১১ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবার, ৭:২৭

পেঁয়াজের সঙ্গে রসুনও গরম

 

ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবর আসার পর থেকে দেশের বাজারে দ্বিগুণের বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন করে রসুনের দামও বেড়েছে। গত দুই দিনের ব্যবধানে রসুন কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। 

জানা গেছে, অন্যায্যভাবে কেজিপ্রতি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা অভিযান চালাচ্ছে।

গত শনিবার ও গতকাল রবিবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সারা দেশের বেশ কয়েকটি বাজারে অভিযান চালায়। সেখানে ন্যায্য দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য করার পাশাপাশি বেশি দামে বিক্রি করায় অনেক ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করা হয়। গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক দল মাঠে নেমে তথ্য সংগ্রহ করছে। বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি যারা করবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

গতকাল রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, তেজগাঁও, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দাম বেড়ে খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দেশি রসুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২৪০ টাকা এবং আমদানীকৃত বড় সাইজের রসুন কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, ‘শনিবার হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে গেছে, এটা অবশ্যই ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল আচরণ নয়।

ব্যবসায়ীদের বুঝতে হবে, এ দেশের জনগণের জন্যই তাঁদের ব্যবসা। অবশ্যই লাভ করবেন, লাভ ছাড়া তো কেউ ব্যবসা করে না। কিন্তু যে পণ্য কালকে ১২০ টাকা বিক্রি করছিলেন, এক দিনের মধ্যে তা ২০০ টাকা কিভাবে হয়ে যায়? দাম বাড়তে তো একটা সময় লাগে।’

তিনি বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজের রপ্তানি বন্ধ করেছে, কিন্তু সে জন্য পরের দিনই দাম বাড়তে পারে না। আমরা অন্য নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও দেখে থাকি, যখনই আমদানি বন্ধ থাকে তখনই অনেক ব্যবসায়ী সুযোগ নিয়ে থাকেন।

মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এটা আসলে বন্ধ করা যায় না। লাখ লাখ দোকানে বিক্রি হচ্ছে, হাজার হাজার বিক্রেতা। এখানে পুলিশিং দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন।’

মহাখালী কাঁচাবাজারের মুদি ব্যবসায়ী নির্মল ঘোষ বলেন, ‘রবিবারে নতুন করে পেঁয়াজের দাম না বাড়লেও রসুনের দাম বেড়েছে। পেঁয়াজ ও রসুনের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিক্রি অনেক কমে গেছে।’

তেজগাঁওয়ের কলমিলতা কাঁচাবাজারের মোতাহার হোসেন ফারুক বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। ভারতীয় পেঁয়াজ ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আড়তদাররা এখন পেঁয়াজ কেনার পর রসিদ দিচ্ছে না। রসিদ চাইলে তারা বলছে—নিলে নেন, না নিলে রেখে যান।’ 

নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসছে
মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রতিবছর মুড়িকাটা পেয়াঁজ আবাদ হয় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয় প্রায় আট লাখ মেট্রিক টন। এ ছাড়া এ বছর গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন হবে প্রায় ৫০ হাজার টন। এই মুড়িকাটা ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হয়েছে এবং বাজারে থাকবে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস। এরপর মূল পেয়াঁজ আসা শুরু হবে এবং উৎপাদন হতে পারে প্রায় ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন। রাজশাহীর বাজারেও উঠতে শুরু করেছে নতুন পেঁয়াজ। 

মাঠে নেমেছে ভোক্তা অধিদপ্তর ডিবি
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, ‘পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে কালোবাজারি, মজুদদার ও বেশি দামে বিক্রিকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে শনিবার দুপুর থেকে আমাদের ডিবির লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম চকবাজার ও শ্যামবাজার এলাকায় কাজ করছে। গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের গোয়েন্দা তথ্য অব্যাহত আছে। এ সময়ে কেউ যদি কালোবাজারি করে, পেঁয়াজ মজুদ করে, বেশি দামে বিক্রি করার পাঁয়তারা করে, আমরা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’

৮০ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ঢাকাসহ সারা দেশে দ্বিতীয় দিনের মতো জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করেছে। গতকাল ৪০টি জেলায় একযোগে অভিযান পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানটি। এই অভিযানের মাধ্যমে ৮০ প্রতিষ্ঠানকে তিন লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

পেয়াঁজ নেইলেখা দোকানের গুদামে ৩৬ বস্তা
চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী বাজারে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযান চলাকালে মেসার্স বাছামিয়া সওদাগর দোকানে গিয়ে ভোক্তার কর্মকর্তারা দেখতে পান, দোকানে টাঙানো পণ্যের মূল্যতালিকায় ‘পেঁয়াজ নেই’ লেখা রয়েছে। তা দেখে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহসহ কর্মকর্তারা দোকানির সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা গুদাম তল্লাশি করেন। তল্লাশি করে ৩৬ বস্তা পেঁয়াজের সন্ধান পান ভোক্তার কর্মকর্তারা। এসব বস্তায় রয়েছে প্রায় এক হাজার ৭০০ কেজি পেঁয়াজ। গুদামে মজুদ রেখে বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় ওই দোকানিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং ১২০ টাকা দামে ওই পেঁয়াজগুলো বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া মেসার্স কালু শাহ এন্টারপ্রাইজ নামের আরেকটি দোকানেও বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল। দোকানটিকেও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন বাজারে অভিযান চলছে। 

বেনাপোলে ৯০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দিনেও খালাস হয়নি 
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা ৯০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ পাঁচ দিনেও খালাস হয়নি। ফলে সেগুলো পচতে শুরু করেছে। গত ৫ ডিসেম্বর সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তিনটি ট্রাকে এসব পেঁয়াজ আমদানি করে। পাঁচ দিনেও খালাস না হওয়ায় এসব পেঁয়াজ পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

বেনাপোলের কোয়ারেনটাইন উদ্ভিদ নিরীক্ষণ কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার জানান, ভারত থেকে টিসিবির আমদানি করা পেঁয়াজের ট্রাকগুলো চার দিন আগে বেনাপোল স্থলবন্দরে আসে। এসব ট্রাকে ৯০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ রয়েছে।

পেঁয়াজ নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাকচালক সন্তোষ মণ্ডল বলেন, ‘পেঁয়াজের ট্রাক নিয়ে পাঁচ দিন ধরে বেনাপোল বন্দরে এসে বসে আছি। পেঁয়াজগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কেউ আনলোড করতে আসছে না। কবে নাগাদ খালাস হবে সেটাও জানতে পারছি না। খালাসের জন্য কোনো আমদানিকারকের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছি না। পেঁয়াজের চালানটি খালাসের দায়িত্বে আছে কনফিডেন্স এন্টারপ্রাইজ নামের এক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট।’

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম জানান, পাঁচ দিন ধরে টিসিবির ৯০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়ে বন্দরে পড়ে আছে। পেঁয়াজের চালান খালাস না করায় তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

https://www.kalerkantho.com/online/business/2023/12/11/1344495