১০ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার, ৯:৩৭

ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম 

ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই ঘন্টায় ঘন্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। গুদামে পেঁয়াজ আটকে রেখে কোন কারণ ছাড়াই বাড়ছে দাম। এমন ঘটনায় ভোক্তা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। একদিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১২০ টাকা। রাজধানীর খুচরা বাজারে এখন এ পেঁয়াজের কেজি ২৪০ টাকা। আর কেজিতে ৯০ টাকা বেড়ে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। কেউ কেউ ২২০ টাকাও দাম হাঁকছেন।

এমন অবস্থা যখন খুচরা বাজারে তখন পাইকারি বাজারে বেড়েছে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শ্যামবাজারে পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ২০০/২২০ টাকা দরে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে কোন পেঁয়াজ নেই। তাই পেঁয়াজের দাম বাড়ছেই। এ দাম কোথায় গিয়ে ঠেকে তা কেউ বলতে পারছে না। ধারণা করা হচ্ছে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।

গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি শনির আখড়া রায়ের বাগ এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ ২৩০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শনিবার একই চিত্র দেখা গেছে, রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজার, উত্তর বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, গোদারাঘাট, উলন বাজারসহ কয়েকটি বাজারে ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

হঠাৎ করে বাজার থেকে পেঁয়াজ উধাও হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন ভোক্তারা। তাদের অভিযোগ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের ঘোষণায় নিজেদের ইচ্ছে মত দাম বাড়িয়ে দেয় খুচরা এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এখানেই শেষ নয় আপনি বেশি দাম দিয়েও বাজারে পেঁয়াজ পাবেন না। আরও দাম বৃদ্ধির জন্য বাজারে সংকট সৃষ্টি করতে পেঁয়াজ গুদামজাত করে রাখছে ব্যবসায়ীরা। এমনকি খুচরা দোকানিরাও পেঁয়াজের বস্তা লুকিয়ে রেখেছে। অধিকাংশ দোকানেই পেঁয়াজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দনিয়া এলাকার গৃহিনী ফারজানা সরকার জানান, রান্না করার মত তার বাসায় কোন পেঁয়াজ নেই। গতকাল শনিবার তিনি প্রায় ১০/১২ দোকানে গেছেন পেঁয়াজ কেনার জন্য কিন্তু তিনি পাননি। একটি দোকানে তিনি সামান্য পেঁয়াজ পেলেও দেশী পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে ২৫০ টাকায়। আর ভারতীয় পেঁয়াজ চাওয়া হয়েছে ২৩০ টাকা। তবে এ পেঁয়াজের মান ভালো না। তাই তিনি বেশি দাম দিয়ে দেশি পেঁয়াজই ক্রয় করেছেন।

ক্রেতারা জানান, শুক্রবার সকালে রাজধানীর বাজারগুলোতে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। এছাড়াও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩০ টাকা। তবে শুক্রবার সন্ধ্যার পর পেঁয়াজের দামে ভেলকি দেখান বিক্রেতারা। তখন ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা দরে এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকা কেজি দরে।এর পর শনিবার সকাল থেকেই দফায় দফায় বাড়তে থাকে পেঁয়াজে দাম। অবস্থা এমন হয়েছে যে,এক দোকানে দাম জিজ্ঞাসা করে অন্য দোকান ঘুরে এসে আবার দাম জিজ্ঞাসা করলেই আগের চেয়ে কেজিতে ২০ টাকা বেশি চাচ্ছে। 

প্রতি ঘন্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এ রিপোর্ট লেখা পরেও খবর পাওয়া যায় পাইকারি এবং খুচরায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। শ্যামবাজারে কথা বলে জানা যায় পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে দেশী পেঁয়াজ ২৫০ টাকায়। এতে করে ভোক্তা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও কোন কাজে আসেনি। গতকাল সারা দিনই ঘন্টায় ঘন্টায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। কোথায় গিয়ে এ দাম ঠেকবে তা কেউ বলতে পারছে না।

মূলত নিজেদের দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ভারত সরকার আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার খবর সন্ধ্যার মধ্যেই পৌঁছে যায় সাধারণ ব্যবসায়ীদের কানে। এরপরই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেন তারা।

ক্রেতা খবির হোসেন বলেন, ঢাকায় স্বল্প বেতনে সিকিউরিটির কাজ করি। চোখের পলকে তিন দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১২০/১৩০ টাকা বেড়ে গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ চার দিন আগেও ৯৫ টাকা কেজিতে কিনেছি, গতকাল কিনতে হয়েছে ২৩০ টাকা দরে। অতিরিক্ত টাকা না থাকায় মাত্র আধা কেজি কিনতে হয়েছে। দোকানি বলে দিল দাম নাকি আরও বাড়বে।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে খুচরা ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বলেন, (শুক্রবার) সন্ধ্যা থেকে দাম বেড়েছে। গত রাতে কারওয়ান বাজার থেকেও বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। এখন তো ২০০ টাকার নিচে আছে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই পেঁয়াজের দাম ২-৩ দিনের মধ্যে ৪০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) এক আদেশে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত। মূলত নিজেদের দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ভারত সরকার আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার এ পদক্ষেপ নেয়।

এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযানে নামছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভোক্তা-অধিকার জানিয়েছে, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ঢাকাসহ সারাদেশে অভিযান চালানো হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। যা গত শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়। ভারত সরকারের এ ঘোষণার পর বাংলাদেশের বাজারে রাতারাতি পেঁয়াজের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে শুরু করে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে আমদানি করা পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। ফলে ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় তেমন প্রভাব পড়বে না। ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) জানিয়েছে, নিজেদের দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে পণ্যটি রপ্তানির ওপর আগামী মার্চ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

ভোক্তা-অধিকারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল শনিবার থেকে ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঢাকায় অধিদপ্তরের চারজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে চারটি পৃথক টিম বাজার অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়া দেশের সব বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় থেকে সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর টনপ্রতি পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ দেওয়া হলেও সময়সীমার শেষ হওয়ার তিন সপ্তাহ আগেই নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো।

চট্টগ্রামেও পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরি! 

চট্টগ্রাম ব্যুরো : ভারত আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণায় দেশে পেঁয়াজের বাজার হঠাৎ অস্থির হয়ে গেছে। চট্টগ্রামে পেঁয়াজের দাম ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছেছে অর্থাৎ ২০০ টাকায়। গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সকালের মধ্যে চট্টগ্রামের পাইকারী বাজার ও খুচরা বাজারে কেজিতে ৮০-৯০ টাকা বেড়েছে। পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষুব্ধ সাধারণ ভোক্তারা। তারা বলছে, শুক্রবার সকালেও পেঁয়াজের দাম ছিল ১১০ টাকা ভারতের ঘোষণায় সন্ধ্যায় তা বৃদ্ধি পায় ১৬০টাকা, শনিবার সকালে ২০০ টাকা, কি তাজ্জব ব্যাপার। বন্ধুদেশ ভারত তাদের বাজার ঠিক রাখতে রপ্তানি বন্ধ করেছে তাতে কি হয়েছে দেশে প্রচুর পেঁয়াজ আছে। কিন্তু পেঁয়াজ গুদামে রেখে কৃত্রিম সংকট করে জনগণের পকেট কাটছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। কে করবে এর প্রতিকার। আমরাতো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি।

গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের পাইকারী বাজার খ্যাত খাতুনগঞ্জ, খুচরা বাজার রেয়াজউদ্দিন বাজার, কাজীরদেউড়ী বাজার, কর্ণফুলী মার্কেট, পাহাড়তলী বাজার, বক্সিরহাট, চকবাজার, বহাদ্দারহাট ঘুরে জানা যায়, ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি কোথাও ২০০ টাকা, কোথাও ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশী পেঁয়াজ ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচেছ। ভারতের ঘোষণার পরপরই ব্যবসায়ীরা হঠাৎ করে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়।পাইকারি বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জে শনিবার কেজি প্রতি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করা হয় ২১০ টাকা থেকে ২২০ টাকায়। পাইকারী বাজারে দেশি পেঁয়াজের মণ ৮ হাজার ৮০০ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজের মণ ৭ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে বিভিন্ন বাজারে ক্রেতারা বলছে,অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে পেয়াজেঁর সরবরাহ কম বলে প্রচার করে দাম বাড়াচ্ছে। অথচ গত ২দিন আগেও পেয়াজেঁর দাম কম ছিল। ১০০-১২০টাকায় দেশী, ভারতীয় ও চীনা পেয়াজঁ চট্টগ্রামের বাজারে পাওয়া যেত।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছে, ভারত আরো দুইবার এভাবে হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। আসলে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। এর আগে গত আগস্টে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেটি বলবৎ থাকার কথা ছিল। সেই আদেশ শেষ হওয়ার আগেই এখন একেবারে রপ্তানিই বন্ধ করে দিয়েছে। গত ২০১৯ সালে ও ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত দুই দফায় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এরমধ্যে গত ২০১৯ সালে তো পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।ব্যবসায়ীরা আরও জানায়, আগামী সপ্তাহে বাজারে দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসবে। তখন পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাবে। দাম কমতে পারে।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ না পেলে বিক্রি করবেন কোত্থেকে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাতে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন। এখন একদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ৫০ টাকা! ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে, এই খবরে এত টাকা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক।

উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরীতে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় ৫ প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।গতকাল শনিবার দুপুরে এ জরিমানা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ। তিনি জানান, দুপুরে দেশের বৃহত্তম পাইকারীবাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও নগরীর চৌমুহনী এলাকার কর্ণফুলী মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় কর্ণফুলী মার্কেটে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় ফারুক স্টোরকে ৩০ হাজার টাকা, আলিফ ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা, খাতুনগঞ্জের বরকত ভান্ডারকে ২০ হাজার টাকা, এএইছ ট্রেডার্সকে ১০ হাজার টাকা, একে ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার ও রানা দেব নাথ।

আনোয়ারা সংবাদদাতা এস এম সালাউদ্দিন জানান, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা চাতরী চৌমুহনী বাজারে ভোক্তাদের নিকট থেকে পেঁয়াজের অতিরিক্ত মূল্য আদায় করার অভিযোগ পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন। প্রশাসনের বাজার মনিটরিং এর অংশ হিসেবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৬টি দোকানদারকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। শনিবার (৯ই ডিসেম্বর) বেলা ১২টার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এব্যাপারে আনোয়ারা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার মনিটরিং করে দেখা যায় দোকানিদের মূল্য তালিকা রাখা হয়নি। এবং গতকাল থেকে আজকে পেঁয়াজের কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। যার কারণ বা মূল্যতালিকা সংরক্ষণ করা হয়নি। তাই অভিযোগ আমলে নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী ৬টি মামলায় ১২ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়।

খুলনায় দাম বেড়েছে 

খুলনা ব্যুরো : ভারত আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রফতানি করবে না কারণ তাদের দেশে এখন পেঁয়াজ সঙ্কট। এই খবর শোনামাত্রই সারা বাংলাদেশের ন্যায় খুলনায়ও ভারতীয় এবং দেশি পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৫০-৬০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোন যুক্তি নেই এই দাম বৃদ্ধির। যারা বেশি দাম নিচ্ছে তারা এই পেঁয়াজগুলো কি বেশি দামে কিনেছে, জবাব না। তাহলে দাম বেশি নিচ্ছেন কেন। ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ভারত এমন খবর গণমাধ্যমে আসতে না আসতেই দেশের বাজারে আবারও বেড়েছে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম। শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) দেয়া এক আদেশে রফতানি বন্ধের খবর জানায় ভারত। তবে এই সিদ্ধান্ত আসার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই এক লাফে কেজিতে ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন খুলনার ব্যবসায়ীরা। নগরীর সন্ধ্যা বাজার, নিউ মার্কেট, জোড়াকল বাজার, বয়রা বাজার, গল্লামারী, ট্রাক টার্মিনালের পাইকারী আড়ত ঘুরে দেখা যায় খবর প্রচার হওয়া মাত্রই একটি সিন্ডিকেটের কালো থাবা খুলনার বাজারকে গ্রাস করেছে। এলাকার বাজার ঘুরে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির খবর জানা গেছে।

জানা গেছে, শুক্রবার সকালেই নিউ মার্কেট কাঁচা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহেও ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। এছাড়াও পাবনার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩০ টাকা করে। তবে সন্ধ্যার পরই পাল্টে যায় পেঁয়াজের বাজারের দৃশ্যপট। বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা করে এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজি করে। মূলত দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ভারত সরকার আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করার খবর সন্ধ্যার মধ্যেই পৌঁছে যায় সাধারণ ব্যবসায়ীদের কানে। এরপরই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেন তারা।

https://www.dailysangram.info/post/542876