১০ ডিসেম্বর ২০২৩, রবিবার, ৯:২৯

নির্বাচন ২০২৪ : আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি ও কিংস পার্টিদের ত্রিবেণী সঙ্গমে মজার সার্কাস

আসিফ আরসালান

 

আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে দুই ধরনের স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। একটি হলো, নির্বাচন শুধুমাত্র বর্জন নয়, সেটি রীতিমত প্রতিহত করা। আরেকটি হলো, যে কোনো মূল্যে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠান। নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনে ২৯ অক্টোবর থেকে যে প্রবল গতিবেগ সঞ্চারিত হয়েছিল, নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সেই গতিবেগ শ্লথ হতে শুরু করেছে। এটিই স্বাভাবিক। হরতাল এবং অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচী লাগাতার অনির্দিষ্টকাল চলতে থাকা খুব একটি স্বাভাবিক বিষয় নয়। এই আন্দোলনের নীতি নির্ধারকরাও সম্ভবত সেটি বুঝেছেন। তাই তারা গত শুক্রবার ও শনিবারের সরকারি ছুটির সাথে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিরতি দিয়েছেন। এরমধ্যে শোনা যাচ্ছে যে ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের পর থেকে আন্দোলনে ভিন্ন চরিত্র নাকি আনা হবে। কেউ বলছেন সেটি হবে সরকারের সুনির্দিষ্ট এক বা একাধিক অফিস অবরোধ বা ঘেরাও করা। কেউ বলছেন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস বা স্থাপনার সামনে হাজার হাজার নেতাকর্মীর অবস্থান। 

পত্র পত্রিকায় এই মর্মেও খবর আসছে যে জামায়াতে ইসলামীকে আন্দোলনের মূল প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী ২৮ অক্টোবরের পর থেকে অফিসিয়ালি বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হলেও বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচী তারা আলাদাভাবে পালন করে যাচ্ছে। এরমধ্যে চরমোনাইয়ের পীর রেজাউল করিমের ইসলামী আন্দোলন ঘোষণা করেছে যে তারাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। কয়েক দিন আগে একটি বড় সমাবেশ করে চরমোনাইয়ের পীর সাহেব দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন যে তারা শুধুমাত্র নির্বাচন বর্জন করেই ক্ষান্ত হবেন না। তারা এই নির্বাচন হতেও দেবেন না। 

পীর সাহেব একটি ঐক্যবদ্ধ ও বেগবান আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য কিছুদিন আগে প্রায় সমস্ত বিরোধী দলের নেতাদের এক সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন। এই সম্মেলনে বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ, ১২ দলীয় জোট এবং অন্য সমমনা দলের নেতৃবৃন্দ, মওলানা মামুনুল হক সমর্থক খেলাফত মজলিশ প্রভৃতি দলের নেতৃবৃন্দ যোগদান করেছিলেন। এক কথায় ডানপন্থী, মধ্যপন্থী এবং বামপন্থী মিলে সব ধরনের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ইসলামী আন্দোলনের এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে চরমোনাইয়ের পীরের ইসলামী আন্দোলনও বর্তমান চলমান নিরপেক্ষ সরকারের আন্দোলনে শামিল হবেন। 

কোনো কোনো গণমাধ্যমে এমন খবরও এসেছে যে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন দলসমূহকে যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে এসে এক মঞ্চে আন্দোলন করার জন্য মঞ্চের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। তারা বিশেষ করে আগ্রহী জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনকে এক মঞ্চে শামিল করা। এ ব্যাপারে চলমান আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ৩৬টি দলের মধ্যে ৩০টি দলই জামায়াতকে সরাসরি সম্পৃক্ত করার পক্ষে বলে জানা গেছে। অন্যেরা তাদের মতামত এখনো সুস্পষ্ট জানায়নি। এ ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলনের মনোভাবও সুস্পষ্টভাবে জানা যায়নি। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। 

ধারণা করা হচ্ছে যে, ১৭ ডিসেম্বরের পর বিএনপির আন্ডার গ্রাউন্ডে থাকা হাজার হাজার নেতাকর্মী তাদের গোপন আস্তানা থেকে বেরিয়ে আসবেন। অন্যান্য দলও জনগণকে আরো প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক মঞ্চে হোক বা ভিন্ন মঞ্চ থেকে হোক, জামায়াতে ইসলামী যে প্রকাশ্য কিন্তু দুর্বার আন্দোলনে যে কোনো অবস্থায় শামিল থাকবে, সেটি দলের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে যেমন বলা হয়েছে তেমনি বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনও চলমান কঠোর আন্দোলনে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। 

যেসব খবরাখবর মিডিয়ায় আসছে বা অন্যভাবে শোনা যাচ্ছে সেগুলো যদি বাস্তবে রূপ নেয় তাহলে ১৭ ডিসেম্বরের পর দেশে গণআন্দোলন দুর্বার গতি লাভ করবে। এর চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে সেটি বর্তমানের এই Volatile পরিস্থিতি অর্থাৎ দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে বলা যাচ্ছে না। তবে গণতন্ত্রকামীরা আন্দোলন যতই বেগবান ও দুর্বার করুন না কেন, আওয়ামী সরকার যে ফ্যাসিবাদী কায়দায় সেই আন্দোলন দমন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নাই। সেই পরিস্থিতি গণতন্ত্রকামীরা কিভাবে মোকাবেলা করবেন সেটাও এই মুহূর্তে কারো পক্ষে বলা সম্ভব নয়। 

লেখাটি শেষ করার সময় জানা গেল যে, মাওলানা মামুনুল হকসহ আলেমদের মুক্তির দাবীতে ঢাকায় ২৯শে ডিসেম্বর মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাহফুজুল হক বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মাওলানা মামুনুল হকসহ সকল আলেমকে মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় আগামী ৭ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগেই হেফাজতে ইসলাম কঠোর কর্মসূচিতে যাবে।

॥ দুই ॥

যদি গণতন্ত্রকামীরা সফল হন তাহলে নির্বাচন হবে না। কিন্তু সেই ফলাফল তো অনিশ্চিত। অন্যদিকে সরকার যে কোনো মূল্যে হোক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বদ্ধপরিকর। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আরেকটি পক্ষকে নিয়ে অনেক কথা বিভিন্ন মহল এবং মিডিয়ায় বলা হয়। সেটা হলো বিদেশী পক্ষ। ভারত, চীন এবং রাশিয়া প্রকাশ্যে এবং সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ নিয়েছে। আমেরিকা বলছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। তারা চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তারা সাথে সাথে এটাও বলেছে যে, নির্বাচন বলতে শুধু ভোটের দিনকেই বোঝায় না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকান্ডকেই বোঝায়। যারা এই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করবে তাদেরকেই স্যাংশন দেওয়া হবে বলে আমেরিকার উচ্চ পর্যায় থেকে বারবার বলা হচ্ছে। 

কিন্তু আগামী ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচনটি সরকার করতে যাচ্ছে সেটি কোন কিসিমের নির্বাচন হতে যাচ্ছে? এটি কোন ধরনের নির্বাচন যে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল অর্থাৎ বিএনপির ১০ লক্ষ লোকের সভাকে হাজার হাজার পুলিশের ভয়াবহ ক্র্যাকডাউনের মাধ্যমে বানচাল করা হয়? এ কেমন নির্বাচন যে ঐ ক্র্যাকডাউনের পরদিন থেকেই মির্জা ফখরুল থেকে শুরু করে তৃণমূলের সাধারণ নেতাকর্মীকে পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়? এ কেমন নির্বাচন যে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের পূর্বে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২২ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়? এ কেমন নির্বাচন যে এই ২২ হাজারের বাইরেও বিএনপি ও জামায়াতের হাজার হাজার কর্মীকে গ্রেফতারের ভয়ে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পলাতক জীবন যাপন করতে হয়? এ কেমন নির্বাচন যে বিএনপি জামায়াত কর্মীকে পুলিশের ভয়ে বনে বাদাড়ে রাত কাটাতে হয়? 

সারা দুনিয়াব্যাপী এটিই সাধারণ নিয়ম যে, তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আসে। তখন আর পুলিশ বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাইলেই ইচ্ছামত যাকে তাকে গ্রেফতার করতে পারেন না এবং খেয়াল খুশি মত রিমান্ডে নিতে পারেন না। বেগম জিয়া গৃহবন্দী। তারেক রহমান বিদেশে নির্বাসিত। জামায়াতের আমীর ড. শফিকুর রহমান, জেনারেল সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী জেনারেল সেক্রেটারি মওলানা রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের আমীর সেলিম উদ্দিন কারাগারে। এসব নেতাসহ অসংখ্য নেতাকে কারাগারে রেখে অবশিষ্ট সমস্ত নেতাকর্মীকে পলাতক জীবন যাপনে বাধ্য করে এটি কোন কিসিমের নির্বাচন হচ্ছে? দেশী বলেন আর বিদেশী বলেন, এই চরম এবং ভয়ঙ্কর জুলুম পীড়নের ফলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শুরুটাই সংবিধান ও মানবাধিকার পরিপন্থী হয়েছে। এটাই কি আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচনের নমুনা? 

॥ তিন ॥

সমস্ত বিরোধী দলকে সমস্ত রাষ্ট্রশক্তি দিয়ে দাবিয়ে রেখেও আওয়ামী সরকার যে নির্বাচন করছে সেটি একটি বিরাট তামাশার নির্বাচন। বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহকারি মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যথার্থই বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনটি করতে যাচ্ছে সেটি হতে যাচ্ছে, ‘আমাদের এবং মামুদের নির্বাচন’। জনাব রিজভীর এই বক্তব্যের সারবত্তা রয়েছে। 

শুক্রবার ৮ ডিসেম্বর এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন ২ হাজার ৭২১ জন। এরমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ৭৪৭ জন। সমসাময়িক অন্যান্য দেশের রাজনীতিতে এত বিপুল সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী ক্যান্ডিডেট হন না। এই ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ৪৪২ জন প্রার্থী আওয়ামী লীগের। এই ৪৪২ জন প্রার্থীর মধ্যে এখনো যারা এমপি আছেন অর্থাৎ সিটিং এমপির সংখ্যা ৭০ জন। একদিকে চরম অবাক এবং অন্যদিকে হাস্যষ্পদ ব্যাপার হলো এই যে, আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে যে, যে আওয়ামী প্রার্থীকে অফিসিয়ালি নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগেরই অন্য কোনো নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে তাকে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গেলে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের অনুমোদন নিতে হবে। এটি একটি অদ্ভুত ব্যাপার। 

বিএনপি বা অন্যান্য বিরোধী দল তো ইলেকশনের বাইরে। ফলে এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অবশ্যই হচ্ছে না। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ প্রভৃতি সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখতে চায়। সেটি দেখানোর জন্য সরকার রাতারাতি ৪/৫ টি কিংস পার্টি বা রাজার পার্টির জন্ম দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট বা বিএনএম, বিএসপি ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, ইত্তেফাক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন এক ব্যক্তি বা দুই ব্যক্তি-সর্বস্ব আরেক জাতীয় পার্টি, তরিকত   

ফেডারেশন, ২০/২৫ ব্যক্তি-সর্বস্ব মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি, ১৫/২০ ব্যক্তি-সর্বস্ব ইনুর জাসদ ইত্যাদি। এসবের বাইরেও রয়েছেন হুমকি, লোভ বা প্রলোভন দিয়ে সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম এবং শাহজাহান ওমরের মতো দলছুট বা জোটছুট ব্যক্তিবর্গ। 

এখন এরা সবাই এমপি হতে চান। পত্র পত্রিকাতে ছাপার অক্ষরে এসেছে যে (ডেইলি স্টার, সমকাল, প্রথম আলো প্রভৃতি) গোলাম কাদেরের জাতীয় পার্টি নাকি ৬০ টি আসন চায়। তারা আরো চায়, পরবর্তী সরকারে ৪ জন মন্ত্রী এবং ডেপুটি স্পিকারের পদ। জিএম কাদের হবেন পার্লামেন্টে বিরোধী দলীয় নেতা। মেনন চেয়েছেন ১০ টি আসন। ইনু চেয়েছেন ১০ টি আসন। মোট ৯০ টি আসন। ইব্রাহিম, ওমর, তরিকত, আনোয়ার হোসেন প্রমুখকে দিতে হবে আরো ১০ টি আসন। মোট ১০০ টি আসন। শুক্রবার ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব নামসর্বস্ব দলের আবদার প্রধানমন্ত্রী নাকি নাকচ করে দিয়েছেন। 

॥ চার ॥

এখানেই সবকিছুর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড নাকি গ্যাঁড়াকলে পড়েছেন। রওশন এরশাদ এবং তার পুত্র সাদ এরশাদকে টোটালি আউট করা হয়েছে। বাস মালিক রাঙ্গাকেও নাকি কোনো আসন দেওয়া হবে না। এখন দুর্মুখরা প্রশ্ন করছেন যে এক ব্যক্তিও ভোট না দেওয়া সত্ত্বেও ভোটের ২৭ দিন আগেই কে হবেন রাজা আর কে হবেন মন্ত্রী সান্ত্রী সেটি কিভাবে সাব্যস্ত হয়?  আগে তো ইলেকশন হতে হবে। তারপর ঐ ইলেকশনে এমপি হতে হবে। তারপরে তো মেজরিটি মাইনরিটির প্রশ্ন অথবা কোয়ালিশনের প্রশ্ন। তার আগেই এত এত এমপি, এত এত মন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা- এগুলো ঠিক হয় কিভাবে? এগুলো তো ঠিক হয় টেবিলে কাগজপত্র লিখে। তাই যদি হয় তাহলে আর ইলেকশনের কী দরকার আছে? সিলেকশন দিলেই তো হয়। 

২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ ২৬৭ জন প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল। অবশিষ্ট ৩৩ টি আসনে কোনো প্রার্থী দাঁড় করায়নি। এই ৩৩ টি আসনের মধ্যে রওশন এরশাদের জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয়েছিল ২৬ টি। মেনন ও ইনুর পার্টিকে দুইটি করে আসন, দিলীপ বড়–য়া, তরিকত ফেডারেশন এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জু- এদের প্রত্যেককে ১ টি করে আসন। মোট ৩০০ টি আসন। 

কিন্তু এবার হয়েছে ভিন্ন বিষয়। আওয়ামী লীগ নৌকা মার্কা দিয়ে প্রার্থী দিয়েছে ২৯৯ জন। এর ফলে খুদ কুড়ানি পার্টিগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে কান্নাকাটি। এখন সবগুলো খুদ কুড়ানি পার্টির নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন। দুই একজন এই কলাম প্রকাশের সময়ের মধ্যেই হয়তো দেখা করবেন। সকলেরই এক কথা, সরকারই তো তাদেরকে ইলেকশনে টেনে এনেছেন। এখন তাদেরকে যদি ভোট করতে হয় তাহলে তো কারো জামানত থাকবে না। তাহলে তাদেরকে ইলেকশনে টেনে এনে আওয়ামী লীগ বেইজ্জত করছে কেন? 

কেন বেইজ্জত করছে এই প্রশ্নের কোনো সমাধান আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কী হবে সমশের মমিন, তৈমূর আলম, অন্তরা হুদা, মাইজভান্ডারি, মঞ্জু, দিলীপ বড়–য়া, মাহি চৌধুরী, শিরিন আক্তার এদের কপালে? সর্বশেষ খবর মোতাবেক, একদিকে মহাপ্রভু আওয়ামী লীগ এবং অন্যদিকে এসব ভূঁইফোড় নেতা এবং কর্মী। শুরু হয়েছে ইলেকশন বা সিলেকশনের নামে সার্কাস। মাঝখানে জাতীয় পার্টি। তারা নাকি ভয় দেখাচ্ছে যে, তারা যদি সকলে প্রত্যাহার করে তাহলে সেই নির্বাচন কেউ গ্রহণ করবে না। এই ত্রিমুখী খেলার ফলাফল কী হবে সেটি দেখার জন্য আরো কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। 

Email: asifarsalan15@gmail.com

https://www.dailysangram.info/post/542840