সার সংক্ষেপ অনুমোদন করিয়েছে। এ জটিলতা নিরসন করে কোন সংস্থা এটি বাস্তবায়ন করবে তা নির্ধারনে শিগগিরই মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর নেতৃত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই বৈঠকের পরই সব কিছু চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। একই মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের মধ্যে রশিটানাটানির কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে তাদের সক্ষমতা বাড়বে। তাছাড়া প্রকল্পের সঙ্গে যুক্তরা নানা সুযোগ সুবিধাও নিতে পারবেন।

সূত্র জানায়,পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রতিনিধি জানান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি)অর্থায়নে টেকনিক্যাল এসিসট্যান্স ফর ডিটেইল্ড স্টাডি এন্ড ডিজাইন অব ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেওয়ে অন পিপিপি বেসিস শীর্ষক অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন পিপিপির মাধ্যমে এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহন,পুর্নবাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং ইউটিলিটি প্রতিস্থাপনের জন্য এনজিও সেবা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া পিপিপি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ ও অন্যান্য কার্যাবলীতে সহায়তা ও তদারকির জন্য স্বতন্ত্র প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সাপোর্ট টু ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

কিন্তু সেতু বিভাগের প্রতিনিধি সভায় জানান,গতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বিদ্যমান এ্যাট-গ্রেট সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। তাই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সেতু বিভাগকে নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ আইন,২০১৬ অনুযায়ী দেড় হাজার মিটার ও তদুর্ধ্ব দৈর্ঘ্যের স্বতন্ত্র এক্সপ্রেসওয়ে নির্মানে দায়িত্ব বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের। এ ছাড়ারা এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে নতুনভাবে সম্ভাব্যতা পরিচালনা ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপিত সারসংক্ষেপ অনুমোদিত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সেতু কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে ইতোমধ্যেই এক্সপ্রেস অব ইন্টারেস্ট আহবান করেছে। এতে ২২টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করেছে। সেগুলো মূল্যায়নের কাজ চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রস্তাবিত একই প্রকল্প গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনার জন্য পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ করা হয়।

অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রতিনিধি সভায় জানান, বিদ্যমান ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক (এন-১) এর এলাইনমেন্টে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হলে জাতীয় মহাসড়কটির বিদ্যমান মিডিয়ান এর পাশাপাশি অতিরিক্ত ২ লেন সড়কের প্রয়োজন হবে। ফলে এই মমাসড়কের ট্রাফিক চলাচল বাধাগ্রস্থ হবে। এছাড়া বিদ্যমান মহাসড়কে ঢাকা হতে দাউদকান্দি পর্যন্ত সড়ক মিডিয়ানের প্রস্থ পর্যাপ্ত নয়। দাউদকান্দি হতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সড়ক মিডিয়ানের প্রস্থ সর্বত্র ৫ মিটার নেই। বিদ্যমান ট্রাফিকের চাহিদা ও ট্রাফিক বৃদ্ধির হারের উপর ভিত্তি করে ২০৩৭ সালের দিকে ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে শুরু থেকেই ছয় লেন বিশিষ্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা যুক্তসঙ্গত নয়। আবার শুরু থেকে চার লেন করা হলে পরবর্তীতে তা ছয় লেনে রুপান্তর করা অত্যন্ত দূরূহ হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। এ অবস্থায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ার আশংকা করছেন সংশ্লিস্টরা।

http://www.jugantor.com/industry-trade/2017/05/09/123459/